ওয়েব ডেস্ক: সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর থেকেই তার মৃত্যু নিয়ে একের পর এক হাড় হিম করা তথ্য উঠে এসেছে। এবার সুশান্তের মৃত্যু তদন্তে উঠে এল এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ছেলের জীবনে কোনও বিপদ ঘটতে পারে তা আগেই আশঙ্কা করেছিলেন সুশান্তের বাবা কেকে সিং। ফলে ছেলের মৃত্যুর ৪ মাস আগেই মুম্বই পুলিশকে একথা জানিয়ে সাহায্য চেয়েছিল সুশান্তের পরিবার৷ তবে সেসময় অভিনেতার পরিবারের সেই আবেদন কানেই তোলেননি মুম্বই পুলিশ। এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন রাজপুত পরিবারের আইনজীবী বিকাশ সিং।
এবিষয়ে সুশান্তের পারিবারিক আইনজীবী বিকাশ সিং জানিয়েছেন, ”আমরা গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বান্দ্রা পুলিশকে জানিয়েছিলাম, সুশান্ত বিশেষ ভালো পরিস্থিতিতে নেই। তাঁর সঙ্গীদের বিশেষ ভালো বলে মনে হচ্ছে না। তাঁর সঙ্গে যেন খারাপ কিছু না ঘটে, সেবিষয়টিতে দয়া করে নজর দিন। আর সেসময় সুশান্ত পুরোপুরি রিয়া চক্রবর্তীর নিয়ন্ত্রণে ছিলেন।” কিন্তু সুশান্তের আইনজীবী ও পরিবারের তোলা এই অভিযোগ একেবারেই অস্বীকার করেছেন মুম্বইয়ের ডিসিপি অনিল দেশমুখ।
তবে এখানেই বিষয়টি শেষ নয়, সুশান্তের মৃত্যুর পর পরিবারের তরফে লিখিত অভিযোগ জানাতে গেলেও তাদের চরম হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়। এমনকি প্রথমে বিহার পুলিশও অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে। তবে পরে মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের হস্তক্ষেপে বিহার পুলিশ সুশান্তের পরিবারের অভিযোগ নেন। এবিষয়ে আইনজীবী বিকাশ সিং জানান, ”বিহার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, এই মমলায় হাই প্রোফাইল লোকজন জড়িয়ে রয়েছে। তবে এবিষয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারকে ধন্যবাদ, তাঁর হস্তক্ষেপেই মন্ত্রী সঞ্জয় ঝা বিষয়টির তদারকি করেন। তারপরই অভিযোগ নেওয়া হয়। আমরা চাই পাটনা পুলিশই এই মামলার তদন্ত করুন। সুশান্তের পরিবার এখনও এই মামলায় সিবিআই তদন্তের আবেদন করেনি।”
সুশান্তের আইনজীবী বিকাশ সিং আরও জানান, ”আমরা হতবাক এটা জেনে, যে এই মামলায় মুম্বই পুলিশ এখনও পর্যন্ত কোনও এই মামলায় কোনও অভিযোগই নেয়নি। অথচ সুশান্তের পরিবারের উপর চাপ দেওয়া হচ্ছে, বড় বড় প্রযোজনা সংস্থার নাম নিতে যাতে তাঁরা তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকতে পারে। পুরো বিষয়টিই অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। এদিকে সুশান্তের পরিবারে তরফে দাবি করা হয়েছে, রিয়াকে গ্রেফতার করে, তাঁকে হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক, যাতে সত্যিটা তাড়াতাড়ি সামনে আসে।”
প্রসঙ্গত, চলতি সপ্তাহেই সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের তরফে বিহারের পাটনার রাজীব নগর থানায় রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে একাধিক বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এবিষয়ে আইনজীবী বিকাশ সিংয়ের দাবি, এটা একদিনে ঘটে যাওয়া অপরাধ হয়। তাই ঘটনার সঙ্গে জড়িত স্থান হিসাবে পাটনাতেও অভিযোগ দায়ের করা যেতে পারে।
এদিকে রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ দায়ের করেছেন সুশান্তের বাবা৷ তাঁর অভিযোগ, দিনের পর দিন সুশান্তকে তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিতেন না রিয়া। এমনকি সুশান্ত যে ডিপ্রেশনের চিকিৎসা করছিলেন তার যাবতীয় রিপোর্ট রিয়া নিজের হেফাজতেই রাখতেন এবং তার ওই মেডিক্যাল রিপোর্টগুলি মিডিয়ায় প্রকাশ করে সুশান্তকে সকলের সামনে পাগল প্রমাণ করার হুমকিও দিতেন। এছাড়া সুশান্তের মৃত্যুর আগে তাঁর পরিচারক, ম্যানেজার এমনকি তার বিশ্বস্ত বডিগার্ডকেও বদলে দিয়েছিলেন রিয়া।
এমনকি পরিবারের কারো সাথেই সুশান্তকে যোগাযোগ রাখতে দিত না রয়া ও তাঁর পরিবার৷ পরিবারের তরফে কেউ সুশান্তকে এসএমএস করলে রিয়াই তার উত্তর দিতেন। এছাড়াও রিয়া ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে আরও এক বিস্ফোরক অভিযোগ করেন সুশান্তের পরিবার। সুশান্তের অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ কোটি টাকা হাতিয়েছেন রিয়া চক্রবর্তী এবং সুশান্তের এটিএম কার্ড ডেবিট কার্ড সব নিজের অধীনেই রাখতেন অভিনেত্রী৷ সেই টাকা খরচ করে বার কয়েক বিদেশ ভ্রমণেও গেছেন রিয়া।
শুধু তাই নয়, সুশান্তের তিন কোম্পানির অংশীদার হিসেবে নাম রয়েছে রিয়া চক্রবর্তী ও তার ভাইয়ের৷ যদিও এই তিনটি কোম্পানির একটিতেও টাকা বিনিয়োগ করেনি রিয়া ও তাঁর ভাই। এছাড়াও সুশান্তের পরিবারের তরফে দীর্ঘ ৫ পাতার অভিযোগ পত্রে রিয়া চক্রবর্তী ও তাঁর পরিবারের তরফে একাধিক অভিযোগ করা হয়েছে৷ এদিকে সুশান্তের বাবার লিখিত অভিযোগ দায়ের করার ঠিক পরপরই আগে থেকেই অন্তর্বর্তী জামিনের জন্য আবেদন করেন রিয়া। একই সাথে এই মামলার তদন্ত যাতে মুম্বই থেকে হয়, তার জন্য সুপ্রিম কোর্টেও আবেদন জানিয়েছেন রিয়া চক্রবর্তী। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে সুশান্তের মৃত্যুর পিছনে হাত আছে বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীর।