অশ্লেষা চৌধুরী: শীত আর নতুন বছরে ডুয়ার্স জুড়ে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছে। তারই মধ্যে ঘটে গেল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। নতুন বছরের একেবারে গোড়াতেই বাইসনের হামলায় ডুয়ার্সে প্রাণ হারালেন এক যুবক। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে, জয়ন্তীর কিছুটা আগে বালা সেতু সংলগ্ন এলাকায়। ঘটনা ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজাভাতখাওয়া, জয়ন্তী এলাকায়।
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত যুবকের নাম পঙ্কজ রায়। পুন্ডিবাড়ি থানার খোলটা এলাকার বাসিন্দা ওই যুবক ও তাঁর এক বন্ধু দু’টি মোটরবাইক নিয়ে জয়ন্তী যাচ্ছিলেন। জয়ন্তীর কিছুটা আগে বালা সেতু সংলগ্ন এলাকায় জঙ্গল থেকে হঠাৎ করে ওই যুবকের বাইকে বাইসন আক্রমন চালায়। বাইক থেকে পড়ে যাওয়ার পর, বাইসনটি পঙ্কজের ওপর হামলা চালায় বলে জানা গিয়েছে।
যুবকের বন্ধু তড়িঘড়ি এলাকার বাসিন্দাদের নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। গুরুতর জখম অবস্থায় যুবককে উদ্ধার করে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে, সেখানেই যুবকের মৃত্যু হয়। কালচিনি থানার পুলিশ জানিয়েছে, আলিপুরদুয়ার থানার পুলিশ মৃত যুবকের ময়নাতদন্ত করাবে।
বক্সা ব্যঘ্র প্রকল্পের উপক্ষেত্র অধিকর্তা উমর ইমাম বলেন, এদিন জখম অবস্থায় রাজাভাতখাওয়া চেকপোস্টে এক যুবককে আনা হয়েছিল। কিভাবে দু্র্ঘটনা ঘটল বনদপ্তর তদন্ত শুরু করেছে। ওই যুবকের পরিবার সরকারি ক্ষতিপূরণ পাবেন কিনা তা তদন্তের পরই বলা সম্ভব হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। দিনের আলোয় কিভাবে জঙ্গল থেকে বাইসন বের হয়ে যুবকের ওপর হামলা চালাল, বনকর্তারা তা ভেবে পাচ্ছেন না।
অন্যদিকে, ঘটনায় বনদপ্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ম উঠতে শুরু করেছে। ভরা পর্যটনের মরশুমে এমন ঘটনায় ওই এলাকায় আসা পর্যটকদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
উল্লেখ্য, গতবছরের শেষ মাসের মাঝামাঝিতে হাতির হামলায় মৃত্যু হয় নারী চা শ্রমিকের। সেদিন দুপুরে শ্রমিকাবাসে ফেরার পথে হাতির নজরে পড়ে যান তিনি। সেই সময় একটি বুনো হাতি এলাকার পাশেই একটি কলাগাছ ধরে টানাটানি করছিল। বৃদ্ধা ওই চা শ্রমিককে আসতে দেখেই হামলা চালায় সে। তাঁকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে মাটিতে আছড়ে মারে। অন্যান্য চা শ্রমিকেরা জানান, ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হরিমায়া। তারপর অনেক লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে জঙ্গলে পালিয়ে যায় হাতিটি। তাঁর আগে ১লা ডিসেম্বর এক দাঁতালের পায়ে পিষ্ট হয়ে বীরপাড়া রহিমপুর চা বাগানের এক অবসরপ্রাপ্ত চা শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় বন্য জন্তুর আক্রমণের ঘটনা ঘটেই থাকে, কিন্তু তা অবশ্যই দিনের আলো নেভার পর। কিন্তু এভাবে দিনের আলোয় বাইসনের আক্রমণে এভাবে তরতাজা এক যুবকের প্রাণ চলে যাওয়ায় ব্যাপক আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে এলাকাবাসীদের। সেই সাথে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কারণ আনলক পর্বে জনজীবন কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় পর্যটকদের ঢল নেমেছে ডুয়ার্সের জঙ্গল এলাকায়। এমতাবস্থায় যদি বন দপ্তর থেকে সঠিক পদক্ষেপ না নেয়, তবে অনেকেরই সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।