নিজস্ব সংবাদদাতা; ঝাড়গ্রাম: বুকের বাঁদিকের পাঁজর ফুঁড়ে দিয়েছে ছুরি, পাঁজর ভেদ করে ছুরি ছুঁয়েছে হৃৎপিন্ড। ফিনকি দিয়ে ছুটছে রক্ত। সেই অবস্থায় বাড়ির বাইরে গিয়ে ছেলেটা ছুটছে একটা গাড়ির জন্য। শনিবার এমনই হতবাক করা দৃশ্যের সাক্ষী রইল ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর থানার পড়াশিয়া গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রাম থেকে একটু দুরত্বে বাড়ি, গ্রামের লোকেদের একটু বুঝতে দেরি হয়েছে। যুবকের বুকে রক্ত ঝরছে দেখেই গ্রামের লোকেরা ফোন করে আ্যম্বুলেন্স ডাকে। আ্যম্বুলেন্স ছোটে গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। গতিক সুবিধা নয় দেখে নিয়ে যাওয়া ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। শনিবার রাতেই মৃত্যু হয় যুবকের।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মৃত ২৮বছরের যুবক পরেশ নায়েক খুন হয়েছেন নিজের বাবার হাতে। অপরাধ, ছেলে বাবার মদ খাওয়া আর মদ্যপ হয়ে বাড়িতে অশান্তি করার প্রতিবাদ করত। সেরকমই ঘটনা ঘটেছিল শনিবার দুপুরে পড়াশিয়া গ্রামে । জানা গেছে পরেশ ওড়িশার একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতো । লকডাউনের জেরে বাড়ি ফিরেছিলেন পরেশ । শনিবার বিকেলে বাড়িতে একাই ছিলেন পরশে । সেই সময় পরশের মা মঞ্জুরী নায়েক চাষের কাজ করার জন্য জমিতে গিয়েছিল এবং পরশের স্ত্রী বীনাপানী নায়েক পাশের গ্রামে তার বাপের বাড়ি গিয়েছিল ।
পরেশের বাবা বছর ৬৫ বয়সের ধনঞ্জয় নায়েক (৬৫) পেশায় পাউরুটি ব্যবসায়ী। প্রায় সময় মদ্যপ হয়ে থাকে। দুপুরে ব্যবসার কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিল নেশায় টোর হয়ে। বাড়িতে ফিরে ঘরে কেন কোনও মহিলা নেই এই নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। এমনিতেই এই নেশার জন্য প্রায়ই সংসারে লেগে থাকত অশান্তি। এদিন বাবার চিৎকার আর গালাগালি করা নিয়ে ছেলে এবং বাবার মধ্যে তুমুল বচসা বাধে জানা যায় । সেই সময়ই পাউরুটি কাটার ছুরি দিয়ে তার নিজের ছেলের বাঁদিকের পাঁজরে ঢুকিয়ে দেয় বলে গ্রামবাসীদের শেষ বারের মত বলে যাওয়া কথায় জানিয়েছে পরেশ।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়েই মাঠ থেকে ছুটে আসে পরশের মা। বাপের বাড়িতে থেকে একরত্তি মেয়েকে নিয়ে আসে স্ত্রী কিন্তু ততক্ষনে পালিয়ে যায় পরশের বাবা ধনঞ্জয়। রবিবার গোপীবল্লভপুর থানায় শ্বশুরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে পরেশের স্ত্রী। পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে অভিযুক্ত ধনঞ্জয়কে। গোটা গ্রাম জুড়ে শোকের ছায়া।