অভিনন্দন রানা : দেশে করোনা পরিস্থিতি শুরুর প্রথম থেকেই সমস্ত রকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। লকডাউন এবং আনলক ঘোষণার পর অনেক পরিষেবা শুরু বন্ধ হলেও স্কুল কলেজ সহ কোনোরকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরজা এখনও খোলেনি রাজ্যে। কয়েকটি রাজ্য স্কুল খোলার পর পরই সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানেও স্কুল বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার। তবে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলতে চলেছে আইআইটি খড়গপুর। তবে সমস্ত ছাত্র ছাত্রীদের জন্য নয়, শুধু মাত্র বাছাই করা কিছু বরিষ্ঠ গবেষক পড়ুয়া বা সিনিয়র রিসার্চ স্কলারদের জন্যই দরজা খুলতে চলেছে। কিন্তু কাজে ফেরা এই গবেষক পড়ুয়াদের একটি মুচলেকায় স্বাক্ষর করতে হচ্ছে যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জানা গেছে প্রথম পর্যায়ে ২০১১-১৩ ব্যাচের ৫০জন গবেষক পড়ুয়াকে ফিরতে বলা হয়েছে প্রতিষ্ঠানে। পয়লা ডিসেম্বর থেকে ৫ই ডিসেম্বরের মধ্যে এরা ফিরবেন ক্যাম্পাসে কিন্ত কাজে যুক্ত হওয়ার আগে এঁদের মুচলেকা দিতে হবে যে, পর্যাপ্ত চিকিৎসা পরিষেবা অথবা আপৎকালীন চিকিৎসা পরিষেবা না পেলে IIT-KHARAGPUR কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেনা। উল্লেখ্য প্রায় ৪হাজার গবেষক পড়ুয়া রয়েছেন এখানে যাঁদের কে করোনা পরিস্থিতির সময় ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়।
আনলক পর্যায়ে দফায় দফায় পাঠক্রমে যুক্ত করা হচ্ছে এঁদের। ইতিমধ্যে তিন দফায় ৫০জনকে ক্যাম্পাসে ফিরতে বলা হয়েছে যার প্রথম ব্যাচটি ফিরছেন ৫তারিখের মধ্যে। সবার ক্ষেত্রেই এই মুচলেকা দিতে হচ্ছে যে, কোনো আপৎকালীন অবস্থায় যদি কারোর চিকিৎসার প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে চিকিৎসার বন্দোবস্ত না হলে কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেন না। মুচলেকার এই অংশটি নিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের দাবি, এই কাগজে সই করিয়ে কার্যত সংক্রমণ বা তার চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে থেকে হাত ধুয়ে নিতে চাইছে কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়ালেও একাধিক পড়ুয়ার বক্তব্য, এই মুহূর্তে তাঁদের জন্য গবেষণা সম্পুর্ন হওয়াটাই সবচেয়ে বড় মাথা ব্যাথার কারন। এইসব বিষয়ে যত দেরী হবে ততই কঠিন হয়ে পড়বে গবেষণা সম্পুর্ন করা। তাই সংক্রমনের আশঙ্কা নিয়েও তাঁরা কাজে যোগদান করতে চান। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি আধিকারিকরা। তবে নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক জানিয়েছেন, ” দেখুন বিষয়টি নতুন কিছু নয়, করোনা সংক্রমনের চূড়ান্ত পর্যায়ে আমরা লক্ষ্য করেছি খড়গপুর শহরের মহকুমা হাসপাতাল বা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ দুই হাসপাতালেই করোনা ও অন্যান্য রোগীদের সংখ্যা নিয়ে কার্যত নাজেহাল হয়েছেন। অন্যদিকে রেলের হাসপাতালেও একই অবস্থা। আইআইটির নিজস্ব বিসি রায় হাসপাতালেও এখনো সেভাবে পরিষেবা শুরু করা যায়নি। শুধুমাত্র প্রাথমিক চিকিৎসা চলছে সেখানে। ফলে প্রায় ১০০ কিমি দূরে কলকাতার ওপর ভরসা করা ছাড়া উপায় নেই। এই অবস্থায় ঝুঁকি থেকেই যায়।”
তিনি বলেন, “এমনটা নয় আমরা দায়িত্ব এড়াতে চাইছি বরং আমরা পরিস্থিতিটা জানিয়ে রাখছি। যেখানে চূড়ান্ত ও সঙ্কটকালীন চিকিৎসায় কলকাতাই আমাদের ভরসা সেখানে আপৎকালীন অবস্থায় ঝুঁকি থেকেই যায় এটা শুধু পড়ুয়া বলে নয় আমাদের সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কোভিড পরিস্থিতির মাঝেই প্রতিষ্ঠান খুলতে গেলে এই ঝুঁকি নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।”
উল্লেখ্য প্রথম দিকে IIT ক্যাম্পাসে করোনা প্রতিহত হলেও আগষ্ট মাস থেকে করোনার প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। অক্টোবর মাসে এই সংক্রমন বেশ বড়সড় থাবা বসায়। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে এবং বাইরে IIT র সঙ্গে বিভিন্ন ভাবে সংযুক্ত ২০০জনেরও বেশি করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। এখনও ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও নির্গমনের ওপর বেশ কিছু শর্ত আরোপিত রয়েছে। ক্যাম্পাসে চারটি প্রবেশ দ্বারের তিনটি এখনও পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
এক IIT আধিকারিকের কথায়, ‘এই পরিস্থিতিতে পঠন পাঠন শুরু করাটাই ঝুঁকি পূর্ন কিন্তু তবুও আমরা এই চ্যালেঞ্জটা নিচ্ছি কারন কাউকে একটা শুরু করতে হবে। তাই চূড়ান্ত কোভিড প্রটোকল ও সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। পড়ুয়ারা আসার পর নিয়ম মাফিক ১৪দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন তাঁরা তারপর কোভিড ১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়েই তারা আ্যকাডেমিক ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবেন। যদি কোনও কর্মচারী ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলেন তাঁকেও এই পদ্ধতিতে কাজে যোগ দিতে হবে।”