নিজস্ব সংবাদদাতা: শুভেন্দু অধিকারী কে জননেতা বলে অভিহিত করলেন বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতি ভারতী ঘোষ। মঙ্গলবার নন্দীগ্রামে ‘নন্দীগ্রাম দিবস’ নিয়ে ফিরাদ হাকিম বনাম শুভেন্দু অধিকারীর দ্বৈরথ প্রসঙ্গে ভারতী ঘোষ বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী জননেতা। তিনি প্রাথমিক সদস্যপদ নেওয়ার সময় থেকে তৃনমুল করছেন। তাঁর জনসভা জনসভাই। আর ফিরাদ হাকিম সাহেব যা করেছেন তাহল আমাদের ভাষায় চায়ে পে চর্চা, যেখানে আমি যতদূর জানি ১৪৭ জন মানুষ এসেছিলেন। সেই শুভেন্দু অধিকারীকেই যদি তৃনমূল সম্মান না দিতে পারে তাহলে বাংলার মানুষের বুঝতে অসুবিধা হয়না যে তাঁদের তৃনমুল কী সম্মান দেবে!”
মঙ্গলবার ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইলের এক দলীয় অনুষ্টানে হাজির হওয়ার পর সাংবাদিকরা শুভেন্দু অধিকারী প্রসঙ্গ তুলে তাঁকে প্রশ্ন করেন শুভেন্দু কী তবে বিজেপিতে আসছেন? উত্তরে এই জেলার প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ জানান, ‘শুভেন্দু অধিকারী কী করবেন সেটা তাঁর নিজস্ব ব্যাপার।” যদিও শুভেন্দু কে ‘জননেতা’ আখ্যায়িত করার মধ্যে দিয়ে অনেকেই জঙ্গলমহলের পুরানো একটি সমীকরন খুঁজতে চাইছেন এবং তা’হল এক সময় শুভেন্দু ও ভারতীর মাওবাদী দমনের জয়েন্ট ভেঞ্চার।
২০১১ সালে তৃনমূল ক্ষমতায় আসার পর চাণক্য নীতিতে মাওবাদীদের নির্মূল করার জন্য মমতা ব্যানার্জীর সরকার সরকারি ভাবে যেমন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের ওপর নির্ভর করেছিল তেমনই বেসরকারি ভাবে নির্ভর করেছিল শুভেন্দু অধিকারীর ওপর। সুদুর কাঁথি থেকে জঙ্গলমহলের ওপর শুভেন্দু অধিকারী কী ভাবে নিয়ন্ত্রন নিয়েছিলেন তার ব্যাখ্যা দিতে সিপিএম নেতারা বলেন, সরকার গঠনের পূর্বে বিরোধী দলে থাকার সময়ে শুভেন্দু অধিকারী মাওবাদীদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন যে ঘনিষ্ঠতা শুরু হয়েছিল নন্দীগ্রাম থেকে।
ঘটনার সত্য মিথ্যা অবশ্য বিচার্য বিষয় কিন্তু এটা ঘটনা যে, মাওবাদীদের শীর্ষ নেতা কিষানজী একাধিকবার শুভেন্দু আধিকারীকে যুবরাজ বলে সম্বোধন করেছেন যার অর্থ তৃণমূলের সরকারের মূখ্যমন্ত্রী হিসাবে কিষানজী যেমন মমতা ব্যানার্জীকে মূখ্যমন্ত্রী দেখতে চেয়েছিলেন তেমনি দল ও সরকারের দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যক্তি হিসাবে ‘যুবরাজ’ শুভেন্দু অধিকারীকেই দেখতে চেয়েছিলেন।
কিষাণজীর প্রথম স্বপ্ন সফল হয়েছে অর্থাৎ মমতা ব্যানার্জী মূখ্যমন্ত্রী হয়েছেন কিন্তু দ্বিতীয় স্বপ্ন, শুভেন্দুর যুবরাজ হয়ে ওঠা হয়নি। পরিবর্তে যুবরাজ এখন অভিষেক ব্যানার্জী।
অন্যদিকে মমতা ব্যানার্জীর স্বপ্ন কিন্তু সফল করেছিলেন শুভেন্দু ভারতী জুটি। পুলিশ সুপার হিসাবে ভারতী যতটাই মাওবাদী দমনে কঠোর হয়েছেন তেমনই বেসরকারি ভাবে সেই কাজে সফল হয়েছেন শুভেন্দু। জঙ্গলমহলে প্রাক্তন মাও সমর্থকদের নিয়েই শুভেন্দুর ইশারায় গঠিত হয়েছিল মাওবাদীদের প্রতিরোধ করার জন্য একটি বিশেষ কমিটি। শোনা যায় কিষানজীকে দমনে এই কমিটির একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল।
ঘটনাচক্রে বর্তমানে ভারতী ঘোষ অবসর নেওয়ার আগেই চাকরি ছেড়ে তৃনমূল বিরোধী রাজনৈতিক দলে আর শুভেন্দু দলের থেকে দূরত্ব বাড়িয়েই চলেছেন। জঙ্গলমহলে শুভেন্দু এখন নতুন শক্তি যার চূড়ান্ত পরিসর এখন তৃনমূল বিরোধিতাই। এ হেন পরিস্থিতিতে ফের ভারতী শুভেন্দু জুটি হলে জঙ্গলমহলে ইতিমধ্যেই নাভিশ্বাস উঠে যাওয়া তৃণমূলের পরিনতি আরও করুন হবে সেকথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। সেই অনুপাত কে মাথায় রেখেই কীনা বলা যাবেনা তবে সাঁকরাইলের ময়দান থেকেই ভারতী বলেছেন, ‘অন্যদলের ভাল নেতারা যদি বিজেপিতে আসেন তবে তাঁদের স্বাগত জানাচ্ছি।’