নিজস্ব সংবাদদাতা: দিল্লির কৃষক আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে ১লক্ষ টাকা পাঠালেন মেদিনীপুর শহরের এক দম্পতি। পেশায় একজন অধ্যাপক, অন্যজন চিকিৎসক। রবিবার কলকাতায় গিয়ে কৃষক আন্দোনের নেতৃত্বের হাতে সেই চেক তুলে দিয়ে আসলেন তাঁরা। অধ্যাপিকা রীনা পাল এবং চিকিৎসক বিমল গুড়িয়ার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে কৃষক নেতৃত্ব জানিয়েছেন, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে মেদিনীপুরের যে ভূমিকা তারই উত্তরাধিকার বহন করেছেন ওই দম্পতি।
১০লক্ষাধিক মানুষ পড়ে রয়েছেন রাস্তায় যার মধ্যে এক লক্ষাধিক কৃষক রমনী, প্রায় পঞ্চাশ হাজার নাবালক। দিল্লির নূন্যতম তাপমাত্রা নেমেছে ১ডিগ্রি সেলসিয়াস কিন্তু আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে গেছে দিল্লি এবং তার আশেপাশের এলাকায়। হাঁড়িকুড়ি নিয়ে রান্না হচ্ছে, ক্যাথিড্রাল নিয়ে চিকিৎসা! বাচ্চাদের জন্য খুলছে একের পর কোচিং ক্লাশ, ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প, চিকিৎসকরা আসছেন অসুস্থদের দেখতে, বিনা পয়সায় ওভার টাইম করছেন নার্সরা, আশে পাশের গাঁ উজাড় করে দিচ্ছেন দানা শস্য, সবজি। দিল্লির চার দুয়ার ঘিরে বসে রয়েছেন ভারতের অন্নদাতারা। দাবি একটাই, কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে হবে!
মেদিনীপুর রাজা নরেন্দ্র লাল খান মহিলা বিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা রীনা পাল জানাচ্ছেন, ‘ ১৯৪৭ য়ের পর এমন শান্তিপূর্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন ভারত তো দেখেই নি, বিশ্বের আর কোথাও হয়েছে কিনা জানা নেই।’
আধুনিক ইতিহাসের অধ্যাপিকা পাল জানিয়েছেন, ‘এটি একটি সর্বাত্মক গন আন্দোলন যেখানে ৫০০টি কৃষক গনসংগঠন এক ছাতার তলায় এসেছেন, লক্ষ লক্ষ মানুষ মাসের পর মাস কিংবা জয় না আসা অবধি রাস্তায় বসে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছেন আর তার সঙ্গে ধিরে ধিরে সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছেন প্রথমে দিল্লি ও তার আশেপাশের মানুষ। আমার মনে হচ্ছে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পাবেই এই আন্দোলন। ইতিহাসের একজন পড়ুয়া হিসাবেই আমি এই আন্দোলনের অঙ্গ হতে চেয়েছি। তাই আমরা আমদেদ সাধ্যমত কিছু অর্থ দিয়েছি যদি ওই মানুষগুলোর আন্দোলনকে সাহায্য করা যায়।”
আমরা অর্থে অধ্যাপিকা পাল এবং তাঁর জীবনসঙ্গী চিকিৎসক ডাঃ বিমল গুড়িয়া। সরকারের চিকিৎসা আধিকারিক হিসাবে কয়েকবছর হল অবসর নিয়েছেন ডাঃ গুড়িয়া। নিবিড় সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন গন আন্দলনের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখেন এবং চর্চা করেন। ডাঃ গুড়িয়া বলেন, ‘ প্রথমে যে চারটি এলাকায় ওঁরা অবস্থান করছেন তাঁর আশেপাশের গ্রামগুলি সহমর্মিতা নিয়ে এসেছিলেন। এরপর দিল্লি, নয়ডা, গৌতমবুদ্ধ নগরের নাগরিকরা সহমর্মিতা নিয়ে এসেছেন আর এখন তো মহারাষ্ট্র রাজস্থানের কৃষকরাও যাচ্ছেন। ধিরে ধিরে গোটা দেশ জুড়ে যাচ্ছে এই আন্দোলনে। তবে লজ্জার কথা এটাই যে এদেশের ‘স্বাধীন আর গণতান্ত্রিক’ মিডিয়া আশ্চর্য জনক ভাবে নীরব! ইতিমধ্যেই ৫২ জন আন্দোলনকারীর প্রান গিয়েছে। ‘নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারের’ দম্ভ চূর্ণ হয়েছে, ব্যর্থ হলেও আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্র সরকার। এখন আবার শুনতে পাচ্ছি দাবি না মানলে ২৬শে জানুয়ারি স্বধীনভারত রাজধানীর পথে নগ্ন পথ কৃষকের প্যারেড দেখবে! ভাবা যায়? বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে কৃষকদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পরামর্শ দিয়েছেন। অর্থাৎ দেশের পরিসরের বাইরেও আন্দোলনের অভিঘাত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই রকম এক ঐতিহাসিক আন্দলনে আমরা কিভাবে অংশ নিতে পারি এই নিয়ে আমরা দু’জন আলোচনা করেছি তারপরই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
রবিবার কলকাতায় গিয়ে মেদিনীপুরের ওই দম্পত্তি বর্ষীয়ান কৃষক নেতা হান্নান মোল্লার হাতে ১লক্ষ টাকার চেক তুলে দিয়েছেন। মোল্লা এই আন্দোলনের একজন অগ্রণী নেতৃত্ব। পরম উষ্ণতায় তিনি জানিয়েছেন, ‘ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে মেদিনীপুরের গৌরবময় ভূমিকা রয়েছে। সেই ঐতিহ্য বজায় রাখলেন এই অধ্যাপিকা এবং চিকিৎসক দম্পত্তি। আন্দোলনরত কৃষকদের পক্ষ থেকে তাঁদের উষ্ণ অভিনন্দন জানাচ্ছি। তাঁদের এই আন্তরিকতা প্রমান করল যে কৃষকদের ওই আন্দোলন শুধু দিল্লিতে সীমাবদ্ধ নেই, দেশের ধমনীতেও প্রবাহিত হচ্ছে তা।”