হাত বাড়ালেই গাদিয়াড়া
পার্থ দে
হাতে যদি অঢেল সময় না থাকে আর বাজেটও যদি কিছুটা কম পড়ে যায় এবং সর্বোপরি ভাবছেন করোনা কালে ভিড় এড়িয়ে একটু নির্জন জায়গায় ঘুরে আসবেন তবে এবার বরং ত্রিবেণী সঙ্গমের গাদিয়াড়াই ঘুরে আসুন। গ্যারেন্টি দিয়ে বলছি ফিদা হয়ে যাবেন। সারাদিন কাটিয়ে ঢলন্ত বেলায় নদীর মধ্যে ফিরোজা রঙের সূর্যাস্ত যদি না আপনার বুকে ঢেউ তোলে তবে বলতে হবে আপনি প্রকৃতি প্রেমিকই নন। আর এই যে অবশেষে বঙ্গের অন্দরে ঢুকে পড়েছে শীত। শীতের পোশাক, ব্যাগ-প্যাক আম বাঙালির একজন আপনিও। একটা উইকএন্ড বা শীতের ছুটি পেলেই পায়ের তলায় নিশপিশ। কোথায় যাবেন, কোথায় যাবেন ভাবছেন। অতিমারির মার বাঁচিয়ে মেপে খরচ করার হিসেব-নিকেশ শুরু। অথচ কাজের চাপের মাঝে কেউ কেউ আবার খুঁজছেন হাতের কাছেই কিছু ডেস্টিনেশন খোঁজা চলছে। চাইছেন স্রেফ দু-এক দিনের বিরতিতে রিফ্রেশমেন্টের বন্দোবস্ত। তো ঘুরে আসুন গাদিয়াড়া।
স্থান ও ঋতুভেদে নদী ভিন্ন ভিন্ন রূপে ধরা দেয়। প্রতিটা রূপই মন ভোলানো। তার মধ্যে বর্ষায় নদীর মাধূর্য বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। কখনও সে চঞ্চলা হরিণী, আপন বেগে পাগলপারা, কখনও বা সর্বগ্রাসী ভয়ঙ্করী। হুগলি (গঙ্গা), রূপনারায়ণ ও দামোদর নদের ত্রিবেণী সঙ্গম হল গাদিয়াড়া। তিন নদী এক হয়ে হুগলি নামে বয়ে গেছে সাগরপানে। দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি, খানিকটা যেন মিনি সমুদ্র। এ–পারের গাদিয়াড়া হাওড়া জেলার গাদিয়াড়া, আর ওপারে পূর্ব মেদিনীপুরের গেঁওখালি, আরেক দিকে দক্ষিণ ২৪ পরগণার নুরপুর। সন্ধ্যায় এই তিন জনপদের চিকচিকে আলো নদীবক্ষে প্রতিফলিত হয়ে এক অদ্ভুত সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে। খুব কাছ থেকে বড়ো বড়ো জাহাজগুলো ভেসে চলে যায়। সারাদিন মৎসজীবিদের তৎপরতা চোখে পড়বে। বর্ষায় ইলিশ ছাড়াও, তপসে, ভোলা, ট্যাংরা, চিংড়ি, পাবদা ইত্যাদি টাটকা মাছ কিনে স্থানীয় দোকানে দিয়ে দিলে রান্না করে দেয়। সরকারি লজের সামনে নদীর পাড়ে বসার সুন্দর প্যাভিলিয়ন বানানো আছে। কোথাও না গিয়েও শুধুই বসে বসে প্রাকৃতিক দৃশ্য, জল আর জল এর ঢেউ গুণতে গুণতে সময় কেটে যাবে। শীতের সকালের মিষ্টি রোদ গায়ে মেখে নদীপাড়ের রাস্তা ধরে আপনমনে হাঁটতে বেশ লাগবে। বসার জন্য বেশ কিছু জায়গায় বেঞ্চ বানানো আছে। আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুটোই অসাধারন লাগে। আর হ্যাঁ, যে কথা হচ্ছিল। আসার সময় যদি বুকের মধ্যে জলের মধ্যে চলকে পড়া সূর্যাস্তের ফিরোজা রঙ ধরে আনতে পারেন তবে তা বিলিয়ে দেবেন প্রিয়জনদের। দেখবেন, ওদেরও ভাল লাগবেই।
আর কি কি দেখবেন :-
◆ যদিও দেখার মতো নয়, তবুও জানিয়ে রাখি নদীর ধারে লর্ড ক্লাইভের তৈরী মর্নিংটন ফোর্টের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। যেটি 1942 সালের বন্যায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
◆ এছাড়া নদীপাড়ে একটা পরিত্যক্ত ও ভগ্ন লাইট হাউস আছে।
◆ এখান থেকে 22 কিমি দূরে গড়চুমুক যেতে পারেন। ওখানে দেখবেন দামোদর ও হুগলী নদীর মিলনস্থল, দামোদরের ওপর আটান্নটা স্লুইসগেট এবং ডিয়ার পার্ক। ভেতরে হরিণ ছাড়াও টিয়া পাখি, ময়ূর, বনমোরগ আর কুমির আছে।
◆ জেটিঘাট থেকে লঞ্চে চড়ে ঘুরে আসতে পারেন নূরপুর অথবা গেঁওখালি থেকে।
◆ হাতে একটা-দুটো দিন থাকলে বেড়িয়ে আসা যায় মহিষাদল রাজবাড়ি থেকে। কিংবা আরেকটু দূরে তমলুক থেকে।
◆ আবহাওয়া ভালো থাকলে নৌকা ভাড়া করে যেতে পারেন রুপনারায়নের সৃষ্ট ‘মায়াচর’ দ্বীপে। জলপথে মাঝে মাঝে শুশুকের দেখা মেলে।
কিভাবে যাবেন :-
◆ লোকাল ট্রেনে বাগনান স্টেশনে নেমে লোকাল বাসে বা গাড়ি ভাড়া করে 32 কিমি দূরে গাদিয়াড়া যেতে পারেন।
◆ নিজেদের গাড়িতে অথবা কোলকাতা থেকে সকালের CTC-র বাসে বাগনান হয়ে দুই/আড়াই ঘন্টায় সরাসরি গাদিয়াড়া (96 কিমি)।
থাকা – খাওয়া :-
◆ থাকার জন্য WBTDC-র “রূপনারায়ণ ট্যুরিস্ট লজ” (9732510076) সবথেকে ভালো। নিজস্ব রেস্টুরেন্ট আছে। অনলাইন বুকিংহয়।
◆ তাছাড়া “হোটেল চলন্তিকা” (9800313195) বেশ ভালো।
◆ গড়চুমুকে থাকার জন্য বনদপ্তরের “ইকো ট্যুরিজম্ সেন্টার”অনলাইন বুক করা যায়।
http://www.wbfdc.org/garchumuk-eco-tourism-centre/
বিশেষ সতর্কতা :-
◆ খারাপ আবহাওয়া থাকলে নৌকায় চড়বেন না।
◆ সন্ধ্যের পর বাইরে ঘোরাঘুরি করবেন না।
◆ উপরোক্ত হোটেলগুলি ছাড়া সস্তার অন্য কোন হোটেল খুঁজতে যাবেন না।
◆ কিছু জিনিসের প্রয়োজন হলে হোটেলের সার্ভিস বয় বা ম্যানেজারের সাহায্য নিন।
◆ নদীর জলে বা যত্রতত্র আবর্জনা ফেলবেন না।