ভীষ্মদেব দাশ, খেজুরিঃ আগষ্ট পেরিয়ে সেপ্টেম্বর পড়ার মুখেও ধোঁকা দিয়ে চলেছে ইলিশ। বাজারে ইলিশের যোগান এতটাই কম যে অতিরিক্ত দামের কারনে মধ্যবিত্তর পাত থেকেও লাফ দিয়ে ইলিশ পালাচ্ছে মোটা অংকের কামাই করিয়ের পাতে। এই অবস্থায় এ মরসুমের আফসোস না হয় বাগদা কিংবা গলদায় মিটিয়ে নেবে ভাবছিল বাঙালি কিন্তু বিধি বাম সেখানেও !পরপর নিম্নচাপ প্রবল বৃষ্টি আর উপকূলবর্তী এলাকায় কোটাল জনিত কারনে প্রবল জলস্ফীতির ফলে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি,ভূপতিনগর, খেজুরি এবং নন্দীগ্রাম এলাকার ভেড়ি গুলির একটি বড় অংশই ভেসে গিয়েছে । এই ভেড়িগুলির ব্যাপকতম অংশেই চিংড়ির চাষ হয় যেগুলির উপর দিয়ে বয়ে গেছে উপকূলবর্তী নদী বা খালের উপচে পড়া জল, ভাসিয়ে নিয়ে গেছে অন্যান্য মাছের সাথে চিংড়ি মাছের পোনা বা চারা। ফলে মৎস্য চাষীদের যেমন বড়সড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে তেমনই চিংড়ির আকাল হতে চলেছে বাঙালির পাতেও।
গত এক দশকে চাষের কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে উপকুলবর্তী এলাকায়। লাগাতার ধান চাষে সঙ্কট, ঝুঁকি, ফসলের দাম না পাওয়া ইত্যাদি কারনে কৃষক চাষের ধরনে পরিবর্তন এনেছেন। কেউ নিজে অথবা কেউ অন্য কারও হাতে টাকার বিনিময়ে জমি তুলে দিয়েছেন ভেড়ি চাষিদের হাতে। চাষের জমিগুলি বদলে গিয়েছে ভেড়িতে। মোটা টাকার আর্থিক চুক্তিতে জমির মালিকরা ভেড়ি চাষিদের জমি দিয়েছেন। এরপর সেই জমিতে মাটি কেটে চিংড়ি চাষের ভেড়ি বানানো হয়েছে। সম্প্রতি প্রবল বৃষ্টির ফলে নদীর জলে প্লাবিত হয়েছে একাধিক ভেড়ি। যারফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ভেড়ির মালিকরা। বেশ কয়েকদিন ধরে একটানা বৃষ্টিতে সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার ফিশারি গুলো প্লাবিত হয়েছে।
গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মত এই সময় ভেনামি চিংড়ি তে রোগসংক্রমণ প্রবলভাবে দেখা দিয়েছে। টানা ঝিরঝির বৃষ্টি, মেঘলা আবহাওয়া, সূর্যালোকের তাপমাত্রা না থাকায় ভেনামি চিংড়িতে রোগ সংক্রমণ প্রবলভাবে বেড়ে গেছে। সেই কারণে চাষিরা নাস্তানাবুদ হয়ে পড়েছেন। ফলে চাষের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন মাছ চাষিরা। এইভাবে একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে পাড় ভেঙ্গে ক্ষয়ক্ষতি অন্যদিকে রোগ সংক্রমণের ফলে চাষের ক্ষতি। দুদিক থেকেই চাষিরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
ব্লক কৃষিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী খেজুরি-২ ব্লকে মোট ১১ হাজার ৪৮০ হেক্টর চাষযোগ্য জমি রয়েছে। যার মধ্যে ৩৬৫হেক্টর জমি জুড়ে ভেড়ি চাষ হচ্ছে। খেজুরি-১ ব্লকেও ভেড়ির চাষ সমপরিমান। এই জমির বেশিরভাগ অংশে দোফসল ধান চাষ হয়। এর পাশাপাশি বেশ কিছু অংশে সব্জি চাষও হয়। কিন্তু ধানচাষ সহ সব্জি চাষে কম লাভ থাকায় কৃষকরা মাছ চাষের জন্য মোটা টাকায় জমি হস্তান্তর করেছেন। খেজুরি-২ ব্লকের জনকা, বিদ্যাপীঠ, তেতুলতলা, হলুদবাড়ি, কশাড়িয়া, বোগা, শ্যামপুর, খেজুরি এলাকায় মাছের ভেড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি খেজুরি-১ ব্লকের বীরবন্দর, টিকাশী, আলাইচক, কন্ঠিবাড়ি এলাকায় ভেড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
খেজুরি-২ ব্লকের হলুদবাড়ি অঞ্চলের গোড়াহার জালপাই এলাকার কৃষ্ণেন্দু জানা বলেন, “রসুলপুর নদীর উপকূলবর্তী এলাকায় আমার ফিসারি রয়েছে। অমাবস্যা কোটালের জোয়ারে জলে নদী তীর ছাপিয়ে আমার ফিসারিতে হু হু করে জল ঢুকেছে। কোনক্রমে নেট ঘিরে বাঁধ দিয়ে মাছ আটকানোর চেষ্টা করলেও ফিশারি পাড় ভেঙে বেশকিছু মাছ বেরিয়ে গেছে। বাঁধ মেরামত, মাছে রোগ সংক্রমণ সব কিছু মিলিয়ে এবছর ব্যাপক ক্ষতি হল। কয়েক লক্ষ টাকা জলে চলে গেল।” সার্বিকভাবে কোটি কোটি টাকা ক্ষতির মুখে খেজুরির ভেড়ি চাষ। শুধু খেজুরি নয়, একই অবস্থা সর্বত্রই ফলে চাষিদের যেমন বড় অংকের লোকসান তেমনই চিংড়ির আকাল শুরু হতে চলেছে বাজারেও।