নিজস্ব সংবাদদাতা: লকডাউন আর করোনা কেড়ে নিয়েছে বাজার। খুচরো থেকে পাইকারি কোনও খরিদ্দারই তাঁদের গ্রামের ত্রিসীমানা মাড়ায়নি। ক’দিন পরেই পুজো কিন্তু তাতেই নড়াচড়া নেই বাজারের। পেটে গামছা বেঁধে পড়ে থাকার সময় যেন এখন। কিন্তু তারই মধ্যে হঠাৎই আলোর মুখ খুঁজে পেলেন পট শিল্পীরা। যে করোনা তাঁদের রুটি রুজি কেড়ে নিয়েছে বিগত চার মাস সেই করোনাকেই হাতিয়ার করলেন পট শিল্পীরা। করোনা কালে আরও কয়েক বছর মাস্ক ব্যবহার করতে হবে সবাইকে। হয়ত বা এটাই হয়ে গেল সারা জীবনের সঙ্গী। তাই নিজেদের পটচিত্র দিয়ে সুদৃশ মাস্ক বানিয়ে,তা বিপণণ করে নিজেদের সংসার চালানোর উপায় হিসাবে ব্যবহার করার প্রক্রিয়া শুরু করলেন পূর্ব মেদিনীপুরের পটশিল্পীরা।
পূর্ব মেদিনীপুরের “পটের গ্রাম” হিসেবে পরিচিত চন্ডীপুর, হবিচক,নানকারচক এর প্রায় দেড় শতাধিক পটশিল্পী।করোনার জেরে রাজ্য জুড়ে সমস্ত মেলা ও উৎসব হারিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে দাঁড়িয়ে কেউ বাধ্য হয়েছে কোদাল ধরতে,আবার কেউ একশো দিনের কাজ করছেন। এবার তারই পাশাপাশি তাঁদের চিরায়ত রোজকারের পদ্ধতি পট শিল্পকেই আশ্রয় করলেন ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টায়। এবার পটের চিত্র সম্বলিত মাস্ক তৈরি করে বিক্রি শুরু করছেন আবেদ চিত্রকর, সায়েরা চিত্রকর,রিজিয়া চিত্রকর,আলেকজান্ডার পটিদার প্রমুখরা।
এই অভিনব ভাবনাটি অবশ্য স্থানীয় শ্যামসুন্দরপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অরুনাংশু প্রধানের। পরিস্থিতির বাধ্য বাধকতায় পরিস্থিতিকেই ব্যবহার করার ভাবনার নায়ক অরুনাংশু প্রধান
জানান, এই সংকটময় পরিস্থিতিতে এদের হাতের তৈরি মাস্ক বিক্রির জন্য সহায়তা নিয়েছি ফেসবুকের।এর মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গা থেকে ভালোই সাড়া মিলছে।অর্ডার অনুযায়ী ক্রেতার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে অভিনব মাস্ক।পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটুয়াদের হাতের তৈরি একটা লৌকিক ঘরানার মাস্ক ছড়িয়েছে পড়ছে চারিদিকে।এই মাস্ক সম্পূর্ণ কাপড়ের তৈরি। এটা ব্যবহারের পাশাপাশি বাড়িতে সাজিয়ে রাখা যাবে বলে জানাচ্ছেন এই পট শিল্পীরা।
আবেদ চিত্রকর জানান, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদিয়ার, মহিষাদল, তমলুক,নন্দীগ্ৰামের পাশাপাশি কলকাতা ও অন্যান্য জায়গা থেকেও অর্ডার আসছে।ফলে এই সংকটময় পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও রোজকারের দিশা খুঁজে পেয়েছেন জেলার পটশিল্পীরা।
মাস্টারমশাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন রিজিয়া, সায়েরা প্রমুখরা। বলেছেন, এই চরম সঙ্কটের মুখে মাস্টার মশাইয়ের ভাবনা শুধু আমাদের আয়ের আশাই দেখাননি পাশাপাশি আমরা ফিরে যেতে পেরেছি আমাদের কাজের জগতে, পেশার জগতে।