এই ভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শিক্ষিকাকে |
নিজস্ব সংবাদদাতা: বোধহয় স্মরণাতীত কালের সব চেয়ে বড় বর্বরতার স্বাক্ষী রইল পশ্চিম বাংলা! এক হাট লোকের সামনে এক শিক্ষিকাকে হাত পায়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাস্তার ওপর দিয়ে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে নিয়ে চলল তৃণমূলের নেতা কর্মীরা। সঙ্গে জান্তব উল্লাস আর নোংরা গালি গালাজ। উত্তর প্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড নয়, ঘটনা পশ্চিম বাংলার যে বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা!
বাঁধা হচ্ছে হাতে পায়ে দড়ি |
শুক্রবার দক্ষিন দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের ওই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে আগুনের মত, ধিক্কারের বন্যা বয়ে যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাড়াহুড়ো করে বহিস্কার করা হয়েছে ওই অভিযুক্ত নেতাকে। জানা গেছে ব্যক্তিগত জমির উপর দিয়ে সরকারি রাস্তা তৈরি নিয়েই শুরু সমস্যার যার পরিনতিতেই ওই শিক্ষিকাকে প্রকাশ্য রাস্তায় দল বেঁধে হেনস্থা। পায়ে দড়ি বেঁধে রাস্তার উপর দিয়ে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে শিক্ষিকাকে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পুরো ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন তৃনমূল নেতা ও স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের। অভিযোগ আরও যে থানা প্রথমে অভিযোগ তো নিতে চায়নি, উল্টে শিক্ষিকার বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের হয়েছিল।
গোলমালের সূত্রপাত একটি রাস্তা তৈরিকে কেন্দ্র করে। নন্দনপুর থেকে হাপুনিয়া পর্যন্ত রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। যে শিক্ষিকাকে হেনস্থা করার ভিডিয়ো সামনে এসেছে, তিনি জানিয়েছেন, ওই রাস্তার খানিকটা অংশ তাঁর ব্যক্তিগত জমির উপর দিয়ে তৈরি করতে চাইছিল পঞ্চায়েত। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ১২ ফুট চওড়া জমি ছাড়তে চেয়েছিলাম। বলেছিলাম বাকি ১২ ফুট অন্য পাশ থেকে নিতে। কিন্তু পঞ্চায়েত ২৪ ফুট রাস্তাই আমার জমির উপর দিয়ে বানাবে। তাতে আমি বাধা দেওয়ায়, উপপ্রধান অমল সরকার এবং তাঁর লোকজন আমাকে আর আমার দিদিকে রাস্তায় ফেলে মারধর করল। পায়ে দড়ি বেঁধে রাস্তা দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে গেল।’’
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
যে ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে, একটি নির্মীয়মাণ রাস্তার উপরে বসে রয়েছেন দুই মহিলা। অনেকে তাঁদের ঘিরে রয়েছেন। তার পরে একটি ট্রাক্টর নিয়ে এসে প্রথমে তাঁদের ভয় দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু ট্রাক্টর দেখেও তাঁরা না ওঠায়, বেশ কয়েক জন মিলে চড়াও হচ্ছেন এক মহিলার উপরে। দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলা হচ্ছে তাঁর দুটো পা। তার পরে চ্যাংদোলা করার ভঙ্গিতে দু’টো হাত ধরে রাস্তার উপর দিয় হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে নিয়ে গিয়ে একটি টিনের ঘরের সামনে বেঁধে রাখা হচ্ছে তাঁকে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
এর পরে রাস্তার উপরে বসে থাকা দ্বিতীয় মহিলাকেও টেনে-হিঁচড়ে সেখানে এনেই ফেলা হচ্ছে। এই দ্বিতীয় মহিলাকে বাঁধা হয়নি বলে তিনি ফের রাস্তায় নেমে যাচ্ছেন। তখন আছাড় মেরে তাঁকে রাস্তার ধারে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। তার পর লাঠি দিয়ে মারা হচ্ছে। সঙ্গে চলছে অশ্রাব্য গালিগালাজ। ভিডিয়োটি ছড়িয়ে পড়ার পরে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যে মহিলাকে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তিনি একটি স্কুলের পার্শ্বশিক্ষিকা। আর দ্বিতীয় যে মহিলাকে দেখা গিয়েছে, তিনি ওই পার্শ্বশিক্ষিকার দিদি।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
আক্রান্ত শিক্ষিকার দাবি, পুলিশ প্রথমে তাঁর অভিযোগ নিতে চায়নি। উল্টে শান্তিভঙ্গের নালিশের ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। হাসপাতাল থেকে ফেরার পরে তিনি ফের থানায় অভিযোগ করতে যান। দ্বিতীয় বারে পুলিশ তাঁর অভিযোগ নিয়েছে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
তৃণমূল অবশ্য এই ঘটনার দায় স্বীকার করে উপপ্রধান অমল সরকারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে দল থেকে। বালুরঘাটের প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তথা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেত্রী অর্পিতা ঘোষ বলেছেন, ‘‘যে অভিযোগ ওই উপপ্রধানের বিরুদ্ধে উঠেছে, তার প্রেক্ষিতেই আমরা ওঁকে সাসপেন্ড করেছি। প্রশাসনকে বলেছি তদন্ত করে দেখুন। তদন্তে কী উঠে আসে তা দেখে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’’
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
অন্যদিকে বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের দাবি, ওই শিক্ষিকা এবং তাঁর পরিবার বিজেপির সমর্থক। সেই কারণেই তাঁদের জমির দখল নিয়ে রাস্তা তৈরির চেষ্টা চলছে বলে বিজেপির অভিযোগ। সাংসদের কথায়, ‘‘নন্দনপুরে যে ঘটনা ঘটেছে, তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানাচ্ছে। মহিলাদের উপরে প্রকাশ্যে এই রকম নির্যাতন কোনও রাজনৈতিক দল কী ভাবে করতে পারে, আমার জানা নেই। মহিলাদের এই সম্মানহানিই বলে দিচ্ছে এ রাজ্যের শাসকের পতন আসন্ন।’’
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষও তীব্র নিন্দা করেছেন গঙ্গারামপুরের ঘটনার। তিনি বলেছেন, ‘‘গোটা দক্ষিণ দিনাজপুরেই তো এই রকম চলছে। কিছু দিন আগেই কুমারগঞ্চে এক কিশোরীকে গণধর্ষণ করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বার গঙ্গারামপুরে শিক্ষিকাকে রাস্তার উপরে হেনস্থা। আইনের শাসন বলতে কিছুই নেই। রয়েছে শুধু সিন্ডিকেট আর টাকার বখরা।’’