নিজস্ব সংবাদদাতা: ঘরে ২টো সাংসদ, ১টা মন্ত্রী, ১টা পৌরসভার চেয়ারম্যান, এইচডিএর চেয়ারম্যান! চায়ের দোকানে, পানের দোকানে শুধু একটাই আওয়াজ তোলো, আর কত চাই? বিদ্রোহী শুভেন্দু অধিকারীকে কাউন্টার করার জন্য পূর্ব মেদিনীপুরের এক তৃনমূল কর্মীকে এমনই ফর্মুলা দিচ্ছেন এক ব্যক্তি যাঁর গলা হুবহুব সুব্রত বক্সীর সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। প্রায় ৬ মিনিটের এরকমই একটি অডিও টেলিফোন কথোপকথন ভাইরাল হয়ে ঘুরছে বাজারে যেখানে কার্যত অধিকারী পরিবারের প্রতি তৃণমূলের বদান্যতা আর বিনিময়ে শুভেন্দু অধিকারীর বিশ্বাসঘাতকতার কথাই স্পষ্ট হয়ে ধরা দিয়েছে।
এই অডিওর সত্যতা দ্য খড়গপুর পোষ্ট যাচাই করেনি তাই দ্য খড়গপুর পোষ্ট দাবিও করছেনা যে এই অডিওর গলা সুব্রত বক্সীরই। কিন্তু গলার আওয়াজ, কথোপকথনের ভঙ্গি প্রায় ১০০%ই তাঁরই মত যেখানে ওই তৃনমুল কর্মীকে বলা হয়েছে, “আমরা তাড়িয়ে ওকে শহিদ হতে দেবনা, ওকে রাখার চেষ্টাই করে যাচ্ছি। তোমরা ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা কর, চ্যাপ্টার ক্লোজ হলেই আমি মাঠে নামছি। নন্দীগ্রামে আমরা শক্তি পরীক্ষা দিয়েছি মাত্র ৪ঘন্টার নোটিশে মিটিং করেছি। এরপর যদি মমতা ব্যানার্জী স্বয়ং নন্দীগ্রামে গিয়ে দাঁড়ান তবে সমস্ত মানুষ তাঁরই পাশে এসে দাঁড়াবেন।”
অডিওর ওপাশ থেকে বলা হয়, “আমরা তো স্যার সেটাই বলছি উনি (শুভেন্দু অধিকারী) মন্ত্রিত্ব ছেড়ে, প্রতীক ছেড়ে দলের বিরোধিতায় নামুন। তারপর দেখা যাবে কত ক্ষমতা। বক্সীর গলায় বলা হয়, “সেটা ওর নৈতিকতা।” এ পাশ থেকে বলা হয়, “আপনাদেরও অনেক দোষ আছে, ওকে অনেক বাড়তে দিয়েছেন।” সুব্রত বক্সীর গলা বলে, ‘হ্যাঁ, মানছি সেটা। সেটা আমরাও বলি। এখন আপনারা ধৈর্য্য ধরে থাকুন, এক সঙ্গে থাকুন। দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।” এপাশ থেকে বলা হয়, ” আমরা ঠিকই আছি, আমরা স্যার প্রতীকেই আছি। প্রতীক যেদিকে আমরাও সেদিকে।” সুব্রতর গলায় বলা হয়, ” একদমই ২০০% এটাই ঠিক।
সুব্রত বক্সীর গলায় বলতে শোনা যায়, ‘আর কত চাও? তোমাকে আর কত লালন পালন করবে দল? এখন বলছ দিদির আসনটা দিতে হবে আরে দিদির তো ৪০বছরের লড়াই আছে তোমার তো ৪০দিনের লড়াই নেই। তুমি (শুভেন্দু) ৯৯য়ে দলে এসেছ, ২০০২ য়ে কাঁথি পৌরসভা পেয়েছ, ২০০১তে ২ টো বিধায়ক, ২০০৬ য়ে ফের ২টো বিধায়ক, ২০০৯দুটো সাংসদ। এখন আরও চাইছ। আমরা সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছি কিন্তু তার মানে এই নয় যে দলটা বিক্রি করে দেব।”
তমলুক থেকে ফোন করা ওই নেতা জানান, ‘উনি মন্ত্রী হওয়ার পর আমরা আশা করেছিলাম যে উনি তমলুকের জন্য কিছু করবেন কিন্তু উনি তমলুকের একটা ছেলেকেও চাকরি দেননি, যা দিয়েছেন সব নন্দীগ্রামকে।” সুব্রত গলা বলে ওঠে, “চাকরির কথা ছাড়ো। ওই যে মিলন বলে ছেলেটাকে দলে আনল সেই মিলন ওর কথা না শোনায় তাকে জেলে পাঠিয়ে দিল?”
আমফান বিদ্ধস্ত নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীর ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করা হয় সুব্রত বক্সীর কন্ঠে। বলা হয়, ” তুমি ওখানকার বিধায়ক, মন্ত্রী আর আমফানের ওপর এলাকায় যাবে রাস্তার লোক। তোমার তাহলে কাজ কী? গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ানো?” মন্ত্রীত্ব ও প্রতীকের তলায় দাঁড়িয়ে শুভেন্দুর বর্তমান কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আমি সংসারে থাকবে অথচ বাবা মাকে লাথি জুতো মারব। এটা যেন সেরকমই।’এরপরই বক্সীর গলায় বলা হয়েছে, ‘ ওকে শহিদ করবনা, ও কতদিন এভাবে চলবে চলুক। তোমরা প্রতীকের সঙ্গে থাক। আমি শীঘ্রই জেলায় যাব। চায়ের দোকানে, পানের দোকানে এই সব আলোচনা চালিয়ে যাও।”
এপ্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘পাবলিকের কাছে খুব খারাপ লাগছে স্যার। বাইরে বেরুলেই লোক জিজ্ঞেস করছে, কিরে কার সঙ্গে আছিস? দাদার সঙ্গে না দিদির সঙ্গে?’ এপ্রান্ত থেকে বলা হয়, “সে আমাদেরও খারাপ লাগছে কিন্তু ও নিজেই তো এখনও দিদির পদলেহন করেই ওদের (অধিকারীদের) পদে রয়েছে। এই সব কথা আলোচনা কর সবাই মিলে। একটু চুপচাপ থাক। আমি বলছি, ২০০%নিশ্চিত থাক, সব ঠিক হয়ে যাবে।”
তমলুকের প্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘উনি একবার সিম্বল ছেড়ে, মন্ত্রিত্ব ছেড়ে আসুক আমরা দেখে নেব। নান্টু ঘটক তো বসেই আছে দেখে নেওয়ার জন্য।’ সুব্রত বক্সীর প্রতি আস্থা জানিয়ে শেষ হয় ওই ৬ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ওই কথোপকথন।