অশ্লেষা চৌধুরী: ছট পুজোর ঘাটে আচমকাই গজরাজের আগমণ। সেই দেখে ভয়ে কাদা হাজার হাজার পুণ্যার্থী। ঘটনাটি ঘটেছে আলিপুরদুয়ার জেলার বীরপাড়ার ৪৮ নম্বর এশিয়ান হাইওয়ের পাশের ছট পুজোর ঘাটে।
জানা যায়, এদিন ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ছট ঘাটে হঠাৎ করেই হাজির হয় একদল হাতি। ছোট-বড় মিলে মোট ১১ টি বুনো হাতির একটি দল। সেই সময় সূর্যোদয়ের পুজো সারতে ঘাটে ভিড় জমিয়েছিলেন হাজার হাজার পুণ্যার্থীরা।
আচমকা এইভাবে একদল হাতিকে আসতে দেখে ভয় পেয়ে যান সকলেই। হাতি আক্রমণ করবে ভেবে পুণ্যার্থীরা ভয় পেয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। তাদের নিজেদের মধ্যেই হুড়োহুড়ি লেগে যায়। তাদের এই হুলস্থুল কাণ্ড দেখে উল্টে হাতির দলই ভয় পেয়ে যায়। পুণ্যার্থীদের চিৎকার চেঁচামেচিতে অবশেষে হাতির দলটি হান্টার পাড়ার জঙ্গলে ফিরে যায়। তাদের ফিরে যেতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন উপস্থিত সকলেই।
তবে ছট ঘাটে হাতির দল মানুষের ওপর আক্রমণ না চালালেও ডুয়ার্সেরই অন্য আর একটি এলাকায় আক্রমণ চালিয়েছে একটি বুনো শুয়োর। আর বুনো শুয়োরের অতর্কিত আক্রমণে জখম হয়েছেন পাঁচজন গ্রামবাসী। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে আজ শনিবার সকাল নাগাদ আলিপুরদুয়ার জেলার জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন ময়রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের চার মাইল বাবুপাড়া এলাকায়।
আহত ৫ জনের মধ্যে এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ওই ব্যক্তির নাম গৌর দাস, বয়স ৫৮ বছর। তাঁকে ফালাকাটা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বাকি আহতদের ফালাকাটা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
আহত এক গ্রামবাসী জানান, সকালে সাতটা থেকে সাড়ে সাতটা নাগাদ তিনি গ্রামের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আচমকাই পাশের জঙ্গল থেকে একটি বুনো শুয়োর এসে তার ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। তাকে আঁচড়ে-কামরে দেয়। তার পেটে কামড় দেয়। ওই ব্যক্তির চিৎকারে আরও কয়েকজন সেখানে উপস্থিত হলে শুয়োরটি আবার জঙ্গলে পালিয়ে যায়। তারপর এলাকার আরও কয়েকজনের বাড়ীতে ঢুকেও আক্রমণ চালায় শুয়োরটি। তিনি এও জানান, এর আগে এই গ্রামে এভাবে কখনও বুনো শুয়োরের আক্রমণ হয়নি। এরপরেই খবর দেওয়া হয় বন দপ্তরে।
এদিকে লোকালয়ে বুনো শুয়োরের আক্রমণের খবর পেয়েই তড়িঘড়ি সেখানে ছুটে যান জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের বনকর্মীরা। আহতদের চিকিৎসার সব রকম খরচ বহন করার আশ্বাস দেন। এরপরেই বুনো শুয়োরটিকে ধরতে ফাঁদ পাতেন তারা। পুরো এলাকাটি ঘিরে দেওয়া হয় জাল দিয়ে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বন কর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শুয়োরটিকে বাগে আনতে। ঘটনাস্থলে আতঙ্কের পরিবেশ রয়েছে।
তবে এই গ্রামে এভাবে আগে বুনো শুয়োরের আক্রমণ না হলেও, ডুয়ার্সের আশেপাশে ঘন জঙ্গল ও চা বাগান এলাকা থাকায় প্রায় দিনই হাতি, বাইসন, বুনো শুয়োর ইত্যাদি জন্তু বেরিয়ে আসে এখানকার অন্যান্য সব এলাকায়। হামলা চালায় গ্রামবাসীদের ওপর। এতে করে সম্পত্তি বা ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির পাশাপাশি জীবন হানিও হয় অনেক।