নিজস্ব সংবাদদাতা: ফেসবুকে আলাপ আর সেই আলাপ থেকে প্রেম কিন্তু সেই প্রেম সমাজের চোখে বৈধ নয়। আর সেই কারনেই মৃত্যুর মধ্যেই মুক্তির পথ খুঁজে নিয়েছিল দুই সদ্য আঠারোয় পা রাখা তরুণ তরুণী। হ্যাঁ, ২৪ ঘন্টার মধ্যেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশিয়াড়ী থানার শাঁকমারি গ্রামে উদ্ধার হওয়া ওই যুগলের আত্মহত্যার রহস্য উন্মোচন শেষে জানা গেল এরকমটাই।
বুধবার রাতেই পরিচয় উদ্ধার হয়েছে মৃতা অষ্টাদশী তরুণীর। বিবাহিতা ওই তরুণী শাঁখা-সিঁদুর ছাড়াই প্রেমিকের সঙ্গে ফাঁসির দড়িতে ঝুলে পড়েছিল তাই বুঝতে পারা যায়নি যে সে বিবাহিতা। উল্লেখ্য বুধবার সকালে শাঁকমারির কৃষক দুর্গা সিংয়ের বাড়ির দোতালার কোঠা থেকে উদ্ধার হয়েছিল দুর্গার একমাত্র ছেলে ১৮বছরের পিন্টু এবং ওই তরুণীর দেহ।
পুলিশ জানিয়েছে কেশিয়াড়ী থানার লাগোয়াই ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল থানার লাউদহ গ্রামের মামনি সিংয়ের বাপের বাড়ি। শ্বশুরবাড়িও সংলগ্ন এলাকায়। এই মামনির সঙ্গে ফেসবুকে আলাপ হয় পিন্টুর। পিন্টু দিল্লিতে কাজ করে। বিবাহিত জীবনে সুখী ছিলনা মামনি। অল্প বয়সেই বিয়ে হয়েছিল মামনির। ফেসবুকে আলাপ হওয়ার পর দুজনের মধ্যে মানসিক ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। স্বজাতি, সমবয়স্ক এবং পাশাপাশি থানায় বসবাস। ফলে ঘনিষ্ঠতা গাঢ় হয় এবং প্রেমে পরিণত হয়। সেই প্রেমের টানেই পিন্টু দিন ১৫ আগে দিল্লি থেকে ফিরে আসে বাড়িতে।
মা-বাবার একমাত্র ছেলে পিন্টু দিল্লি থেকে বাড়িতে আসার পর এদিক ওদিক ঘুরতে যেত এবং প্রায়ই দেরি করেই বাড়ি ফিরত সে। মাটির দোতলা বাড়িতে পিন্টু ওপরেই অর্থাৎ দোতালাতেই ঘুমাতো। পিন্টুর বাবা দুর্গা জানিয়েছেন, ‘ওর রাতের খাবার ঢাকা দেওয়াই থাকত। ও ওর মত আসত খাবার খেয়ে ওপরের ঘরে শুতে চলে যেত।’ বোঝা যাচ্ছে পিন্টু আসলে লাউদহ বা ওই অঞ্চলে যেত এবং মামনির সঙ্গে সময় কাটাত। মামনির বাপের বাড়ি এবং শ্বশুরবাড়ির লোকেরা জানিয়েছে, ‘২৮ তারিখ থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় মামনি। এরপর এদিক ওদিক খোঁজ করার পর বুধবার রাতে তাঁরা মামনির মৃত্যুর খবর পায়।
বুধবার নিজের বাড়ি থেকে ছেলে এবং তার প্রেমিকা মামনির মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার পর দুর্গা সিং জানিয়েছিল, ‘মঙ্গলবার রাতেও আমার ছেলে কখন এসেছে, কার সঙ্গে এসেছে কিছুই জানিনা। আজ সকালে ছেলে ঘুম থেকে উঠতে কেন দেরি করছে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি তার ঘরে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে দুজন।”
যদিও দুর্গার এই বক্তব্য পুরোটাই সত্যি নয় বলেই মনে হয়। কারন একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে মঙ্গলবার রাতে পিন্টু যখন মামনিকে নিয়ে বাড়ি আসে তখন দুর্গা এবং তার স্ত্রী জেগেই ছিল। তারা জানত। ছেলের কাছে তারা জানতে পারে যে মামনি বিবাহিত তখনই তারা সম্পর্কে আপত্তি জানায়। ছেলে এবং বাবা-মার সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছিল। এরপরই ছেলে মামনিকে নিয়ে ছাদে উঠে যায়। সেখানেই রাত কাটানো পর দুজনে একসাথে আত্মহত্যা করে।
যদিও দুর্গার বক্তব্য ছেলের যে কোনও মেয়ের প্রেম আছে এটা তারা জানতই না। ঘটনার পরই তারা মেয়েটির কথা জানতে পেরেছে কিন্তু মেয়েটি কোথাকার, কখন এসেছে সে সম্পর্কে তাঁদের কোনও ধারণা নেই। দুর্গা আরও জানিয়েছে, পিন্টু তাঁদের একমাত্র ছেলে তাই সে যদি ওই মেয়েকে বিয়ের কথা বলত তাহলে তাঁরা বাধা দিতেননা।
স্বভাবতই ঘটনার পরই প্রশ্ন উঠেছিল দুজনের মধ্যে কী এমন বাধা ছিল যে দু’জনকে আত্মহত্যা করতে হল? প্রশ্ন এও উঠেছিল যে পিন্টুর পরিবার কী সত্যি কথা বলছে? একটি মেয়ে যাকে কেউ চেনেইনা সেই মেয়েটি নিশ্চিতভাবে স্থানীয় নয় তাহলে সে এই বাড়িতে একা একা আসেনি নিশ্চিত যদি পিন্টু তাকে না নিয়ে আসে। যে ঘরে পিন্টু এবং ওই কিশোরীর মৃতদেহ পাওয়া গেছে সেই ঘরেই একটি বিছানা, কম্বল ইত্যাদি ব্যবহৃত অবস্থাতেই পাওয়া গেছে। পুলিশের ধারণা মেয়েটির আর ফেরার পথ ছিলনা, সমাজও তাদের এই সম্পর্ক মেনে নেবেনা জানার পরই ওই দুজন আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।