Homeএখন খবরতোমার জন্য কিছুই করতে পারিনি! প্রিয় সন্তানের জন্য কাঁদছে খড়গপুর

তোমার জন্য কিছুই করতে পারিনি! প্রিয় সন্তানের জন্য কাঁদছে খড়গপুর

নিজস্ব সংবাদদাতা: সেই ১৫০জনের তালিকা এখনও তার মোবাইলে লোড করে রাখা আছে। সেই মানুষদের কেউ চেনেনা, জানেনা। তাঁদের কেউ যুবক, কেউ কিশোর, কেউ প্রৌঢ় এমনকি বৃদ্ধ। খড়গপুর শহরের ইন্দা, নিমপুরা, মালঞ্চ, কৌশল্যা, ঝাপেটাপুর সহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা থাকেন। তাঁদের তালিকা আছে খড়গপুর পৌরসভা, খড়গপুর মহকুমা হাসপাতাল আর তাঁর মোবাইলে। এই ১৫০জন যক্ষা বা টি. বি আক্রান্ত। সবার মধ্যেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই মানুষ গুলোকে ওষুধ দেওয়া, ইঞ্জেকশন দেওয়া আর পরামর্শ দেওয়ার কাজ করতেন বুধবার রাতে শালবনী হাসপাতালে চির ঘুমে তলিয়ে যাওয়া ৩৭বছরের সুমন দে। সুমনকে সবাই রাজা বলেই চেনে। এই রাজকেই তাঁর বন্ধুরা বলত, ‘এখন এই করোনার সময় কাজটা বন্ধ রাখ।’ উত্তরে সে বলত, ‘আমি কাজ বন্ধ রাখলে ওদের কে দেখবে?’ কাজ বন্ধ রাখেনি রাজা। যার যখন ওষুধ কিংবা ইঞ্জেকশন দরকার DOT বা ডাইরেক্ট অবজার্ভ ট্রিটমেন্টের আওতায় সেই কাজ করতেন রাজা।

যেহেতু এই সমাজ এখনও TB রোগিদের ভাল চোখে দেখেনা। তাই এঁদের নাম পরিচয় গোপন রাখা হয়।এরা কেউ আমাদের ভাই, বোন, বন্ধু। আমরা এদের চিনিনা কিন্তু রাজা এদের চিনত। খড়গপুর শহরের ইন্দা এলাকার সেরকমই এক যুবক জানালেন, ” প্রায় ভাল হয়ে গেছি আমি। এখন সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করি। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারি। আমাকে TB র হাত থেকে ফিরিয়ে এনেছে রাজাদা। নিয়ম করে প্রথমে সপ্তাহে পরে মাসে একবার বাড়িতে আসতেন। রাজাদার বিয়ের ঠিক আগের দিনও পিপিই কিট পরে এসে আমাকে ওষুধ দিয়ে গেছিলেন। ওষুধটা রাজাদার সামনেই খেতে হত।”

ইন্দা বিদ্যাসাগরপুর অঙ্কুশ ক্লাবের সম্পাদক, শহরের বিশিষ্ট চিত্র সাংবাদিক সৈকত সাঁতরা বলেছেন, “সবার জন্য কাজ করে গেল ছেলেটা কিন্তু কী আশ্চর্য দেখুন ওর জন্য কাউকে কিছুই করতে দিলনা! এমন মারন ব্যাধি ওকে কেড়ে নিল যে ওকে কাঁধে বয়ে শ্মশান নিয়ে যাওয়ার সুযোগও পেলামনা আমরা। এই আক্ষেপ আমরা কোথায় রাখব? গোটা অঙ্কুশ ক্লাব, বিদ্যাসাগরপুর, ইন্দা প্রাণহীন হয়ে গেল!”

বিদ্যসাগরপুর দক্ষিনা কালী মন্দিরের পুরোহিত সোমনাথ ভট্টাচার্য জানান, “রাজা ছাড়া এই মন্দিরের সমস্ত আয়োজন কে করবে? আমি তো শুধু পূজা করি কিন্তু মায়ের উপাসনার সমস্ত আয়োজন যে রাজা ছাড়া অসম্ভব। সমস্ত ব্যস্ততার মধ্যেও সমস্ত দিক নজরে রাখত ও। সামনেই শারদোৎসব, মায়ের বড় পুজা, রাজাকে বাদ দিয়ে এ পুজো হবে কী করে?
ঠিক বিয়ের দিনটাতেই বিধবা হয়েছেন রাজার ১মাসের বিবাহিতা স্ত্রী। হাহাকার করে বলছেন, ‘এ তুমি আমাকে কোথায় রেখে গেলে? তুমি যে দিন রাত আমাদের ছেড়ে বাকি সবাইকে নিয়ে পড়ে থাকতে! তাহলে কেউ তোমাকে ভাল করতে পারলনা কেন?’

অঙ্কুশ ক্লাবের ছেলেরা দাঁড়াতেই পারছেননা শোকার্ত দুই নারীর কাছে। খুব অল্প বয়সে স্বামীকে হারিয়ে একাই রাজাকে মানুষ করেছেন মা কাজল দে। মা আর ছেলের সেই আপত্য ভেঙে খান খান করে দিয়েছে করোনা। শোকে পাথর হয়ে গেছেন মানুষটা। মাত্র ১মাস আগে ছেলের বিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, “এবার আমি দায়িত্বমুক্ত রাজা। এতদিন তুই আমার কাছে ছিল, এবার আমি তোর কাছে থাকব।” মজা করে বলেছিলেন, ” আমাকে দেখবি তো রাজা? আমার যে আর কেউ নেই!” কোথায় রাজা? দুনিয়া জুড়ে শুধুই শুন্য চরাচর। শুধুই ফাঁকা হয়ে যাওয়া একটা পৃথিবী, ওই ও পাশে কিছুই দেখা যায়না, চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।

RELATED ARTICLES

Most Popular