✍️কলমে: আশিস মিশ্র
কবিতা লিখলে হাতে কোদাল নেওয়া যাবে না, কে বললো? কবির হাতে ধানের চারা,হাঁটু ভর্তি জল কাদা, কবি ধানচারা রোপন করে এলেন জন- দের সঙ্গে।তারপর রাতে লিখতে থাকে কবিতা।
কবি জাল নিয়ে পুকুর থেকে মাছ ধরে নিয়ে এলো। সন্তানের জন্য। কবি বাজারে গিয়ে বিক্রি করে এলো আনারস। কবি ডাব বিক্রিও করেও জীবন কাটালো। তারপরও সেই সব কবির কবিতা বড়ো মাপের পত্রিকায় ছাপা হয়, বই হয় বড়ো প্রকাশনী থেকে। সেই সব কবিকে এখন আর কেউ মনেও রাখে না। এই তো সময়। কখন সে মন থেকে মুছে দেবে, কেউ জানি না।
আমাদের অনেকের মনে আছে কবি বিনোদ বেরাকে। আমরা যখন কোনো কোনো রবিবারে হলুদ আড্ডা দিতে দিঘা চলে যেতাম, তখন তাজপুরের সমুদ্র বাঁধ পেরনোর সময় কবিবন্ধুরা বলে উঠতো, এইখানে কবি বিনোদ বেরার বাড়ি। কিন্তু কবি পরবর্তী সময়ে ২৪ পরগণার রাঙাবেলিয়ায় গিয়ে বসবাস করতেন। চাষবাস করতেন, আর কবিতা লিখতেন। এবং তাঁর কবিতা ছাপা হতো দেশ, সহ বহু পত্র- পত্রিকায়। তিনি যখন কলকাতার কোনো কবিসভায় আসতেন কবিতা পড়তে, তাঁর পরণে কোরা ধুতি পাঞ্জাবী , কাঁধে ঝোলা ছাড়া আর কিছু থাকতে না। বড্ড ভালো কবিতা লিখতেন। তাঁর মেয়েকে শুনেছি, বিদেশি যুবক বিয়ে করেছেন । এমন কবির বাড়ি চলে যেতেন নাকি শক্তি – সুনীল। আড্ডা দিতে।
এমন কবির কথা আমরা এই কয়েক বছরে একেবারে ভুলে গেছি। এমন মাটির কবি আরও অনেকেই আছে আমাদের অখন্ড মেদিনীপুরে। যাঁরা চাষাবাদ করতেন,গল্প – কবিতা লিখতেন। তাঁদের আর একজনের নাম অর্ধেন্দু বর্মন। তিনিও আজ আমাদের মধ্যে নেই। নেই বিনোদ বেরাও। শুধু থেকে গেছে তাঁদের ধুলোমাখা অক্ষরপ্রতিমা।
এই প্রজন্মের তেমনি এক জঙ্গলমহলের কবির নাম অমিত মাহাত। আমাদের আশা সে একদিন বড়ো ঝুমুর লেখক হবে। বেকারত্ব তাকে কুরে খাচ্ছে। তবুও সে হাত ছাড়েনি শব্দপ্রতিমার। তার একটি মজার লেখা পড়লাম। একটি মিছিলের গপ্পো। একটা মিছিল দিতে হবে। কারণ গ্যাসের দাম বেড়েছে। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মিছিল।
তার মধ্যে কেউ বলছে, গ্যাসের দাম বাড়ছে মিছিল করছো,আর আলুর দাম বাড়লে কিছু বলছো না কেন? নাকি নিছক একটা মিছিল দিতে হবে বলেই একটা কিছু বিরোধী ইস্যু খুৃঁজছো। নাকি সেটা বলতে ভয় পাচ্ছো?
এমন কতো লেখা, কতো রকমের লেখা সে লিখে চলেছে। লাল মাটি, আর শাল- মহুয়ার মাঝে যখন সূর্য ডুবে যায়, তখন সেও বিষণ্ণ হয়ে পড়ে। সেও মনে মনে ভাবে — একদিন সব হবে…
(চলবে)