ওয়েব ডেস্ক : করোনা আবহে একেই হাসপাতালে বেড পাওয়া নিয়ে চূড়ান্ত হয়রানির স্বীকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ তারওপর রাজ্য জুড়ে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের দৌরাত্ম্য ক্রমশ বেড়েই চলেছে। হাসপাতালে ভর্তি করাতে গেলে কিংবা এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে গেলে অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া বাবদ টাকা নেওয়া হচ্ছে কয়েকগুণ বেশী। এর ফলে যাদের সেই বিপুল পরিমাণ ভাড়া মেটানোর সামর্থ্য থাকছে না তারা কোনোভাবেই সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে না কেউ। এর জেরে স্বাভাবিকভাবেই চরম অসুবিধার মধ্যে পড়ছে অসহায় রোগী পরিবার।
বৃহস্পতিবার এমনই এক অ্যাম্বুলেন্স দৌরাত্ম্যের ছবি উঠে এল কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দিন কয়েক আগেই আচমকা সেরিব্রাল স্ট্রোক হয় হাওড়ার বাসিন্দা বছর ৪০ এর হরি ওম আগরওয়ালের। করোনা আবহে একাধিক হাসপাতাল ঘুরেও বেড পাওয়া যায়নি৷ অবশেষে কোনোরকমে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় হরি ওম আগারওয়ালকে। এরপর হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী করোনা পরীক্ষা করা হলে জানা যায়, ওই ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত। এরপর দ্রুত তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তড়িঘড়ি তাকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। এদিকে হাসপাতালের বিল ক্রমশ বেড়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার দুপুরে পরিবারের তরফে কোনোরকমে কলকাতা মেডিকেল হাসপাতালে বেডের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে মেডিকেলে যাওয়ার কোনও অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়ায় শেষমেষ বেলঘড়িয়ার একটি অ্যাম্বুলেন্স ৯ হাজার টাকার পরিবর্তে রোগীকে মেডিকেলে নিয়ে যেতে রাজি হন।
কিন্তু সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে কলকাতা মেডিকেলের দূরত্ব মাত্র ৭ কিলোমিটার। এইটুকু রাস্তা ৯ হাজার টাকা ভাড়া চাওয়ায় রোগী পরিবারের তরফে এক প্রকার বাধ্য হয়েই এই অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স কলকাতা মেডিকেল কলেজে পৌঁছাতেই রোগী পরিবারের তরফে এত টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় অ্যাম্বুলেন্স চালকের সাথে রীতিমতো বচসা বাধে রোগী পরিবারের। করোনা আক্রান্ত রোগীর মেয়ে মমতা আগরওয়াল বলেন, “সরকার কি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না? আমাদের মতন অসহায় পরিবারের পাশে কেউ দাঁড়াতে পারে না। কেন একের পর এক হাসপাতাল আমাদের ঘুরতে হল। এটুকু রাস্তা আসতে ৯ হাজার টাকা কেউ নিতে পারে!”
অন্যদিকে, ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্স চালক জানান,”এখানে আমার কোনও ভূমিকা নেই। অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার আগে আমার মালিকের সঙ্গে রোগীর পরিবারের টাকার কথা হয়েছে। তারা ৯ হাজার টাকাতেই রাজি হয়েছিলেন। তবে এই রোগীর পরিবার অত্যন্ত অভদ্র আচরণ করেছে আমার সঙ্গে। এখানে আমার দোষ কোথায়?” বৃহস্পতিবার বিকেলে এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সগুলির দৌরাত্ম্য ফের নজর কাড়লো প্রশাসনের।