অশ্লেষা চৌধুরী: গত কয়েক বছর ধরে রাজধানী শহরে দূষণের মাত্রা হয়েছে লাগামছাড়া। করোনা আবহে যা মাথা ব্যথার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই দিল্লিতে দূষণের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। যমুনা নদীর জলস্তরে টক্সিক ফোম জমা হয়েছে। গোটা শহর ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে ঢেকে গিয়েছে। কিন্তু তাতেও হুঁশ নেই দিল্লিবাসীর। এসবের তোয়াক্কা না করেই প্রশাসনের নির্দেশকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জমিয়ে আতশবাজি পোড়ানোয় দিল্লির বায়ু আরও বেশি পরিমাণে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে দীপাবলির রাত থেকেই।
এবার দিল্লির রাস্তায় দেখা গেল তেলজাতীয় কিছু একটা পদার্থ চিপকে থাকতে, যা নিয়ে রীতিমত আতঙ্কিত মানুষ। রবিবার বিকেল থেকেই দিল্লীর বেশ কিছু জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে। প্রচন্ড পরিমাণে না হলেও ঘণ্টাখানেক ঝিরঝির করে এক নাগাড়ে বৃষ্টি হয়েছে। আর বৃষ্টির পর থেকে দিল্লির রাস্তা অদ্ভুত রকম পিচ্ছিল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বাইক বা স্কুটিতে ব্রেক কষলেই আরোহী ছিটকে পড়ছিলেন রাস্তার উপর। ভয়ে, আতঙ্কে লোকজন ফোন করা শুরু করেন দমকল বিভাগে। বিকেল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দিল্লির বিভিন্ন এলাকা থেকে দমকল বিভাগে ফোন যায়। এরপরই দমকল বিভাগের কর্মীরা রাস্তায় নামেন বিষয়টি খতিয়ে দেখতে। পরীক্ষা করে তারা দেখেন, সত্যিই দিল্লির রাস্তায় তেলজাতীয় কিছু একটা পিচ্ছিল পদার্থ পড়ে রয়েছে। অনেকেই মনে করতে শুরু করেন, বৃষ্টির সঙ্গে আকাশ থেকে পড়েছে সেই তেল।
ঘটনার কারণ খুঁজতে ময়দানে নামেন দমকল কর্মীরা। তারা জানান, গত কয়েকদিন ধরেই দিল্লিতে আবহাওয়া ছিল গুমোট। বাতাস সেভাবে বইছিল না বললেই চলে। ফলে দূষণের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল। দীপাবলিতে আতশবাজি পোড়ানোয় সেই দূষণের মাত্রা সীমানা ছাড়িয়ে যায়। বাতাসের ধূলিকণা এবং রাস্তায় চলতি গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া বৃষ্টির জলের সঙ্গে মিশে পিচ্ছিল পদার্থ সৃষ্টি করে, যা অনেকটা তেলের মতোই। আর এতেই রাস্তার অবস্থা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।
দমকল বাহিনীর এক আধিকারিক জানিয়েছেন, জোরে বৃষ্টি হলে হয়তো এমন অবস্থা হত না। তখন ওই পিচ্ছিল পদার্থ ধুয়ে নর্দমায় চলে যেত। কিন্তু বিকেল চারটে থেকে ঝিরঝির বৃষ্টির ফলে সেই পদার্থ রাস্তার উপরেই জমেছিল। অনেকেই ভেবেছিলেন, রাস্তার ওপর মোবিল জাতীয় কোন পদার্থ পড়ে রয়েছে। আর তার জন্যই দুই চাকা চালানো বিপদজনক হয়ে উঠেছিল দিল্লির রাস্তায়। তবে দমকল বাহিনী তৎপরতার সঙ্গে কাজ শুরু করে দেয়। বহু এলাকা থেকে সেই পিচ্ছিল পদার্থ সরানোর কাজ শুরু করেছেন দমকল কর্মীরা।
তবে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দিল্লীবাসীর আতশবাজি পোড়ানোর ভয়াবহ ফল তাদের কাছে আরও কী কী উপহার নিয়ে আসে, সেটাই দেখার।