✍️কলমে: দীপ মুখোপাধ্যায়
(দুই)
পুরুলিয়া রামকৃষ্ঞ মিশন থেকে সম্মানজনক রেজাল্ট হলেও পিতৃদেবের আশায় জল ঢেলে ডাক্তারি-ইঞ্জিনিয়ারিং-এর(চান্স পাওয়া সত্ত্বেও) পথ মাড়ালাম না। নাড়ি টেপা বদ্যি কিংবা শিক্ষিত মিস্তিরি হতে তখন বয়েই গিয়েছে। কলাবিভাগের সাম্মানিক স্নাতক পাঠক্রমে(অর্থনীতি) কলেজস্ট্রিট সংলগ্ন একটি বনেদী কলেজে(প্রেসিডেন্সী) শেষমেষ ভর্তির সৌভাগ্য অর্জন করলাম। অচিরেই ছাড়া গরুটি অকাল নিতম্ব পরিপক্কতায় ঋদ্ধ হয়ে স্থান পেল হিন্দু হোস্টেলে। ঠাকুমা বরিশালি ভাষায় বলতেন,পোলায় দেহি ফাউকাইসে। ওরে আচ্ছা কইর্যা পিডাইতে অইবে।
আমার মতো অখাদ্য পোলাপানদের হয়তো এটাই
ভবিতব্য। ক্লাস কেটে তখন প্রায়ই ইয়ার পরিবৃত হচ্ছি।আড্ডাপীঠ মশগুল করছি নেবুতলা বস্তি,খালাসিটোলা কিংবা কফিহাউসের হাউস অফ কমন্সে। সেই জীবনে দম নিয়েছি কিন্তু বাঁক নিতে শিখিনি। এই সময় অপ্রত্যাশিত ভাবে আনন্দমেলায় আমার জীবনের প্রথম শিশুতোষ একটি গল্প প্রকাশিত হয়। অলংকরণ,প্রখ্যাত পূর্ণেন্দু পত্রী। এর কিছু দিনের মধ্যেই সন্দেশ পত্রিকায় একটি ছড়া বেরুল। ছবি আঁকলেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায়। আর কে পায় আমায়? তখন আমি প্রাকযৌবনের ক্ষাত্রতেজে ফুটছি টগবগ করে। নানা পথবাহী হয়ে বসুমতী নামে একটি দৈনিক পত্রিকায় ভিড়েছি। অবশ্য সাহিত্যিক বনে যাওয়ার মোহে নয়। গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য অর্থ সংস্থান ছিল লক্ষ্য।
উপলক্ষ টুকটাক ফিচার লেখা। পিতৃদেব তিতিবিরক্ত হয়ে মাসোহারা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। জাঁদরেল পুলিশ কর্তার ছেলে যে এভাবে বখে যাবে সেটি ছিল তাঁর কল্পনার বাইরে। তাঁর ধারণায় আমলা হওয়ার যাবতীয় জ্ঞানে নাকি আমি সমৃদ্ধ। আসলে সব বাবাদের মনে একটা কাল্পনিক আশ্রয় আঁকা থাকে।ছেলেকে তাঁরা গগনচুম্বী সমারোহের প্রযত্নে রাখতে চান। কেউই চান না আমার মতো হৃদয়বৃত্তের অলখ বলয়ে উদ্দেশ্যহীন ঘুরপাক খাওয়াতে। আর আমিও তখন নাগরিক পঙ্কে ক্রমশ নিমজ্জিত হচ্ছি আত্মজনের আবেষ্টনী ছিঁড়ে। অনিশ্চিতের এক জটিল আবর্তে নাগরিক অহমিকা নিয়ে তখন শিক্ষানবিস সাংবাদিক হিসেবে কাজে ঢুকে পড়েছি যৎসামান্য বেতনে। অর্থ রোজগারের গাঢ় আকুলতা আমাকে তাই অধৈর্য করে তুলত।
(ক্রমশ প্রকাশ্য)