নিজস্ব সংবাদদাতা: বৃহস্পতিবার বেলা ১০টা অবধি কুয়াশা ঘাঁটল দুই শহরই। হালকা ঝঞ্ঝায় গত তিনদিনে পারদ চড়েছে ৩ডিগ্রি ওপরে কিন্তু কনকনে ঠান্ডায় ২৪শে ডিসেম্বরও কাঁপছে খড়গপুর, মেদিনীপুর। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা অবধি গা সওয়া ঠান্ডা হলেও সূর্যের তেজ কমতে থাকায় বেলা ২টা থেকেই ফের ফিরছে সেই হাড় কাঁপানো ঠান্ডা। কিন্তু আজ অন্য কথা, আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পরেই মধ্য রাতে ঘন্টাধ্বনি বেজে উঠবে দুই শহরের গির্জায় গির্জায়। এখন দুই শহর জুড়ে তারই কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গেছে রেলনগরী খড়গপুর আর জেলা সদর মেদিনীপুরে। মহার্ঘ্য সব স্থাপত্য নিয়ে যেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে ব্রিটিশ আমলের হাফ গোটা আটেক চার্চ অথবা গির্জা।
গির্জা বা চার্চের কাউন্ট ডাউনের কথা পরে এখন বরং গত তিনদিনের পারদের ওঠা নামা বুঝে নেওয়া যাক। ২০ ডিসেম্বর দুই শহরের তাপমান এ মরশুমের এখনও অবধি সর্বনিম্ন ছিল ৬.৬১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরের দিন সোমবার সামান্য ওপরে উঠে সর্বনিম্ন ৬.৭৭ ডিগ্রিতে পারদ পতন থেমে গেছে। মঙ্গলবার ২২তারিখ এক লাফে পারদ চড়েছে সর্বনিম্ন ৭.৬২ অর্থাৎ রবিবারের তুলনায় প্রায় ১ডিগ্রি বেশি। বুধবার আরও প্রায় দেড় ডিগ্রি ওপরে উঠে পারদ থেমে গেছে ৮.০২ ডিগ্রিতে। আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবারের তাপমানের হিসাব এখনো পর্যন্ত এসে পৌঁছায়নি বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া উদ্যান থেকে তবে অন্যান্য সূত্র থেকে অনুমান করা যাচ্ছে ১০ডিগ্রির কাছাকাছি কিংবা ১১ঘর ছুঁয়ে যাবে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
অর্থাৎ পারদ চড়ছে ওপর দিকে। প্রশ্ন হচ্ছে পারদ ওপরের দিকে উঠলেও ঠান্ডা বোধের খুব বেশি তারতম্য হচ্ছেনা কেন? আবহাওয়াবিদরা বলছেন, কারন নিচের দিক থেকে তাপমাত্রা সামান্য ওপরের দিকে উঠছে বটে কিন্তু দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা খুব একটা বাড়ছেনা। যার ফলে দিনের গড় তাপমাত্রা প্রায় একই থেকে যাচ্ছে। আর সে কারনে ঠান্ডা থেকেই যাচ্ছে। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮ডিগ্রির ওপরে না উঠলে কিংবা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ না ছুঁলে এই ঠান্ডা বোধ থেকেই যাবে।
এই কনকনে ঠান্ডার মধ্যেই দুই শহরে বড়দিন উদযাপনের উদ্যোগ চলছে যা আজ রাত ১২টার ঘন্টাধ্বনি দিয়েই শুরু হবে। করোনা সংক্রমনের আশঙ্কা ফিকে করে দিয়েই নিজ নিজ চার্চকে সাজাতে এখন ব্যস্ত বিশপ, যাজক, ভক্তরা।
খড়গপুর আর মেদিনীপুরের সেক্রেড হার্ট, ইউনিয়ন চার্চ, খড়গপুরের প্রাচীন গির্জা অথবা নির্মল হৃদয় আশ্রম, ব্যপ্টিস্ট চার্চে এখন সাজো সাজো রব। টমাস, অ্যান্থনি, রবার্ট, রেডেনরা আজ মেদিনীপুরের সিপাইবাজার, কুইকোটা অথবা ঝাপেটাপুর, ঝুলি, ছোট ট্যাংরায়। অতীত চারিতা ভুলে আজ তারা হয় অ্যাংলো ইন্ডিয়ান অথবা দেশীয় ক্রিশ্চিয়ান। আজ সবাই ভারতীয়। শুধু দুই শহরের অতীত জাগিয়ে জেগে থাকে চার্চ অথবা গির্জা। আর বড়দিন এখন শুধুই ক্রিশ্চানদের নয়, উৎসবের মেজাজে তাই দুই শহর জুড়ে চ্যাটার্জি ব্যানার্জী রায় সেন মজুমদারাদি সব্বাই।
দুই শহর জুড়ে মঙ্গলবার রাত জাগছে আমজনতা। মেদিনীপুরের চার্চস্কুলের প্রাঙ্গন কিংবা খড়গপুরের বড় গীর্জা কিংবা সেক্রেড হার্টের রাস্তায় রাত ১০টা থেকেই শুরু হয়ে যাবে তুমুল ভিড়। করোনার জন্য মেদিনীপুর চার্চের মেলা হবেনা দোকানপাট বসবেনা খড়গপুরের সেক্রেডহার্টে। তবুও কুছ পরোয়া নেই। বড়দিনের হৈহুল্লোড়ে মেতে ওঠার প্রস্তুতিতে তরুন তরুনী থেকে কচিকাঁচার দল। বাড়িতে বাড়িতে ঢাউস ঢাউস কেক, প্রতিবেশীর সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার জন্য।
গির্জাগুলির ভেতরে যখন ধর্মভীরু ক্রিশ্চানরা বিশেষ প্রার্থনায় রত থাকবেন তখন বাইরে তাঁদেরই ভিন ধর্মের প্রতিবেশিরা ভিড় জমাবেন রাত ১২টার অপেক্ষায়। এমনই সময় জন্মেছিলেন বেথলেহেমের সবার প্রিয় শিশুটি।
প্রতিটি গির্জায় তাই আস্তাবলের ধাঁচে খড় ঘাস দিয়ে বানানো হয়েছে পর্ণ কুটির। রয়েছে কুমারী মেরী আর ছোট যীশুর প্রতিমূর্তি। রয়েছে মেষ শাবকের দল। প্রার্থনার সময় সেখানেই অপেক্ষায় জনতা। কোথাও কোথও অতি উৎসাহীর দল সলতে পাকিয়ে বোম আর পটকা নিয়ে হাজির। মধ্যরাতের ঘন্টাধ্বনির সাথে সাথে শুরু হবে অকাল দিওয়ালি। সব মিলিয়ে ১০ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও টগবগ করে ফুটে ওঠার অপেক্ষায় খড়গপুর মেদিনীপুর।