নিজস্ব সংবাদদাতা: এতদিন কালীঘাট আর ভাইফোঁটা মানে দিদি একজনই আর তিনি হলেন মমতা ব্যানার্জী। ২০১১-র আগে মমতা ব্যানার্জীর হাতে ফোঁটা নিতে তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে ভিড় পড়ে যেত ‘ভাই’দের। ভাই বলতে মূলতঃ কলকাতার বড় বড় তৃনমুল নেতা কর্মীরাই। আর সে কর্মীদের মধ্যে দূরদূরান্ত থেকে আসা তৃনমুল কর্মীরাও থাকতেন। ২০১১র পর চিত্র বদলেছে অনেকটাই। মূখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে নিরাপত্তার বেষ্টনী যত আঁটসাঁট হয়েছে ততই ফিকে হয়েছে ভাই ফোঁটার গন রূপ। এখন ভাইফোঁটায় কালীঘাট আর গম গম করেনা। এরমধ্যে করোনা কাল যুক্ত হওয়ায় কালীঘাট থেকে গন ভাই ফোঁটা হয়ত বিলুপ্তই হয়ে যেত যদি না সোমবার সেখানে আসতেন ভারতী ঘোষ। আর বিজেপির রাজ্য সহসভাপতির আঙুলের ফোঁটায় ফের কালীঘাট ভাইফোঁটার চর্চায় চলে এল।
সোমবার যমের দুয়ারে কাঁটা দিয়ে কালীঘাট মন্দির চত্বর এলাকায় সমবেত কয়েকশ মানুষকে ফোঁটা দিয়ে তাঁদের দীর্ঘায়ু কামনা করতে গিয়ে বাঙালি বোন কিংবা দিদিদের সেই চিরায়ত কথা মালা আউড়ে বলেছেন, “ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা। যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দেই আমার ভাইকে ফোঁটা।” একেবারে ব্রতের নিক্তি মেপেই চন্দনের ফোঁটার পাশাপাশি দিয়েছেন ধান দূর্বাও। কালীঘাটে জড়ো হওয়া ভক্তের দল, পথ চলতি মানুষ, ভিড় দেখে থমকে যাওয়া যুবক, ফেরিওয়ালা, এমনকি ভিক্ষাজীবীর কপালে ফোঁটা দিয়ে তাঁদের মুখে মিষ্টি তুলে দিয়েছেন ভারতী ঘোষ।
যে মিডিয়া এতদিন ক্যামেরা প্যাক করতে থাকত কালীঘাটে মূখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে সেই মিডিয়ার ক্যামেরার মুখ অনায়াসে ঘুরে গিয়েছে প্রাক্তন এই আই পি এস আধিকারিকের দিকে।
খুব স্বাভাবিক ভাবেই মিডিয়ার দিক থেকে প্রশ্ন ছুটে এসেছে ভারতী ঘোষের দিকে, উঠেছে মমতা ব্যানার্জীর প্রসঙ্গ। মিডিয়া প্রশ্ন করেছে একদিন মমতা ব্যানার্জী এই ভাবে গন ভাই ফোঁটা দিতেন আজ সেই পথে আপনি? ভারতী উত্তর দিয়েছেন, ‘আমি কাউকে অনুসরণ করে এটা করিনি। আমি আমার মত করেছি। প্রতি শনিবার এখানে পুজো দিতে এসে আমি হাজার হাজার মানুষকে দেখি। যার মধ্যে নানা পেশার মানুষ থাকেন। তাঁরা অপেক্ষায় থাকেন মায়ের কৃপা পাওয়ার জন্য। আমি মায়ের একজন সন্তান হয়ে আজকের দিনটি বেছে নিয়েছি তাঁদের মঙ্গল কামনায়।”
মিডিয়া প্রশ্ন তুলেছে কালীঘাটের মত জায়গা যা কিনা মূখ্যমন্ত্রীর এলাকা সেরকমই একটা জায়গা বেছে নিয়ে কী বার্তা দিতে চাইছেন? ভারতী উত্তর দিয়েছেন, “কালীঘাট কারও এলাকা নয় এটা মায়ের এলাকা। এখানে সবার ওপরে মা, তার নিচে সবাই। আমি সেই মায়ের এলাকাতেই এসেছি।” তবে তিনি যাই বলুননা কেন রাজনীতিকদের মতে, মমতার গড়ে ভাই ফোঁটা দিতে গিয়ে আদতে ভারতী ঘোষ যেমন নিজের অস্তিত্বকে মিডিয়া মুখি করার সুযোগ নিয়েছেন ঠিক যেমনটা নিতেন বিরোধী নেত্রী মমতা। আর দ্বিতীয়ত: মমতা গড়ে ঢুকে মমতাকে অস্বস্তিতে ফেলা, চাপ তৈরির এও এক রাজনৈতিক কৌশল যা ভারতী করে দেখালেন।
অন্যদিকে ফোঁটা নিয়ে উচ্ছাসে ফেটে পড়তে দেখা গেছে লোকজনদের। বলেছেন, এভাবে আজকের দিনে আমাদের জন্য যে উনি ভেবেছেন এটাই বড় কথা। সত্যি সত্যি ভাই ফোঁটার দিন এক সময় কালীঘাট গম গম করত। আজ আবার সেই পুরনো দিন ফিরে এল যেন। মানুষের এই উচ্ছাসে খুশি ভারতী ঘোষের সঙ্গে থাকা অনুগামীরা। ভারতী ঘোষের সঙ্গী অনুগামীরা বলছেন, কালীঘাটে ফোঁটা দিয়ে তৃণমূল আর মমতা ব্যানার্জীর জয়ের পথে কাঁটা দিয়ে এলেন ভারতী ঘোষ।