ওয়েব ডেস্ক : ৭২ ঘন্টা আগেই তৃনমূল ছেড়ে অন্যদলে যাওয়ার ইচ্ছা আছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। সিঙ্গুরের ব্লক সভাপতি গঠন নিয়ে দিন কয়েক ধরেই তৃণমূলের অন্দরে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তথা সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের সাথে হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্নার মধ্যে চাপান উতো শুরু হয় মনে করা হচ্ছে সেকারনেই দু’দিন আগেই দল ছাড়ার ভাবনার কথা বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। এর রেশ কাটতে না কাটতেই এবার পদত্যাগের ইচ্ছে প্রকাশ করলেন হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্না।
বৃহস্পতিবার পদত্যাগপত্র জমা দিতে সোজা পৌঁছে বিধানসভায় যান হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্না। এরপর অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দিয়েছেন বেচারামবাবু। যদিও এ ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কোনোরকম বিবৃতি দেননি অধ্যক্ষ। জানা গিয়েছে, বেচারাম মান্নার পদত্যাগের পর শুক্রবার সিঙ্গুরে গণ–পদত্যাগ করবেন বেচারামের অনুগামীরা।
সিঙ্গুরে রবীনাথ ভট্টাচার্য বনাম বেচারামের দ্বন্দ্ব নতুন নয়। এবার ফের সেই আগুনেই ঘি পড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে। রবিবার হুগলি তৃণমূলের জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। তাতে দেখা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঘনিষ্ঠ সিঙ্গুরের ব্লক সভাপতি মহাদেব দাসকে সরিয়ে তার পরিবর্তে হরিপালের তৃণমূল বিধায়ক বেচারাম মান্নার ঘনিষ্ঠ গোবিন্দ ধাড়াকে বসানো হয়। আর এতেই চটেছেন সিঙ্গুরের প্রবীণ বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। এবিষয়ে বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যাঁরা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নয় তাঁদের বাদ দেওয়া হবে আর যাঁরা দুর্নীতি করেছেন তাঁদের নেতৃত্বে আনা হবে, এ জিনিস মেনে নেওয়া যায় না।”
সূত্রের খবর, রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। সেকারণে বেচারাম মান্নার সাথে এই সমস্যা মেটাতে বুধবার রাতে বেচারাম মান্নাকে ফোন করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে জানানো হয়, তাঁর ঘনিষ্ঠ গোবিন্দ ধাড়াকে সরিয়ে আগের মতই ফের রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ মহাদেব দাসকে ব্লক সভাপতি করা হবে। শুধু তাই নয়, একইসঙ্গে জানানো হয়, হরিপালের বিধায়কের টিকিট এবার বেচারাম মান্নাকে দেওয়া হবে না। তার বদলে তা মহাদেব দাস অথবা হুগলি জেলা পরিষদের সদস্য সমীরণ মিত্রকে দেওয়া হতে পারে। কিন্ত নির্বাচনের প্রাক্কালে আচমকা দলের এই সিদ্ধান্ত একেবারেই মেনে নিতে পারেননি বেচারামবাবু। এর জেরেই বৃহস্পতিবার বিধায়কের পদ থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধমক খেয়ে কার্যত ভেঙে পড়েন বেচারাম। এমনকি তিনি নাকি বুধবার রাত থেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এদিকে বৃহস্পতিবার বিধানসভায় পদত্যাগপত্র দেওয়ার পরই বেচারাম মান্না কে ডেকে পাঠান তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি। এরপর তৃণমূল ভবনে যান বেচারাম মান্না। সেখানে গিয়ে সুব্রত বক্সির সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক করেন বেচারামবাবু। জানা গিয়েছে, এদিনের বৈঠকের পর যাবতীয় সমস্যা মিটে গিয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে বেচারাম মান্নার কাছ থেকে স্পষ্টভাবে কিছুই জানা যায়নি।
যদিও ঘটনা শুধু এটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়। বাস্তবে জানা গেছে শুধু সিঙ্গুর নয়, সিঙ্গুরকে কেন্দ্র করে গোটা হুগলি জেলাতেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকট হচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনে হুগলিতে যথেষ্টই খারাপ ফল হয়েছে তৃণমূলের। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী হুগলির বিধানসভা ক্ষেত্র গুলিতে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে তৃনমুল। ন্যানো চলে যাওয়ার ফল এখন হাড়ে হাড়ে বুঝছে তরুণ প্রজন্ম। পাশাপাশি জমি আন্দোলনের নেতা বেচারাম মান্নার মত নেতাদের হাবভাব, আচার আচরনেও মানুষ অসন্তুষ্ট বুঝতে পেরেই দল এখন তাঁদের পেছনের সারিতে ঠেলে নতুন মুখ আনতে চাইছে। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ বা বেচারামদের পেছনে ঠেললে তাঁরাও যে অন্যদিকে যাওয়ার জন্য তৈরি তাও বুঝিয়ে দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথরা। এদিন রাতের দিকে আবার পদত্যাগ প্রত্যাহার করে নেন বেচারাম যদিও ততক্ষনে দলের মধ্যে ফটলটা স্পষ্ট হয়ে গেছে। আর সেই ফাটলের মধ্যেই উঁকি দিতে দেখা গেছে বিরোধের শনিকে।