অশ্লেষা চৌধুরী: সকাল থেকেই ভাঙনের খবর দিয়ে শুরু হয়েছে তৃণমূলের দিনলিপি। সমস্ত সরকারি পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। এবার তাঁর দিল্লি যাওয়ার কথা কিন্তু তার আগেই নিশীথের হাত ধরে দিল্লী উড়ে গেলেন তৃনমূল বিধায়ক মিহির। সূত্রের খবর, আজ দিল্লীতে বিজেপির সদর দফতরে জেপি নাড্ডা ও কৈলাস বিজয়বরগীয়ার হাত থেকেই দলীয় পতাকা গ্রহণ করে পাকাপাকি ভাবে পদ্ম শিবিরের যোগ দেবেন কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক।
দল যে ছাড়ছেন এমন ঘোষনা ছিলই। কিছুদিন থেকে রাজনৈতিক আঙিনায় মিহির গোস্বামীকে নিয়ে জল্পনা ছিল তুঙ্গে। বেশ কিছুদিন ধরেই ক্ষোভ ও বিদ্রোহের সুর শোনা যাচ্ছিল মিহির বাবুর গলায়। কোচবিহার জেলায় তৃণমূল দলের নতুন জেলা ও ব্লক কমিটির তালিকা প্রকাশের পরই কোচবিহার দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামী দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।
সে সময় দলের বিভিন্ন সাংগঠনিক পদ থেকে গত ৩রা অক্টোবর অব্যাহতি নেন তিনি। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী চাইলে বিধায়কের পদও তিনি ছেড়ে দিতে পারেন পারেন বলেও জানিয়েছিলেন মিহির বাবু। এরপর থেকে দলের কোনও কর্মসূচিতে দেখা যায়নি বিধায়ককে। এমনকি, কার্যালয়ের সামনে নতুন ব্যানারে লেখা হয়, কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক মিহির গোস্বামীর কার্যালয়। ধর্মসভার সেই কার্যালয়ের ভেতরে থাকা মুখ্যমন্ত্রী ছবি সরিয়ে সেখানে স্বামী বিবেকানন্দ, নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো মনীষীদের ছবি লাগানো হয়।
শুধু এখানেই শেষ নয়, একাধিক ইস্যুতে কখনও দলের বিরুদ্ধে আবার কখনও ঠিকাদারে নাম নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরাসরি তোপ দেগেছেন মিহির বাবু। ফেসবুকে মিহির গোস্বামী লেখেন, ‘দিদির দলে কোনও ঠিকাদার থিংক–ট্যাংক কোম্পানি ঢুকে পড়ে তছনছ করে দিচ্ছে ঘরবাড়ি, অপমানিত জনপ্রতিনিধিরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। অথচ দিদি অন্তরালে নির্বিকার, তাহলে সেই ঘর-বাড়ীর মতই দিদির প্রতি এতদিনের সব আস্থা ভেঙে চুরমার হয়ে যাওয়াটাই কি স্বাভাবিক নয়?’ ক্রমশই দল বদল নিয়ে উঠছিল চাপা গুঞ্জন। চারিদিকে চলছিল জল্পনা। সেই জল্পনার আগুনে ঘি পড়ে, যখন কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামানিক তৃণমূলের বিধায়ক মিহির গোস্বামীর সাথে দেখা করতে তাঁর বাড়ীতে আসেন। যদিও একে বিজয়া সম্মেলনীর জন্য সৌজন্যতা মুলক সাক্ষাৎকার বলেই দাবী করেন উভয়ে। এর সাথে রাজনৈতিক কোন যোগ নেই বলেই স্পষ্ট জানান তারা।
এরপর গত সোমবার বিকেলেই ফের সোশ্যাল মিডিয়ায় দলের রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামী। পরদিন তাই সকাল হতেই বিধায়ক মিহির গোস্বামীর বাড়ীতে ছুটলেন তৃনমূল কংগ্রেসের রাজ্য সহ সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। ক্ষুদ্ধ বিধায়ককে দলমুখী করতে ১৮ বছরের অভিমান ভুলে মুখোমুখি হন মিহির-রবি এদিন দুজনের মধ্যে রুদ্ধদ্বার আলোচনা হয়।
কিন্তু তার পরেও বরফ গলল না। দলের প্রতি আগের মনোভাবই বজায় রাখলেন মিহির। অবশেষে কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের এই বিক্ষুব্ধ বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেস ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। গতকাল কোচবিহার শহরে তাঁর বাড়ীতে এক সাংবাদিক বৈঠকে এ কথা জানালেন বিধায়ক। তিনি বলেন “মানুষের সাথে যদি থাকতে চাই তাহলে গণতান্ত্রিকভাবে কোন গণতান্ত্রিক দলের সাথেই থাকতে হয়। সে রকম চিন্তাভাবনা করছি। খুব শীঘ্রই তা জানাবো। আর তারপরই নিশীথের হাত ধরে দিল্লী উড়ে গেলেন মিহির। এখন অপেক্ষা শুধুমাত্র গেরুয়া শিবিরের পতাকা হাতে তুলে নেওয়ার!