নিজস্ব সংবাদদাতা: স্বাধীনতা সংগ্রামীরা যা করতে পারেননি, পারেননি নকশাল আমলের বন্দীরা তাই করে দেখালো খুনের ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ২ বন্দী! ১৫দিনের নিখুঁত পরিকল্পনায় স্রেফ বাঁশ আর গাছের ডাল, গামছা ছেঁড়া আর লোহার আঁকশি ব্যবহার করে ২০ ফুটের প্রাচীর টপকে পগারপার হয়ে গেছিল মিঠুন দাস আর মনোজিৎ বিশ্বাস। সদ্য তিরিশ পেরোনো মনোজিৎ আর মধ্য তিরিশের মিঠুনের এই অদ্ভুত পরিকল্পনায় ঘোল খেয়ে ইতিমধ্যে সাসপেন্ড হয়েছেন মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেল তথা কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের তিন আধিকারিক সহ ছ’জন আর জেল কর্তৃপক্ষকে ভাবতে বাধ্য করেছে নয়াজামানায় আদ্যিকালের প্রহরা ব্যবস্থায় ব্যাপক রদবদল প্রয়োজন।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ এই পালানোর ঘটনার প্রায় ২৪ঘন্টার মধ্যেই উত্তর ২৪পরগনার বিজপুর থানা এলাকা থেকে মনোজিৎকে গ্রেপ্তার করে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ। পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা জানিয়েছেন, ‘পুলিশের কাছে খবর ছিল বাড়ি ঢোকার আগে একটি গোপন জায়গায় অবস্থান করছে মনোজিৎ। এরপরই রেইড করে ধরা হয় তাকে। আমাদের কাছে সে জানিয়েছে একটি ঘটনায় প্যারোলের আবেদন করেছিল সে কিন্তু আবেদন গ্রাহ্য না হওয়ায় সে পালানোর পরিকল্পনা করে।”
এমনটাই মেদিনীপুর পুলিশকেও জানিয়েছে মনোজিৎ। বলেছে বাবার মৃত্যুর ঘটনায় প্যারোল না পেয়েই সে মিঠুনকে নিয়ে এই পরিকল্পনা করেছিল। এর জন্য গত ১৫দিন ধরে পরিকল্পনা করেছিল তারা। পালানোর সমস্ত উপাদান সংগ্রহ করেছিল জেল থেকেই। গাছের একটি ডাল জোগাড় করেছিল যা জুড়ে ১৮ফুট দাঁড়ায়। তার মাথায় প্রায় ২ফুট ব্যাসের একটি লোহার পাতের আঁকশি বাঁধা হয় যাতে সহজেই সেটি বসে যেতে পারে জেলের প্রাচীরের মাথার চওড়া ও গোলাকার অংশে। এরপর কিছুটা অন্তর একটি করে গাছের ডাল বাঁধা হয় সিঁড়ির মত করে।
এই সমস্ত কিছু বাঁধাবাঁধিতে ব্যবহার করা হয় গামছা দিয়ে। কয়েকটি গামছা জোগাড় করে তা লম্বালম্বি ছিঁড়ে দড়ির মত পাকোনো হয়েছিল। লোহার আঁকশিটিও মুড়ে দেওয়া হয় পাকানো গামছা দিয়ে যাতে ইটের প্রাচীরে ওই আঁকশি পড়ার সময় শব্দ না হয় আর চেপে বসে থাকে। শুধু লোহা হলে নড়াচড়া করে শব্দ হতে পারত। জানা গেছে বীজপুর এলাকার দুটি পৃথক জায়গার বাসিন্দা ওই পলাতক ২বন্দী প্রথমে শিয়ালদহ হয়ে বীজপুরে ঢুকেছিল। তারপর দুজনে দু’জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ মিঠুনের খোঁজ করছে। এরা ২জনেই গত মে মাসে মেদিনীপুর জেলে বদলি হয় দমদম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে। তার আগে বারাসত জেলে ছিল এরা। পালানোর জন্য এরা সন্ধ্যার সময়টাকে বেছে নেয় যাতে শীতের গাঢ় অন্ধকারে মিশে যাওয়া যায়।
এদিকে এই ঘটনায় জেলের মধ্যে একাধিক বেনিয়ম নজরে পড়েছে। ঘটনার পর ডিআইজি কারা নিজে জেল পরিদর্শনে যান। ব্যাপক তল্লাশিতে ৪৫টি মোবাইল ফোন উদ্ধার হয় যার প্রতিটি বেআইনি ভাবে ব্যবহার হত। সেগুলি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলেই জানা গেছে। জানা গেছে এর আগে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা এবং স্বাধীনতার সময় নকশালরা জেল থেকে পালানোর চেষ্টা করে। নকশালরা সুড়ঙ্গ কেটে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন সাতের দশকে কিন্তু ব্যর্থ হন। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যূ হয় কয়েকজন নকশাল বন্দীর।