শশাংক প্রধান: মর্মান্তিক ও ভয়াবহ ঘটনার স্বাক্ষী থাকলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা থানার একটি গ্রামের বাসিন্দারা। চোখের সামনেই দেখলেন বাড়ির দরজা বন্ধ করে জানলা খুলে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছেন এক ৩০ বছর বয়সী যুবক। ঘটনা আরও মারাত্মক যে প্রতিবেশীরা পুলিশকে জানিয়েছেন ওই ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন স্ত্রীকে দেখিয়েই। ঘটনার স্বাক্ষী থেকেছেন ওই যুবকের বৃদ্ধা মাও। ঘটনা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মৃত ওই যুবকের নাম সূর্যকান্ত শিট। পিংলা থানার জামনা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত শালমারা গ্রামের বাসিন্দা যুবক পিংলা থানারই বাগনাবাড় হাইস্কুলের গ্রুপ ডি পদে চাকরি করতেন। বছর চারেক হল বিয়ে হয়েছে যুবকের এবং তাঁদের একটি ৩ বছরের কন্যা সন্তান রয়েছে। মা, স্ত্রী আর ছোট শিশু কন্যা এই তিন জনকে সংসার ছিল সূর্যকান্তর। প্রথম কয়েক বছর সুখের সংসার থাকলেও সম্প্রতি দাম্পত্যে ভর করেছিল অশান্তির ভূত।
নিত্য নিয়মিত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনও এক অজ্ঞাত কারনে অশান্তি লেগেই থাকত যদিও কী কারনে এই অশান্তি তা এখনও জানতে পারেনি পুলিশ কারন শোকে মুহ্যমান সূর্যকান্তের বৃদ্ধা মা কথা বলার মত অবস্থায় নেই। অন্যদিকে সদ্য এই ঘটনায় স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা যাচ্ছেনা। স্থানীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছে যে বেশ কিছুদিন যাবতই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন ওই কর্মী।
ইদানিং মুহ্যমান হয়ে থাকতেন সূর্যকান্ত।স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই অশান্তি হত শুক্রবার রাতে সেই অশান্তি চরমে ওঠে। ঝগড়া চলার সময় হঠাৎই সূর্যকান্ত পাশের ঘরে চলে যায় এবং দরজা লাগিয়ে দেয়। এরপর ঘরের জানলা খুলে দিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘দেখে যা আমি সুইসাইড করছি।’ বলতে বলতে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে কাপড়ের এক প্রান্ত বেঁধে অন্য প্রান্ত ফাঁস দিয়ে গলা ঢুকিয়ে ঝুলে পড়ে যুবক। ঘরের মধ্যে আলো জ্বালাই ছিল। ঘটনা দেখতে পেয়ে স্ত্রী চিৎকার শুরু করে দেন। কান্না কাটি শুরু করে দেয় যুবকের মাও।
পুলিশের এক আধিকারিক জানান, গ্রামের দিকে মানুষ একটু তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েন। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে বিষয়টা বুঝে বা না বুঝেই প্রতিবেশীদের আসতে দেরি হয়। ততক্ষনে ঝুলে পড়েছেন সূর্যকান্ত। কিন্তু প্রতিবেশীরা আসা পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন যুবক। প্রতিবেশীরা জানলা দিয়ে যখন দেখনে তখন ঝুলতে ঝুলতে শ্বাস নেওয়ার জন্য কেঁপে উঠছিল যুবকের দেহ। ওই ভাবে ঝুলতে ঝুলতে কাঁপতে থাকা দেহ দেখে অজ্ঞান হয়ে ঘটনাস্থলে পড়েও যান এক প্রতিবেশী। কয়েকজন প্রতিবেশী মিলে দরজা ভেঙে উদ্ধার করে তড়িঘড়ি পিংলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
খবর পেয়েই প্রথমে হাসপাতাল থেকে দেহ সংগ্ৰহ করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক ভাবে তদন্তের কাজ শুরু করেছে।
এদিকে ঘটনার পরই ভয়ে আত্মগোপন করেছেন যুবকের শ্বশুরবাড়ির কয়েকজন বিশেষ করে স্ত্রীর ভাইরা ফলে ওদিকে বিশেষ খোঁজ খবর নেওয়া যায়নি। এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে বাগনাবাড় স্কুলে করোনার কারনে সীমিত পরিসরে আয়োজিত শিক্ষক দিবসের আয়োজন বাতিল করা হয়েছে। বাগনাবাড় স্কুলের এক কর্মী জানিয়েছেন বুধবারও স্কুলে এসেছিলেন উনি। স্বাভাবিক কথাবার্তাই হয়েছে। মনের মধ্যে ঝড়ের কোনও আভাস পাইনি।