নিজস্ব সংবাদদাতা: রবিবার রাত থেকে যে কাঁপুনি শুরু হয়েছে তা এখনও থামেনি। হাড়ের ঠকঠকানি বুঝিয়ে দিচ্ছে স্লগওভার ছাড়িয়ে ফুল লেংথেও ছক্কা কষাচ্ছে শীত। কাঁসাই উপত্যকা জুড়ে এখন শুধুই শীতযাপন মানুষের, সে বাঁকুড়া বা ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর বা খড়গপুর যাই হোকনা কেন! আপাতত ৬ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট ছুঁয়ে আছে পারদ। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া উদ্যান জানিয়েছে রবিবার মেদিনীপুর খড়গপুরের তাপমাত্রা ৬.৬১ ডিগ্রি ছিল এবং সোমবার ভোর চারটে নাগাদ সেই তাপমান ৬.৭৭ ডিগ্রি। আর ঝাড়গ্রাম ছুঁয়ে আছে পাক্কা ৬ডিগ্রির গায়ে, বাছুরডোবা থেকে ঘোড়াধরা পেরিয়ে পুরানো ঝাড়গ্রাম জুবুথুবু ঠান্ডায়।
ঠান্ডা জমজমাট তাই দীর্ঘ চায়ের লাইন বোগদা, ইন্দা, গোলবাজার, মালঞ্চে। রাত ১০টা পেরিয়েও চায়ের দোকান ছাড়তে চায়না খরিদ্দার। বোগদার দু’তিনেট চায়ের দোকান রাত ১১টা অবধি ভিড়ে ঠাসা। লোকাল ট্রেনের শেষ যাত্রীও ফুটব্রিজ থেকে নেমে সোজা চায়ের দোকানে। সাউথ ইনস্টিটিউটের সামনে রাত ১০টাতে টমাসের চায়ের গ্লাসে হাত সেঁকছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দেহরক্ষীরা। হিমশীতলতা ভর করেছে গ্রামীন খড়গপুর, পিংলা, ডেবরা, সবংয়ে। বাইপাশের ধারে ইংলিশ থেকে চুল্লু, লম্বা চুমুক।
ওদিকে কনকনে ঠান্ডায় কাঁপছে মেদিনীপুরও। রাত ৯টাতেই টপাটপ দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করে বাড়ি মুখো ধর্মা, কুইকোটা, আবাস, কেরানীচটি। বড়বাজার, গোলকুয়াচক, বটতলা আর এলআইসি, কেরানিতলার মেয়াদ বড়জোর রাত ১০টা। শুধু সাড়ে ১০টা অবধি কোনোমতে জেগে থাকে স্টেশনের কয়েকটা চায়ের দোকান। ট্রেনলাইন পেরিয়ে রাঙামাটি কিংবা তাঁতিগেড়িয়া হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর নিঝুম অন্ধকারে মিশে গেছে গোপগড় আর খয়েরুল্লাচকের সাথে।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে কার্যত শৈত্যপ্রবাহ চলছে পূর্ব বর্ধমান, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ জেলায়। মঙ্গলবারও সতর্কতা রয়েছে পুরুলিয়া, বীরভূম, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের জন্য। তবে বুধবার থেকে আপাতত কোনও সতর্কবার্তা নেই। অর্থাৎ, কিছুটা হলেও তাপমাত্রা বাড়বে। তবে শীতের আমেজ থাকবে ভালোই।
সোমবার কনকনে ঠান্ডায় কেঁপেছে নয়াদিল্লি। পারদ নেমেছে ৩.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। কিন্তু বাংলাই বাকম কিসে? পানাগড়ের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পৌঁছেছে ৫.০ ডিগ্রিতে, পুরুলিয়াতেও ৫ ছুঁয়ে গেছে। জমজমাট ঠান্ডা কলকাতাতেও। মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘তাপমাত্রা যে ভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে কমেছে, এ বার আর তা হবে না। ওঠা-নামা হবে। আপাতত কোনও শক্তিশালী পশ্চিমি ঝঞ্ঝা ঢুকছে না। ফলে মেঘলা হয়ে ঠান্ডা কমে যাবে, এমন আশঙ্কা নেই।’
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস রয়েছে বড়দিন অর্থাৎ ২৫শে ডিসেম্বর কিছুটা হলেও কমবে তাপমাত্রা কিন্তু হালফিলের গতিতে কতটা কমে সেটাই এখন দেখার। হওয়া অফিসের বক্তব্য বর্তমান অবস্থা বজায় থাকলে ১০ থেকে ১৩ডিগ্রির মধ্যেই থেকে যেতে পারে হ্যাপি ক্রিসমাসের আমেজ। সেক্ষেত্রে গতবছরের চেয়েও হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় বড়দিন উদযাপন করবে কাঁসাই উপত্যকা।