ওয়েব ডেস্ক : শুনলে মনে হবে কোনো সিনেমার ক্লাইম্যাক্স, অথচ একেবারে সত্যি ঘটনা। সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক অশান্তির জেরে বছর ছয়েক আগে দাদাকে খুন করে মাটির তলায় পুতে রেখেছিল দুই ভাই। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে অনুশোচনা তত বেড়েছে৷ এর জেরে বিবেকের তাড়নায় শেষমেশ শুক্রবার রাতে থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে মেজো ও ছোটো ভাই। থানায় গিয়ে পুলিশকে গোটা ঘটনা জানাতে স্বাভাবিকভাবেই হতবাক জগদ্দল থানার পুলিশ৷ এরপর অভিযুক্তদের বয়ান অনুযায়ী তাদের বাড়ীর মাটি খোঁড়া হলে সেখান থেকে দাদার কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। শনিবার সকালে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় উত্তর ২৪ পরগণার শ্যামনগরের আদর্শপল্লী এলাকায়।
জানা গিয়েছে, আদর্শপল্লীর বাড়িতে তিনভাই এক সাথেই থাকতেন। কিন্তু বছর ছয়েক আগে বাবা-মার মারা যাওয়ার পর বছর থেকেই তাদের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে প্রায়সই অশান্তি লেগেই থাকতো৷ ২০১৪ সালে ৯ ই ডিসেম্বর। বড়ো ভাই নিপু শীলের সাথে মেজো ভাই অপু শীলের ব্যাপক অশান্তি হয়। অশান্তি এক সময় হাতাহাতিতে পৌঁছায়। এরপর প্রতিবেশীরাই তাদের হাসপাতালে ভর্তি করেন৷ এমনকি তারাই দুই ভাইকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে আসেন৷ কিন্তু পরের দিন অর্থাৎ ১০ ডিসেম্বর ২০১৪, সকাল হতেই স্থানীয়রা দেখেন তাদের বাড়ির দরজায় তালা ঝুলছে৷ প্রথমদিকে স্থানীয়রা অবাক হলেও সেভাবে মাথা ঘামায়নি।
বছর ছয়েক এলাকায় দেখা না গেলেও কয়েকমাস মাস ধরে মাঝে মধ্যেই মেজ ভাই অপুকে এলাকায় দেখা যেত। কিন্তু বাড়িতে আসত না সে। এরপর শুক্রবার সকালে আচমকা তাকে বাড়ির সামনে ঘোরাফেরা করতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে জিজ্ঞেস করেন তার বাকি দুই ভাই কোথায়? সেসময় অপু জানায়, তার দুই ভাই ভীন রাজ্যে কাজে গেছে৷ সেই সাথে অপু আরও জানায় এবার থেকে সে এই বাড়িতেই থাকবে৷ কিন্তু সেকথা শোনামাত্রই প্রতিবেশীদের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় যদি তিন ভাই একসাথে থাকেন তবেই বাড়িতে থাকতে দেওয়া হবে৷ এরপর সে ছোটো ভাই তপুকে ফোন করে শনিবার সকালেই জগদ্দল থানায় পৌঁছে দাদাকে খুন করার ঘটনা সমস্ত জানিয়ে দুজনেই আত্মসমর্পণ করেণ।
পুলিশ সূত্রে খবর, পারিবারিক সম্পত্তির বিবাদে খুন করেছিল নিপু শীলকে তার দুই ভাই অপু শীল ও তপু শীল। এরপর এলাকা ছেড়ে চলে যায় দুই ভাই। কিন্তু মেজোভাই অপু শীল মাঝেমধ্যেই এই বাড়িতে আসত জঙ্গল পরিষ্কারের নাম করে। জঙ্গল পরিষ্কার করে চলে যেত। এদিন থানায় নিজেদের অপরাধের কথা স্বীকার করে তারা বারংবার বলতে থাকে দাদাকে তারাই খুন করেছে। মাটি খুঁড়লেই কঙ্কাল পাওয়া যাবে৷ এরপর তাদের কথা মতই জগদ্দল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মাটি খুঁড়ে কঙ্কাল উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠান। সাত সকালে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই হতবাক এলাকার বাসিন্দারা৷ তবে ছ’বছর আগে খুন করে হঠাৎ কেন দুই ভাই থানায় আত্মসমর্পণ করতে গেলেন? আদেও কি বিবেক দংশন নাকি যেই সম্পত্তির জন্য এতকিছু তা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাতেই থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করলেন দুই অভিযুক্ত? তা নিয়েই উঠছে একাধিক প্রশ্ন।