নিজস্ব সংবাদদাতা: ‘বাংলার জননেত্রী ভারতী ঘোষ জিন্দাবাদ, মা মাটি মানুষ জিন্দাবাদ, তৃনমূল কংগ্রেস…’ বলেই সামলে নিল জিহ্ব। বোঝা গেল বহুদিনের পুরানো অভ্যাস এখনও কাটেনি। জুখিয়া বাজার পেরিয়ে মাধখালি ঢোকার ঠিক মুখেই একতারপুরে হেঁড়িয়া-ইটাবেড়িয়া রাজ্য সড়কের ওপর আড়াআড়ি ফেলে রাখা লম্বা গাছের মোটা লগ সরানোর চেষ্টা করছিলেন মানুষ গুলো। সেই সময় এসে হেঁড়িয়ার দিক থেকেই পৌঁছেছিল ভারতী ঘোষের কনভয়। সেই কনভয়কে দেখেই সমস্বরে আওয়াজটা উঠল। যার মধ্যেই একজন বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতিকে স্বাগত জানাতে গিয়েই জনতার কেউ কেউ বলে ফেললেন, মা মাটি মানুষ জিন্দাবাদ, তৃনমূল কংগ্রেস জিন্দাবাদ!
আসলে জনতাকে খুব একটা দোষ দেওয়াও যায়না। একই দিনে দুটি রাজনৈতিক দলের দুটি সভা! মাধাখালিতে দলীয় কর্মী খুনের প্রতিবাদে বিজেপির ডাকা সভা ছিলই তারই মধ্যে মাত্র ৩ কিলোমিটার দুরে জুখিয়াতে কেন্দ্রের নীতির বিরুদ্ধে তৃণমূল ধিক্কার সভার আয়োজন করেছে। রবিবার প্রায় একই সময়ে দুই সভা! জুখিয়া বাজারের সভার জন্য যে মানুষগুলো আসছিলেন তারাই একতারপুরে এসে দেখলেন গাছের গুঁড়ি ফেলে রাখা হয়েছে। কেন গাছের গুঁড়ি ফেলে রাখা হবে? এদিকে মাধাখালিতেও খবর চলে এসেছে ভারতী ঘোষকে আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে জুখিয়া, একতারপুর এবং আরও একটি জায়গায়। মাধাখালি থেকে কয়েকজন রওনা দিলেন। একতারপুরে গাছের গুঁড়িতে বাধা পেয়েছে দু’পক্ষই। মাধাখালি থেকে আসা বিজেপি সদস্যরা বিচার দিলেন ইটাবেড়িয়া থেকে আসা তৃণমূলের দলটিকেই। তৃণমূলের সভার উদ্দেশ্যে যাওয়া মানুষগুলি স্বীকার করে নিলেন ব্যাপারটা অন্যায়, গর্হিত। এরপর তৃনমূল আর বিজেপি সমর্থকরা মিলেই সরিয়ে দিয়েছেন গাছের গুঁড়ি। পরিষ্কার করে দিয়েছেন ভারতী ঘোষের আসার রাস্তা।
এদিকে জুখিয়ায় সভা ডেকে বিপাকে তৃনমূল। টিম টিম করছে উপস্থিতির সংখ্যা। বিধায়ক তথা তৃনমূল নেতা অর্ধেন্দু মাইতি সভার উপস্থিতি দেখে হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে গেছেন ইতিহাসের আশ্চর্ষ প্রত্যাবর্তন দেখে। কয়েকদিন আগেও যে তৃনমুল কর্মী সমর্থকরা মিটিং ডাকলেই সভা ভরিয়ে দিতেন তাঁদের দেখা নেই। সব ভিড় চলে গেছে মাধাখালিতে। এমনকি যে মানুষগুলোকে ইটাবেড়িয়া থেকে আনা হচ্ছিল তারও একটা অংশ একতারপুর থেকে ফিরে গেছে বিজেপি নয়, ভারতী ঘোষের সভায়। অনেকেই ভারতী ঘোষকে দেখেননি তাঁরা ভারতীকে দেখতে চান।
দ্বিতীয় কারনটা অবশ্য সভার বিষয়। ১০দিন আগে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে গোকুল জানার। বিজেপির সক্রিয় কর্মী। মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। বিজেপির দাবি, খুন করা হয়েছে তাঁকে। তৃনমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্যরা স্বামী করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর গোকুল নাকি বাড়ির বদলে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে গিয়ে থাকতে বলেছিলেন সেই রাগে খুন! তৃনমূল অবশ্য দাবি করেছে, গোটাটাই বিজেপির লোক খ্যাপানোর খেলা। সাধারন একটা মৃত্যুকে নিয়ে রাজনীতি করছে বিজেপি। ঘটনা যাইহোক, লোক কিন্তু খেপেছে আর দলে দলে ভিড় করেছে ভারতী ঘোষের জনসভায়। তিন কিলোমিটার দুরে পাল্টা মিটিং করে সেই সভার লোক কমানো যায়নি বরং একই দিনে একই সময়ে মিটিং ডেকে নিজের ক্ষয়ে যাওয়া শক্তিকেই প্রকাশ্যে আনার ভুল করেছে তারা।
রাজনীতি বাংলায় ফুটবলের মত বডিটাচের খেলায় পরিনত, গায়ের জোরও যেখানে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। সেখানেও তৃনমূল পিছু হটেছে আজ। একতারপুরে দু’দলের হাতাহাতি হয়েছে, খানিকটা মারপিটও। তাদের দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর এবং কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ করেছে তৃনমূল। ঘটনা হচ্ছে এই অভিযোগ এতদিন এক তরফা তৃণমূলের বিরুদ্ধেই করা হত। যার অর্থ শক্তি প্রদর্শনের রাজনীতিতেও পিছু হটছে তৃনমূল।
ভারতী ঘোষ এদিন দাবি করেছেন, তিন জায়গায় রাস্তার ওপর গাছের গুঁড়ি ফেলে তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছে আর তিন জায়গাতেই মানুষ সেই গুঁড়ি সরিয়ে তাঁর যাওয়ার পথ মসৃন করে দিয়েছে। রবিবারের সভায় এটাই ভারতীর হাত ধরে বিজেপির জয়। বিজেপির কাঁথি সভাপতি অনুপ দাস বলেছেন, ‘মানুষের ভয় ভেঙেছে। আজ মানুষ যে ভাবে স্বতঃস্ফূর্ততা নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন তাতে একটা বিষয় পরিষ্কার যে, এবার বুথ দখল করে ভোটে জেতার পরিকল্পনা থাকলে দশবার ভাবতে হবে তৃণমূলকে। মোহ কাটিয়ে দলে দলে মানুষ তৃনমূল থেকে বিজেপিতে আসছেন।”