অভিনন্দন রানা : করোনা পরবর্তী সময়ে গোটা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি ধাক্কা খেয়েছে। মার্চ মাসের শুরু থেকেই স্কুল কলেজের দরজা বন্ধ। তবে কিছু জায়গায় অনলাইন ক্লাস শুরু হলেও সমাজের সব স্তরের মানুষের পক্ষে তার সুবিধা নেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। কারন আর যাই হোক এই বাংলায় সমস্ত মানুষের পক্ষে স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ এবং সঙ্গে ডেটা কানেকশন নেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। তাই এখন এই পরিস্থিতিতে বাংলার কলেজ ও স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের স্মার্টফোন দেওয়ার ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। আজ নবান্ন থেকেই এই ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
যদিও এখুনি এ বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা কী তা জানা যায়নি তবে প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে কলেজ স্তরে ল্যাপটপ, উচ্চমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ট্যাব এবং এইট অবধি স্মার্টফোন দেওয়া হতে পারে। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করছেন আধিকারিকরা। তারপরই টেন্ডার করে উপযুক্ত কোম্পানি গুলিকে বরাদ্দ দেবে সরকার। প্রায় সাড়ে ৯লক্ষ পড়ুয়ার হাতে এই সুবিধা তুলে দেওয়া হবে।
তবে ছাত্রছাত্রীদের ট্যাব বা ল্যাপটপ দেওয়া এই দেশে প্রথম নয়। এর আগে রামন সিং এর ছত্তিশগড় সরকার বা জয়ললিতার তামিলনাড়ু সরকার ছাত্রছাত্রীদের ট্যাব বিতরণ করেছিল। ফলে ছাত্রছাত্রীদের কাছে ইন্টারনেটের বিশাল দুনিয়ায় প্রবেশ করা সহজ হয়েছিল।তবে এখন পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। কারন এই মুহূর্তে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ বা ট্যাব ছাড়া অনলাইন ক্লাস বা পরীক্ষা কোনোটাই দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। এই অবস্থায় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী স্মার্ট ফোন না থাকায় পরীক্ষা দিতেই পারেননি। পরে অবশ্য ছাত্র আন্দোলনের চাপে তাকে পুনরায় পরীক্ষায় বসতে দিতে বাধ্য হয় বিশ্ববিদ্যালয়।
এমনও দেখা গেছে স্টেশনের ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে পরীক্ষা দিচ্ছেন এনাম যুবক।চলমান বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাতেও সাইবার ক্যাফেগুলোতে ছাত্র ছাত্রীদের ভিড় দেখার মতো। ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের এই সিদ্ধান্ত বিশাল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীদের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে।
অনেকে অবশ্য অন্য কথাও বলছেন। গত লোকসভা নির্বাচনে সদ্য ভোটার হওয়া যুব সমাজ তো বটেই শিক্ষিত যুবকরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে মুখ ফিরিয়েছিল। নিয়োগ না হওয়া এবং নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে শিক্ষিত যুব সমাজ কার্যত তৃণমূলের ওপর খাপ্পা। তার সাথে এই মুহূর্তে হবু শিক্ষকদের আন্দোলন এবং তার ওপর সরকারের অমানবিক আচরণ। বছরের পর বছর প্যানেল হয়ে পড়ে থাকা চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন এতে আবার ঘি ঢেলেছে। এই অবস্থায় ভোটের আগে মমতার এই ঘোষণা কার্যত স্কুল পর করা কলেজে ওঠা সদ্য ভোটার হওয়া ভোটারদের মন জিততেই করা এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তবে এই ঘোষণায় কতটা কাজ হবে সেটা সময়ই বলবে। আর ঘটনা যাইহোক না কেন এর ফলে লক্ষ লক্ষ পড়ুয়া অন-লাইনে পাঠের সুবিধা ভোগ করবেন তাতে সন্দেহ কী?