অশ্লেষা চৌধুরী: একটা গাড়ির মধ্যে থাকা ১৪ জনের ১৪জনই শেষ হয়ে গেল একটি ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনায় যাঁর মধ্যে রয়েছে ৬টি শিশু। বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৪৫ নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর প্রদেশের প্রতাপগড় জেলার মানিকপুর থানার দশরথ কি ইনারা নামক গ্রামের কাছে, প্রয়াগরাজ-লখনৌ জাতীয় সড়কের ওপর। পুলিশ জানিয়েছে একটি বিয়ে বাড়ির ভোজ খেয়ে ফিরছিলেন নিহতরা। একটি এসইউভি (বোলেরো) গাড়িতে চালক ছাড়াও ছিলেন ১৩জন বরযাত্রী যার মধ্যে ৬ জনের বয়স ৭থেকে ১৫ বছর, এঁদের প্রত্যেকেরই মৃত্যু হয়েছে। ওই সময় জাতীয় সড়কের ওপর টায়ার খারাপ হয়ে যাওয়া একটি ট্রাক দাঁড়িয়ে টায়ার পরিবর্তনের কাজ করছিল সেই সময় নিয়ন্ত্রন হারিয়ে প্রচন্ড গতিতে সরাসরি ট্রাককে ধাক্কা মেরে ট্রাকের পেটের ভেতরেই ঢুকে যায়। ঘটনা স্থলেই মৃত্যু হয় চালক সমেত ১৪জনের সবারই
পুলিশ জানিয়েছে বোলেরো গাড়িটি দুমড়ে মুচড়ে এমন ভাবে ট্রাকের মধ্যে সেঁধিয়ে গেছিল গ্যাস কাটার দিয়ে ট্রাকের থেকে আলাদা করতে হয়। প্রথমে পুলিশ পেছনের দিক থেকে ৫টি মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে জেসিপি ও গ্যাস কাটার ব্যবহার করে একে একে আরও ৯টি মৃতদেহ উদ্ধার হয়। আশেপাশের ৫টি থানা এলাকার পুলিশ প্রায় তিন ঘন্টার অপারেশন চালিয়ে শুক্রবার ভোর রাতে অপারেশনের কাজ শেষ করে। বর্তমানে পুলিশ মৃতদেহ গুলি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।
পুলিশের তালিকা অনুযায়ী মৃতরা হলেন দীনেশ কুমার (৪০), পবন কুমার (১০), দয়ারাম (৪০), আমান (৭), রামসমঝু (৪০), অংশ (৯), গৌরব কুমার (১০), নান ভোয়া (৫৫), শচীন (১২), হিমাংশু (১২), মিথিলেশ কুমার (১৭), অভিমন্যু (২৮), পরশনাথ (৪০) এবং ড্রাইভার বাবলু (২২)। দুটি পরিবারের প্রায় সমস্ত সদস্যই দুনিয়া থেকে চিরতরে মুছে গেছেন এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায়।
জানা গিয়েছে, কুন্ডা থানা এলাকার চৌসা জিরগাপুরের বাসিন্দা সন্তলাল যাদবের ছেলে সুনীল যাদবের বৃহস্পতিবার বিয়ে ছিল। নবাবগঞ্জ থানা এলাকার শেখপুরে যায় বরযাত্রীরা। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে গভীর রাতে শিশুসহ ১৪ জন বোলেরোতে করে কুন্ডা গ্রামে ফিরছিলেন। মানিকপুর থানা এলাকায়, দেশরাজের কাছাকাছি দ্রুতগতিতে আসা বোলেরো পেছন থেকে এসে রাস্তার উপর পার্ক করা ট্রাকে ধাক্কা মেরে ট্রাকে ঢুকে যায় । এর পরে একটা চিৎকার ও আর্তনাদে সেই এলাকা ভরে যায়।
দুর্ঘটনাটি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে ঘটনাস্থলে পৌঁছেও লোকেরা কাছাকাছি যাওয়ার সাহস দেখাতে পারেননি। পাশ দিয়ে যাওয়া লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। অনেক চেষ্টার পরে পুলিশ বোলেরো থেকে লাশগুলি বের করে কুন্ডা সিএইচসি-তে নিয়ে যায়।
অন্যদিকে, দুর্ঘটনার খবর গ্রামে পৌঁছানো মাত্রই সেখানে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। বিয়ের অনুষ্ঠান মুহূর্তেই শোক সমারোহে বদলে যায়।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এই মর্মান্তিক ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি আধিকারিকদের ঘটনাস্থলে পৌঁছে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার নির্দেশ দেন। মৃতদের নিকট আত্মীয়কে ২লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপুরন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন যোগী আদিত্যনাথের রাজ্য সরকার। উল্লেখ্য ঘটনার ২৪ঘন্টা আগেই গুজরাটের ভাডোরাতে ৫মহিলা সমেত ১১জনের মৃত্যু হয়েছিল পথ দুর্ঘটনায়।