নিজস্ব সংবাদদাতা: জল্পনা এতটাই তুঙ্গে উঠেছিল যে, মুকুল রায় তৃণমূলে ফিরে এলে দলে তাঁকে কি পদ দেওয়া হবে তাই নিয়ে তৃণমূলের নিচু তলার কর্মীদের যেন চিন্তার শেষ ছিলনা। দলীয় কার্যালয় থেকে মোড়ের আড্ডায় একটাই বিষয়, মুকুলদা দলে ফিরলে কী পদ পাবেন, অভিষেক মুকুলদা কে কী চোখে দেখবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এখনও তৃণমূলে থেকে যাওয়া মুকুল ঘনিষ্টদের কেউ কেউ নাকি ফোনও করেছিলেন মুকুলকে। রবিবার সেই জল্পনায় জল ঢেলে দিলেন মুকুল রায় স্বয়ং। জানিয়ে দিলেন বিজেপিতেই আছেন তিনি। শুধু তাই নয় আরও এককদম এগিয়ে তিনি জানিয়ে দেন বিজেপিতে ১০০% সন্তুষ্ট তিনি। এরপরই অবশ্য বেলুন চুপসে যায় জল্পনার।
বাজারে বেশ কয়েকদিন ধরে বিজেপির সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরির জল্পনা তৈরি হয়েছিল। বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব তাঁকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না, রাজ্য সভাপতির সঙ্গে তাঁর মতানৈক্য, যুব মোর্চার সভাপতি পদে তাঁর ছেলেকে না বসানো, যাবতীয় বিষয় নিয়ে তিনি অসন্তুষ্ট, এমনই খবর ঘুরছিল বাজারে। কিন্তু সমস্ত জল্পনা উড়িয়ে মুকুল রায় জানিয়ে দিলেন, তিনি বিজেপিতে ছিলেন, আছেন ও থাকবেন। বললেন, ”আমার সঙ্গে বিজেপির কারও কোনও বিরোধ নেই। দলের কোনও সংঘাত নেই। আমাকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচার চলছে। কারা এটা করছে তদন্ত হোক।’ তিনি রবিবার বলেছেন, ”বিজেপিতে যোগ দিয়ে আমি একশো শতাংশ সন্তুষ্ট। আমার কাছে দলের সংগঠনই বড় কথা। আমি দলের সংগঠনটাই করব। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আগে যেমন যোগাযোগ ও সম্পর্ক ছিল, সেরকমই আছে।”
দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব কিংবা রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে মতবিরোধ এসব যে শুধুই জল্পনা ও অপপ্রচার তা সাংবাদিক বৈঠক করে জানালেন মুকুল রায়। তিনি বলেন, ”বিজেপি আমাকে সন্মান দিয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের দায়িত্ব দিয়েছিল। কলকাতায় এসে অমিত শাহ নিজে মুখে আমাকে বলে গিয়েছিলেন জয়ের অন্যতম কান্ডারী। তাছাড়া সর্ব বৃহৎ রাজনৈতিক দলের আমি জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য। আমার খারাপ লাগছে এবং আমায় আঘাত দিয়েছে কিছুদিন ধরে কিছু সংবাদ মাধ্যম যেসব সংবাদ আমায় নিয়ে পরিবেশন করেছে। কেউ বলেছে মুকুল রায় দল ছাড়ছে। কেউ বলেছে মুকুল রায়ের সঙ্গে বিজেপির দূরত্ব বেড়ে গিয়েছে। আসলে করোনা পরিস্থিতির কারণে আমি নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে ছিলাম। রাজনৈতিক পরিধিটা বাড়াতে পারিনি। কিন্তু মোদি, কৈলাসজির নির্দেশ মেনে রাজনীতির আঙিনা থেকে সরিনি।” শোনা যাচ্ছিল, তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব চেয়েছিলেন, যা নাকি তাঁকে কথা দিয়েও খেলাপ করে হাইকম্যান্ড. সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ”মন্ত্রী তো অনেকেই অনেক সময় হয়। আমি সংগঠন ভালবাসি। সংগঠনের কাজেই আমি খুশি। আমাকে বিজেপি পার্টি, মোদি, শাহ, কৈলাশজি অনেক সন্মান দিয়েছেন।”
যে কারণে তিনি দিল্লির বৈঠক ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন তা নিয়েও অনেক জল্পনা ছড়ায়। তা নিয়ে মুকুল রায় বলেছেন, ”কাল আমার চোখে ইঞ্জেকশন দেওয়া হবে। আর দিল্লির মিটিংয়ে রাজ্য নেতৃত্ব আছে। আমার থাকার দরকার নেই। গুরুত্বপূর্ণ সভা হলে আবার থাকব। আমাকে বলাই হয়েছিল ২২ তারিখ আসুন। দু-একদিন থেকে যাবেন। কাজ থাকলে মিটিংয়ে অনেকে নাও থাকতে পারেন।” একইসঙ্গে, লকডাউন ভালভাবে হলে রাজ্যে করোনাতে এত মৃত্যু হত না। বলে জানিয়েছেন মুকুল রায়।
এই গুজবটা কী তাহলে কৌশলে কেউ রটিয়ে দিয়েছিল? মুকুল ঘনিষ্টরা বলছেন দু’তরফেই বিষয়টি হতে পারে। বিজেপির সেই অংশ যাঁরা মুকুলকে মানতে পারছেননা তাঁরাই মুকুল অনুগতদের মধ্যে মুকুল সম্পর্কে এরকম একটা ধারনা তৈরি করার চেষ্টা করতে পারেন এটা বোঝানোর জন্য যে মুকুল দোচালতায় ভুগছে। অথবা তৃনমূলও হতে পারে। বিধানসভা নির্বাচনের মুখে তৃণমূলের অভ্যন্তরে থাকা যে অংশ ক্ষুব্ধ এবং মুকুলের আমন্ত্রনের অপেক্ষায় তাদের বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে। তবে মুকুল গুজবটাকে আর বেশি বাড়তে দিলেননা বুদ্ধিমানের মতই।গুজবের ডানা কখন ভাঙতে হয় তা যে মুকুল রায়ের ভালই জানা।