পলাশ খাঁ, শালবনী : শনিবারের পর রবিবারও জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর স্বাক্ষী রইল শালবনি। গতকাল লক্ষ্মী প্রতিমা কিনতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিল এক প্রৌঢ়ের আর আজ সেই পুজোর জন্যই পরিবারের বাচ্চাদের তাড়াতাড়ি সময় দিতে ডিউটি সেরে বাড়ি যাওয়ার পথে মৃত্যু হল এক করোনা যোদ্ধার। রাতভর ডিউটি করার পর বাড়ি ফিরছিলেন। গতকাল লক্ষ্মী পুজো থাকা স্বত্ত্বেও ডিউটির কারণেই সময় দিতে পারেননি বাড়ির শিশুদের। তাদের অভিমান ভাঙাতে বাইকে পা রেখেই নিজের মোবাইল থেকে বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছিলেন, ‘এখুনি ফিরছি।’ কিন্তু না, ফেরা হলনা হরগোবিন্দের। কর্মক্ষেত্র আর নিজের বাড়ির মাঝ রাস্তায় নিয়ন্ত্রন হারানো এক লরির ধাক্কায় প্রাণ হারালেন শালবনী হাসপাতালের ওই করোনা যোদ্ধা। খবর আসার পরই শোকে ভেঙে পড়েছেন হাসপাতালের করোনা সহকর্মী অন্য যোদ্ধারা। শোকের ছায়া নেমে এসেছে শালবনির জঙ্গল ঘেরা গ্রাম শালডহরা গ্রামে।
শনিবার সাত সকালে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার স্বাক্ষী রইল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনি থানার
৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের ওপর সুন্দরা বলে একটি জনপদ। শুক্রবারের পর শনিবারও রয়ে গেছে লক্ষীপুজোর রেশ। সুন্দরার অধিবাসীরাও সকাল সকাল সেই পুজোর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলেন তখনই ঘটে যায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। মৃত ওই করোনা যোদ্ধার নাম হরগোবিন্দ মাহাতো (৩৮)। বাড়ি শালবনীর শালডহরা গ্রামে। জানা গেছে পরিবারের অন্য সদস্য ছাড়াও স্ত্রী ও ৮ ও ৩ বছরের দুটি পুত্র সন্তান রয়েছে তাঁর।
স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে এদিন শালবনী করোনা হাসপাতালে নাইট ডিউটি সেরে নিজের সাইকেলে করেই বাড়ির দিকে রওনা হয়েছিলেল হরগোবিন্দ। কিন্তু একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবেন বলে চলে যান পার্শ্ববর্তী গাইঘাটাতে। সেখানে নিজের পরিচিত এক ব্যক্তির কাছ তাঁর বাইকটি চেয়ে নেন বাড়ি ফেরার জন্য। এরপর বাইকে পা রেখেই চাবি ঘুরিয়ে বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দেন এখুনি ফিরছেন তিনি। কিন্তু তিনি বুঝতেই পারেননি বাড়ির সঙ্গে সেটাই তাঁর শেষ কথা ছিল। যে কোনও কারনেই হোক হয়ত কিছুটা অন্যমনস্ক ছিলেন তিনি। সুন্দরার কাছে একটি ১৪ চাকার গ্যাস ট্যাঙ্কার পেছন দিকে পিছিয়ে নিজের স্থান পরিবর্তন করছিল। হরগোবিন্দ সোজা তার পেছনে গিয়ে ধাক্কা মেরে রাস্তার ওপর ছিটকে পড়েন। আর তার ওপর দিয়েই চলে যায় গাড়িটি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার৷
দুর্ঘটনার জেরে জাতীয় সড়কে কিছুক্ষণ যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে শালবনী থানার পুলিশ। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। পুলিশ গ্যাস ট্যাঙ্কার টিকে আটক করেছে৷ আকস্মিক এই ঘটনায় এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এদিকে ঘটনার জন্য যানজটের সমস্যাকেই দায়ী করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের মতে সুন্দরার স্থানীয় হোটেল এবং ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ীদের জন্য রাস্তার দুপাশে লম্বা সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে লরি, গ্যাস ট্যাংকার। যারা হঠাৎ করেই উঠে আসে রাস্তার ওপর। আর সেই সময় পথ চলতি বাইক, সাইকেল আরোহী কিংবা অন্য গাড়িও দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ওই এলাকায় যান নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা নেই। যদি থাকত তবে এই দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হত।
শালবনি থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ গোপাল সাহা জানিয়েছেন, “থানার প্রায় ২০কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই জাতীয় সড়ক। শিল্পাঞ্চল বলে পণ্যবাহী গাড়ির ভিড় লেগেই থাকে। আমরা সড়কের পাশে থাকা হোটেল গুলোর মালিকদের সঙ্গে কথা বলছি যাতে তাদের হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যান গুলিকে তারাই নিয়ন্ত্রন করে কারন একটা বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে আমরা কাজ করি, সিভিক, পেট্রলিং ভ্যান, ইত্যাদি থাকার পরও এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যায়। তাই বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”