নিজস্ব সংবাদদাতা: সরকারের তরফে বারংবার বলা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে, বলা হচ্ছে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান, সামাজিক ক্রিয়া যতদূর সম্ভব এড়িয়ে অথবা নূন্যতম পরিধিতে করার জন্য। কিন্তু নিয়ম মানছেননা অনেকেই ফল হচ্ছে মারাত্মক, গন সংক্রমনের শিকার হয়ে পড়ছেন অনেক পরিবার। সম্প্রতি এরকমই এক ঘটনার নজির মিলল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা রোড লাগোয়া দ্বারিগেড়িয়াতে যেখানে একটি শ্রাদ্ধ বাড়িতে যোগ দিয়ে একের পর এক করোনা আক্রান্ত হয়েই চলছেন অংশগ্রহণকারীরা। অবস্থা এতটাই খারাপ যে হাসপাতালে জায়গা দেওয়া যাচ্ছেনা আক্রান্তদের। জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ওই শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার মাশুল এখনো গুনতে হচ্ছে অনেককেই। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হল আরও একটি পরিবার।
জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের তালিকায় লিপিবদ্ধ একটি হিসেবে দেখা গিয়েছে চন্দ্রকোনা রোডের সাতবাঁকুড়ার বিলা গ্রামে আক্রান্ত হয়েছেন একই পরিবারের গৃহবধূ সহ ৫ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ১২ এবং ১৪ বছরের দুই কিশোরও রয়েছে। জানা গেছে বিলার এই পরিবারের গৃহকর্তা কীর্ত্তনদলের সঙ্গে যুক্ত। দ্বারিগেড়িয়ার ওই শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে তিনি কীর্ত্তন করতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার কিছুদিন পর অবধি তিনি ভালই ছিলেন কিন্তু ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারি এবং আয়োজক পরিবারের সদস্যরা একের পর এক আক্রান্ত হতে থাকলে তিনি ও তাঁর পরিবারের সবাইকে করোনা পরীক্ষা করতে বলেছিল স্বাস্থ্য দপ্তর। ৬ তারিখ সেই ফল বের হলে দেখা যায় পরিবারের সবাই পজিটিভ।
জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে এই শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে এখনও অবধি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪২ জন এবং আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। চন্দ্রকোনা রোড সংলগ্ন দ্বারিগেড়িয়া ছাড়াও সাতবাঁকুড়া, শান্তিনগর কলোনি, বিলা ছাড়াও গোয়ালতোড়ের গোলবাঁধি, বাঁকুড়ার সিমলাপাল প্রভৃতি এলাকায় একাধিক মানুষ ও পরিবার আক্রান্ত হয়েছিলেন যাঁদের মধ্যে বর্তমানে বেশ কয়েকজন সুস্থ হয়ে উঠলেও এখনও বেশ কয়েকজন চিকিৎসাধীন। যদিও এই ঘটনায় কোনও মৃত্যু হয়নি কিন্তু একই সাথে এতজনের আক্রান্ত হওয়ায় স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর চাপ বাড়ছে। শয্যা সংখ্যা ক্ষমতার অতিরিক্ত আক্রান্ত হতে থাকায় অনেককেই হাসপাতালে ঠাঁই দেওয়া যায়নি। যদিও শুক্রবার শালবনী কোভিড হাসপাতালে বেশকিছু শয্যা খালি হওয়ায় সবাইকেই হাসপাতালে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে।
ইতিমধ্যে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের অভিযোগ মোতাবেক শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের আয়োজক পরিবারের কর্তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তারা জানিয়েছেন করোনা ঘাতক ব্যাধি না হলেও এই ধরনের গন সংক্রমনের ফলে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা অপ্রতুল হয়ে পড়লে মানুষকে চিকিৎসার আওতায় আনা মুশকিল হয়ে পড়ে যে কারনে সংকটাপন্ন রোগির চিকিৎসার অভাবে জীবন সংশয় হয়ে পড়তে পারে। তাই আপাতত গন অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলতে হবে।