অভিনন্দন রানা: ক্ষমতায় নেই আর ক্ষমতায় আসলে কী করবেন তারও তেমন কোনোও প্রতিশ্রুতি নেই। যা ছিল তা হল সংগঠন। যেখানে যতটুকু শক্তি তাই দিয়ে নিটোল সংগঠন আর সেটুকুর জোরেই বিহারে অত্যাশ্চর্য ফল করতে চলেছে বামেরা অন্তত এখনও অবধি ট্রেন্ড তাই বলছে। অত্যন্ত কম আসন নিয়ে আসন সংখ্যার নিরিখে বিহারের সমস্ত রাজনৈতিক দলের চেয়ে বেশি আসনে জেতার পথে বামেরাই। বামদলগুলির এই জয়ী হবার প্রবনতা প্রমান করে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠান বিরোধী শক্তি হিসেবে বিশ্বাস যোগ্য হয়ে উঠেছে তারা। জোট রাজনীতিতে চাহিদা মত আসন জোটেনি তাঁদের যদি জুটত তবে এই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে এলজেপি জোট ইতিহাস গড়ে ফেলত কিনা তা ভাবার বিষয়।
ভারতের প্রায় প্রতিটি এক্সিট পোলে তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বাধীন মহাজোটকেই অবিসংবাদী ভাবে এগিয়ে রেখেছিল। যদিও কোনো এক্সিট পোলই কোন পক্ষের সরকার হবে সে সম্পর্কে অভ্যাস দিতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু বাস্তবে প্রায় তার উল্টোটাই দেখা গেল। যা ফলাফলের গতিপ্রকৃতি তাতে বোধহয় তেজস্বী এবারও পারলেন না মহাজোটকে উৎরে দিতে। যদিও আরজেডি মোটামুটি ভালোই ফল করেছে, কিন্তু কার্যত কংগ্রেস একেবারে সাথ দিতে না পারায় এনডিএ জোটের সামনে পিছিয়ে গেছে মহাজোট। কিন্তু বিহারের এই ফল বিহারে অন্য রাজনীতির অভ্যাস দিচ্ছে।
বামেরা বিহারে এককালে বেশ জনপ্রিয় ছিল। বিহার থেকে একাধিক জাতীয় পর্যায়ের সিপিআই সিপিআইএম নেতারাও এসেছেন। কিন্তু গত কয়েক বছরে এই দুই জাতীয় রাজনৈতিক দল কার্যত ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছিল। বিহারের রাজনীতিতে একমাত্র সিপিআই এমএল প্রাসঙ্গিক হয়ে ছিল বছরের পর বছর। লোকসভায় না হলেও দীপঙ্কর ভট্টাচার্য্য তাঁর দলকে বিহারের বিধানসভায় নিজের দলের প্রতিনিধি পাঠিয়ে গিয়েছেন। বিগত বিধানসভায় তাঁর দলের তিনজন প্রতিনিধিও ছিলেন। সিপিআইএর একজন সদস্য ছিলেন। তবে পুরোটাই মহাজোটের অংশ হিসেবে।
কিন্তু এই বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে আগের সমস্ত ফলাফলকে ওলট পালট করে দিতে চলেছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বামেরা মোট উনিশটি আসনে এগিয়ে রয়েছে। সবচেয়ে বড় খবর হল কংগ্রেসও সমসংখ্যক আসনে এগিয়ে এখনো পর্যন্ত। অথচ মজার বিষয় এই যে কংগ্রেস ৭০ টি আসনে লড়াই করেছিল, সেখানে বামেরা মাত্র ২৯টি আসনে। এখনো পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুসারে সিপিআইএমএল ১৩টি এবং সিপিআই সিপিআইএম তিনটি করে আসনে এগিয়ে রয়েছে। ফলে এটা কার্যত পরিষ্কার কংগ্রেসই তেজস্বীর নৌকো ডোবাতে চলেছে। অন্যদিকে বামদল গুলি শুধুমাত্র মহাজোটকে অক্সিজেন দিচ্ছে তাই নয়, আরও বড় পরাজয় থেকেও আটকে দিল।
এই বিধানসভার ফলে মহাজোটের একটা অংশ যেমন বিমর্ষ এতটা এন্টি ইনকাবমেনসি হাওয়া থাকা সত্ত্বেও এনডিএ কে হারানো গেলনা, তেমনি বিহারে বিজেপি একক বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এল। ফলে নরেন্দ্র মোদি তথা বিজেপি বিরোধী যে হওয়া বিরোধীরা তোলার চেষ্টা করছিল তা কার্যত উড়ে গেল। কিন্তু কংগ্রেসের শোচনীয় ফলে অন্তত জাতীয় স্তরে বিজেপিও বিরোধী মুখ হিসেবে কংগ্রেসের গ্রহনযোগ্যতাও কমে এল। এই পরিস্থিতিতে বিহারে যেভাবে বামেরা ফল করল সেটা সত্যিই একটা বিশাল অক্সিজেন বামপন্থীদের জন্য। এবং স্মরনাতীত কালের মধ্যে বামেদের বিহারে এটাই সেরা ফলাফল।
এই প্রতিবেদন শেষ করব একটা অন্য বিষয় নিয়ে। গত লোকসভা নির্বাচনে বিহারের খবর কভার করার সময় একটা বড় ব্যাপার চোখে পড়েছিল। বিহারের বেগুসরাই একটা বড়ো সংখ্যক জাতীয় সংবাদমাধ্যমের চোখ আকর্ষণ করে রেখেছিল। কারন কানহাইয়া কুমার সিপিআই এর প্রার্থী হিসেবে লড়েছিলেন। গোটা বিহারে সিপিআই মহাজোটের অংশ হিসেবে দুটি আসন দাবি করেছিল, এক আরারিয়া অন্যটি বেগুসরাই। কিন্তু তেজস্বী সমর্থন দেননি সিপিআই কে। মানুষের কথায় কারন হিসেবে উঠে আসে এই যে, যদি বিহার থেকে সংসদে যান কানহাইয়া তাহলে তেজস্বীর থেকেও বড়ো নেতা হয়ে উঠতে পারেন তিনি। আর এই ভয়েই সমর্থন করেননি তেজস্বী। ত্রিমুখী লড়াইতে হেরে যান কানহাইয়া। অদ্ভুতভাবে সেই বামেদের ওপরেই এখন তেজস্বীর সম্মান বাঁচলেও, তেজস্বী যে সঠিক আশঙ্কাই করেছিলেন সেটা কার্যত প্রমান হয়ে গেল বামেদের এই ফল থেকে।