নিজস্ব সংবাদদাতা, গোয়ালতোড় :- বাজারের থলে হাতে শুধু গৃহস্থরাই আলু কিনতে গিয়ে ছ্যাঁকা খাচ্ছেন এমনটা নয় বরং আরো খারাপ অবস্থা কৃষকের। কারন গত বছরের চাইতে দ্বিগুণেরও বেশি দাম আলুর বীজের। আর তার ফলে আলু লাগানোর জন্য জমির মাটি তৈরী করেও চাষে নামতে পারছেনা জেলার বৃহৎ অংশের আলু চাষীরা। কারন আলুর এই চড়া দামের সময় রাজ্য সরকার সম্পুর্ন নীরব। তাই রাজ্যে কোনো সরকার আছে বলে মনে করতে পারছেন না গোলাপ খান, হাতেন চৌধুরী, মদন মাঝি, সনাতন মাহাত, তাপস মণ্ডলের মতো শত শত প্রান্তিক আলু চাষী।
পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়,গড়বেতা, শালবনী, চন্দ্রকোনা, ক্ষীরপাই, আনন্দপুর সহ বিভিন্ন এলাকার চাষীরা জমিতে সারা বছর বিভিন্ন ধরনের সবজি আর এই সময়ে চট জলদি আলু চাষ করে সংসার চালান। আলুর এই চড়া দামের কারনে তারা এখন পড়েছেন মহা সংকটে। গোয়ালতোড়ের তাপস মণ্ডল জানান, আমি চটজলদি আলু প্রায় আড়ায় তিন বিঘা লাগায়। এবার বীজআলুর দাম বেশী হওয়ার কারনে মাত্র এক বিঘা পোখরাজ আলু লাগিয়েছি। এবার একবস্তা পোখরাজ বীজের দাম পাঁচ হাজার টাকা। দর কষাকষির কোনো সুযোগ নেই। ফড়েদের দখলকৃত সব গোলায় একই দাম। অথচ গত বছর এই বীজের দাম ছিলো প্রতি প্যাকেট দেড় হাজার টাকার মধ্যে, তার আগের বছর হাজার টাকার মধ্যে দাম ছিল। এক বিঘা আলু লাগাতে এবার প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা খরচ৷ এতো টাকা খরচ করে আলু লাগানোর ক্ষমতা নেই তাই চাষ কমিয়ে দিয়েছি।
আলু চাষের জন্য এবছর এমনিতেই দেরী হয়ে গেছে। দূর্গাপূজার পরই এই চট জলদি আলু চাষ শুরু হয়। এবছর পূজো এক মাস পিছিয়ে যাওয়ায় তাই মাটি তৈরী করতেও দেরী হয়েছে। তাই চাষীরা জমিতে ছত্রাক নাশক, কীটনাশক, সার দিয়ে মাটি চষে জমি তৈরী করে ফেলেছেন। কিন্তু পোখরাজ বীজ পূজোর পর পাঞ্জাব থেকে আসায় সেই বীজ কিনতে গিয়েই মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থায়। যেখানে বিঘা প্রতি পাঁচ হাজার টাকার বীজের জন্য বাজেট এখন ২০ হাজার টাকা। তার উপর কীটনাশক, রাসায়নিক সার, লাঙ্গল মিলিয়ে আরো কুড়ি হাজার টাকা খরচ। তাই মাটি তৈরী করেও আলু বীজ লাগানোতে সাহস বা ভরসা করতে পারছেনা। ধার দেনা, মহাজনি ঋণ নিয়ে চাষ করার পর যদি খরচ না ওঠে তখন সংসার নিয়ে ভাসতে হবে।
গোয়ালতোড়ের আমজোড়ের আলু চাষী অরুন মাঝি, সুবল রুইদাস, সনাতন দাসরা বলেন, রাজ্য সরকার গোয়ালতোড়ের দূর্গাবাঁধের বীজ খামার বন্ধ করে দিলো। শিল্প কারখানা করবে বলে বীজ খামারটাকে লাঠে তুলে দিলো গত সাত বছরে। তারপর থেকে কর্পোরেটের প্যাকেট বন্দী সবজি বীজ বিক্রি শুরু হলো। ধান আলু পাঠের বীজও দখল নিলো ফড়েরা। সেই থেকেই বীজের দাম প্রতি বছর বাড়ছে আর বাড়ছে। চাষীদের দাম পাওয়ার সময়ও সেই ফড়েরা নিয়ন্ত্রণ করে। কয়েকদিন আগেও কৃষক দরদী সাজার নাটক করে গিয়েছে শাসক দলের কর্মীরা । কিন্তু আমাদের দরকারের সময় তাদের পাচ্ছি না। কোনো নেতা মন্ত্রী বীজ সারের এতো দাম তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালো না।
গড়বেতার খড়কুশমার সাহানুজ খান, দেবু সিংহ, দেবল অধিকারী বলেন, আলুচাষের ফলন প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। কোনো ঝঞ্ঝাট না হলে, বীজের মানে কোনো গলদ না থাকলে প্রতি বিঘায় বড়ো জোর ৫০ কুইটাল আলু ফলে। তারপর ঘন কুয়াশা থেকে রক্ষা করতে তার জন্য আলাদা ঔষধ ব্যাবহার করতে হয়। এতে খরচ বাড়ে আবার নষ্ট হলে ফলনও কমে। তখন বাজার দর না পায় কৃষকরা তখন ঋণের জালে জড়িয়ে চাষীরা জমি জমা বিক্রি করে হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে। ফলে চাষীরা এমন সংকোটে পড়লেও সরকার নীরব। অথচ মহাজনের গোডাউনে লাট হয়ে রয়েছে পোখরাজ আলুর বীজ। যদি বীজের দাম না কমে তাহলে চাষীরা এবার আলু চাষ করবেন কিনা তা নিয়েও ভাবছেন।