অশ্লেষা চৌধুরী: দলত্যাগী সাংসদ সুনীল মণ্ডলকে পার্টি অফিসে ঢুকতে বাধা, দেখানো হয় কালো পতাকা, গাড়ি আটকে বিক্ষোভ তৃণমূল কর্মীদের। এমনকি সাংসদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শোনা যায় তৃণমূল কর্মীদের। ঘটনা ঘিরে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ, ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ বাহিনী। ব্যাপক উত্তেজনা বিজেপির হেস্টিংস অফিস চত্বরে।
জানা গিয়েছে, আজ শনিবার শুভেন্দু সহ তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা ৪৩ জনকে সংবর্ধনা দেওয়ার কর্মসূচি রয়েছে গেরুয়া শিবিরের। আর আজই সকালে বিজেপির অফিস চত্বরের সামনেই পথসভার জন্য মঞ্চ বাধে তৃণমূল। সুনীল মণ্ডলের গাড়ি যাওয়ার সময় সেই মঞ্চ থেকে কালো পতাকা দেখানো হয়। রাস্তায় শুয়ে পড়ে সুনীল মণ্ডলের গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করা হয়। অভিযোগ, সেই সময় পুলিশও উপস্থিত ছিল ঘটনাস্থলে। পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, তখন বিজেপির কর্মী ও সুনীল মণ্ডলের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা কোনও মতে সাংসদকে উদ্ধার করে অফিসে নিয়ে যান।
বিজেপির অভিযোগ, তাদের অফিসে ঢোকার রাস্তার মুখ প্রায় আটকে দিয়ে পথসভার জন্য তৃণমূল এই মঞ্চ বেঁধেছে বলে অভিযোগ। একইসঙ্গে গোটা হেস্টিংস মোড় ছেয়ে গিয়েছে তৃণমূলের পতাকায়। এমনকি বিজেপি অফিসের একেবারে সামনে মাইকও বেঁধেছে তৃণমূল। আর সেখানে তারস্বরে মা-মাটি-মানুষের গান বাজছে। ওদিকে বিজেপি কর্মীরাও পাল্টা জমায়েত করেছে অফিসের সামনে। এমতাবস্থায় সুনীল বাবু বুজেপি অফিসে ঢুকতে গেলেই এই দুপক্ষের বাদানুবাদে তুমুল উত্তেজনাকর পরিস্থিতি শুরু হয়।
গোটা ঘটনার কড়া নিন্দা করেছেন বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং। অর্জুন বলেন, “পুলিশই এসব করাচ্ছে। মমতা ব্যানার্জি গণতান্ত্রিকভাবে মানুষকে থাকতে দেবে না। রাজনীতি করতে দেবে না।” বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন তথাগত রায়ও; তিনি বলেন, “তৃণমূল ভয় পেয়েছে। তাই এসব ভাঁড়ামো করছে। হাস্যকর। এভাবে ভোটে জেতা যায় না।” পাশাপাশি শাসকদলের উদ্দেশ্যে তোপ দেগেছেন বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার। তিনি বলেন, ‘তৃণমূলের ক্ষমতা দখল করে রয়েছে দক্ষিণ কলকাতার মুষ্টিমেয় কয়েকজন নেতা। তাঁরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না। মানুষের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না। পুলিশ আগে দলদাস ছিল। এখন তাদের একাংশ ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছে। আমাদের রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। শুধু কলকাতা নয়, গোটা রাজ্যেই পুলিশ আর গুণ্ডা দিয়ে ক্ষমতা হাতে রাখতে চাইছে তৃণমূল। লোভ আর ক্ষোভই এখন তৃণমূলের পরিচয়। আমাদের সর্বভারতীয় নেতা জে পি নাড্ডার কনভয়ে যেভাবে পাথর মারা হয়েছিল, অভাবনীয়। তবে, এভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গণতন্ত্রের যে শ্বাসরোধ করতে চাইছে, তা করা যায় না।’ তবে এই ব্যাপারে সাংসদ সুনীল মন্ডলের কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
তবে তৃণমূলের পক্ষ থেকে সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, ‘ঘটনাটি প্রত্যক্ষভাবে জানি না। তবে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। একটা লোক তৃণমূলের টিকিটে দুবার জিতে পার্টি ছেড়ে দিচ্ছে, এটা লোকে মেনে নিতে পারছে না। দলত্যাগ বিরোধী আইন ভঙ্গ করেছে সুনীল মণ্ডল। পার্টি ওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’
ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখনও উত্তেজনা রয়েছে গোটা এলাকায়। পুলিশবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছেন।