নিজস্ব সংবাদদাতা: নামে তালপুকর কিন্তু ঘটি ডোবেনা। বাহারি নাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল কিন্তু মাসের পর মাস গড়িয়ে বেতন জোটেনা স্বাস্থ্যকর্মীদের। জনগণকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে তাঁদের নাম স্বাস্থ্যকর্মী কিন্তু নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্য বন্ধক দেওয়া আছে কর্পোরেট কন্ট্রাক্টরের হাতে। দিন আনি দিন খাই টাইপের দিন মজুরিতেই কাজ যদিও বেতন কাঠামোয় কোনও পরিবর্তন নেই শুরু থেকে ৪বছর পরে। দিন মজুরেরা অন্তঃত সপ্তাহে বেতন পান, না হলেও তিরিশ দিনে কিন্তু এঁরা ১২০দিন গড়িয়ে একবার। নেই সরকার ঘোষিত বোনাস। পিএফ কারও আছে কারও নেই। বাড়িতে পরিবার পরিজনের অসুখ বিসুখ কিংবা নিজের হলেও ছুটি নেই। নো ওয়ার্ক নো পে। এঁদের দাবি আর সব জেনেও নিশ্চুপ স্বাস্থ্য অধিকর্তা সহ রাজ্য প্রসাশন। দেখেও দেখেনা সরকার। অসহায় জীবন যন্ত্রনায় মরার আগে মৃত্যুর অনুমতি চেয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শাসকের কাছে আবেদন করলো জেলার চার শতাধিক স্বাস্থ্যকর্মী।
জেলার তিনটি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে কর্মরত ৪৭৬ জন এমন কর্মী গত চার বছর ধরে ন্যূনতম মজুরী পাচ্ছেন না। সৈকত মাইতি, সঞ্চয় ভট্টাচার্য, মানিক সামন্ত, সন্তু গিরি এমন কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের একটাই দাবী পরিবারের মুখে দুবেলা অন্ন টুকু তুলে দেওয়ার ব্যাবস্থা করুক সরকার। কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত সংস্থার অধীন ঠিকা শ্রমিকের ন্যায় তারাও নামে স্বাস্থ্যকর্মী। বেতন একশ দিনের কাজের মজুরীর চেয়েও কম।
পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায় পাঁচটি এবং সারা রাজ্যে ৪২ টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে কর্মরত সমস্ত কর্মীদের এমনই অবস্থা। এমন কর্মীরা বলেন গ্লোবাল ঠিকাদারী সংস্থার অধীনে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে তাঁদের নিয়োগ। বেতন বা মজুরি কাউকে সাত হাজার, আবার কাউকে আট নয় হাজার। স্থায়িত্বের কোনো নিশ্চয়তা নেই। পি এফ, ভবিষ্যৎ নিধি বা সামাজিক সুরক্ষার কোনো বালাই নেই। এই ঠিকাদার সংস্থার মালিক বা তার ঠিকানা অন্ধকারে। এখনোও পর্যন্ত তার হদিস বলতে চোখে দেখেননি এমন কর্মীরা।
গত চার বছরে সেই একই মজুরীতে কাজ করতে হয়। বছরে ৩৬৫ দিনই কাজ করতে হয়। কোনো ছুটি নেই।ওভার টাইম বলে কিছু হয়না। নাইট টিউটির পর আবার মর্নিং টিউটিও করতে হয়। আবার দিনের বেলায় টিউটি শুরু হলে মধ্যরাতে শেষ হয়। চার বছরে দশটা টাকাও মজুরি বাড়েনি। প্রতিকার চাইলে কাজ ছেড়ে দেওয়ার হুমকি। এমন জুলুমবাজির দেখারও কেউ নেই। বক্তব্য শোনারও কেউ নেই। স্বাস্থ্য অধিকর্তা থেকে রাজ্য প্রসাশনও নীরব।
পিঠের উপর এমন অসহ্য কিল যন্ত্রনা সহ্য করতে করতে পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। এমন ঠিকাদার মালিক কে কেনো প্রশ্রয় দিয়ে প্রসাশন কেনো অন্তরালে লালন পালন করছে তার উত্তরও অজানা এমন কর্মীদের। গত এক বছর ধরে নবান্ন, স্বাস্থ্য মুখ্য অধিকর্তা সহ প্রসাশনের সর্বোচ্চ স্তরে জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি। কর্মীরা বলেন যখন সরকারী কর্মীরা প্রতিমাসে বেতন পান তখন এমন কর্মীরা ৫৫-৫৮ দিনের মাথায় বেতন পান। চার মাসে দুবার বেতন তো দু মাসের বকেয়া।
এমন কর্মীরা মহামারিতেও সাহসিকতার সাথে করোনা যোদ্ধা হয়ে কাজ করছেন। আক্রান্ত হয়ে নেগেটিভ রিপোর্ট হলেই বিশ্রামের জন্য কোনো ছুটি নেই। কাজ করতে হয়। নইলে বেতন কাটা যায়। এই সময়ে ট্রেন, বাস চলাচল নেই। অতিরিক্ত খরচ বা বাইক ছুটিয়ে কাজে সময় মতো যোগদান করতে হয়। খরচ বেড়েছে আগের চেয়ে দেড়গুন দ্বিগুন। তারপর মাস পয়লা বেতন নেই। ফলে সংসার চালাতে হাতে যে সামন্যটুকু থাকে তা দিয়ে বাবা মা সহ নিজের পরিবারের চার পাঁচজনের সংসারই চলে না। তাই স্বেচ্ছা মৃত্যুর আবেদন।
আবেদনকারীদের বক্তব্য, আমরা আন্দোলন করতে পারিনা কারন তাতে আমাদের মাননীয়া মূখ্যমন্ত্রী অস্বস্তিতে পড়বেন। আমরা চাইনা সাম্প্রদয়িক সরকার ক্ষমতায় আসুক। আমরা অপদার্থ, স্বাস্থ্যকর্মী নামের গালভরা চাকরি করে পিতা মাতা স্ত্রী সন্তানকে নূন্যতম স্বাচ্ছন্দ্য দিতে পারিনা। তাই মরতে চাই, মরে অন্ততঃ বলে যেতে যাই যে আমরা স্বাস্থ্যকর্মী ছিলাম।