নরেশ জানা : ১৫ লাখের আর টি/পিসিআর(রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেইন রি-আ্যকশন) মেশিনকে এবার বুক ঠুঁকে চ্যালেঞ্জ জানাবে মাত্র ২হাজার টাকার একটা মেশিন আর করোনা পরীক্ষার জন্য যেখানে বাইশো টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা কিংবা তারও বেশি টাকা নিয়ে নিয়ে নিচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা ডায়গনিস্টক সেন্টার গুলি সেখানে মাত্র ৪০০টাকায় পরীক্ষা করাতে পারবে আম জনতা। দেশের যে কোনও প্রান্তে কম ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা অথবা ব্যাটারি কিংবা সৌর বিদ্যুৎয়েও সেরে ফেলা যাবে এই পরীক্ষা আর ফলাফল হাতে গরম, মাত্র ১ঘন্টায়!
অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি বলে দাবি করেছেন আইআইটি খড়গপুরের গবেষকরা।
২৫জুলাই আইআইটি খড়গপুরের ডিরেক্টর অধ্যাপক বীরেন্দ্র কুমার তেওয়ারীর উপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানের আয়োজিত ‘ওয়েবনার’ বা অনলাইন সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই দাবি করলেন আইআইটির দুই গবেষক অধ্যাপক সুমন চক্রবর্তী এবং অধ্যাপক অরিন্দম মন্ডল। তাঁরা দাবি করেছেন ওই মাত্র এক বর্গফুট আকারের যন্ত্রটি তৈরি হয়ে গেছে এবং বাজারে আসার জন্য প্রস্তুত যা কিনা করোনা পরীক্ষা বিশ্ব স্বীকৃত পদ্ধতি, আরটি/পিসিআর মেশিনের ফলাফল আর এই মেশিনের ফলাফল ১০০% মিলে গিয়েছে।
আইআইটির স্কুল অফ বায়োসায়েন্সের অধ্যাপক ও জীবানু গবেষক অরিন্দম মন্ডল দাবি করেছেন,’আমরা ৫০০টি সিনথেটিক নমুনা একই সাথে আরটি/পিসিআর ও আমাদের এই পোর্টেবল মেশিনে পরীক্ষা করে দেখেছি দু’পক্ষেই সমান ফলাফল এসেছে।’ মন্ডল জানান, ”যেহেতু সরাসরি মানব দেহের নমুনা পরীক্ষা করার আধিকার আমরা বহন করিনা তাই আমরা সিনথেটিক নমুনা ব্যবহার করেছি। আমরা স্থির প্রত্যয়ী যে আইসিএমআর মানবদেহের নমুনা এই মেশিনে প্রয়োগ করলে একই ফল পাবে।”
অন্যদিকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক গবেষক সুমন চক্রবর্তী জানান, ” কেন এই মেশিন অন্যদের সর্বোত্তম তার উত্তরে বলতে হয় যে, এখানে একটি উন্নত মেশিনকে রক্ষণাবেক্ষনের খরচ নেই, তাঁকে সরক্ষন ও সুরক্ষিত রাখার জন্য এসি ঘরের প্রয়োজন নেই, উন্নত মেকানিক বা টেকনিশিয়ান রাখার দরকার নেই, স্কিল বা দক্ষ লোকের দরকার নেই। একজন সাধারন মানুষ শুধু এটি প্রয়োগ কৌশল শিখে নিয়েই কাজ করতে পারবেন। সেই কৌশল বাংলা, হিন্দিতে আমরা লিখে জানিয়ে দেব, আমরা একটি ভিডিও দেব যেখানে নমুনা সংগ্ৰহ করা থেকে তাকে মেশিনে ফেলে ফলাফল পাওয়া অবধি বিষয়টি হাতে কলমে শিখিয়ে দেবে। আমাদের সাধারন স্বাস্থ্য কর্মীরাই এটা করতে পারবেন। শুধু নমুনা সংগ্রহের সময় একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যেহেতু এই গোটা প্রক্রিয়ায় বিশেষ কোনও খরচ নেই তাই পরীক্ষার খরচ কমে যাচ্ছে।”
চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, এই মেশিনটি যার নাম দেওয়া হয়েছে,’নভেল টেকনলজি ফর কোভিড-১৯ র্যাপিড টেস্ট’ সেখানে আগে থেকেই একটি রাসায়নিক যুক্ত কিটস থাকবে যার দাম কমাতে আমরা কাগজের কিটস বানাতে পারি তার ওপর নমুনা ফেললেই রঙ পরিবর্তিত হবে। সেই রঙ পরিবর্তিত কিটস বিশ্লেষন করবে একটি স্মার্ট ফোন আ্যপ যে আ্যপটি আমারই তৈরি করেছি। সেই আ্যপই বলে দেবে নমুনা পজিটিভ না নেগেটিভ। সুতরাং কোনো এক্সপার্ট লাগছেনা। অথচ ফলাফল পাওয়া যাবে একশ শতাংশ ঠিক। যেহেতু এই গোটা প্রক্রিয়াতে কোথাও কোনও ব্যয়বহুল পদ্ধতি নেই, সবটাই আমাদের আগে থেকেই প্যাকেজিং করা তাই খরচও অত্যন্ত কম।
আইআইটির পক্ষ থেকে আরও দাবি করা হয়েছে শুধুই করোনা নয়, ভবিষ্যতের দুনিয়ায় আসা যে কোনোও ভাইরাস ঘটিত অতিমারির পরীক্ষায় কাজ করতে সক্ষম হবে এই মেশিন খালি তার আগে কিছু আগে থেকে করে রাখা প্রোগ্রামিং পরিবর্তন করে দিতে হবে।
এই যন্ত্রটি পুরোপুরি বাজারের জন্য তৈরি হয়ে আছে বলে দাবি করে আইআইটির দাবি, এবার প্রচুর পরিমানে উৎপাদনক্ষম এমন উদ্যোগ পতিরা ও সরকার এগিয়ে এলেই এই যন্ত্র বাজারে চলে আসতে পারে।
আইআইটি খড়গপুরের ডিরেক্টর অধ্যাপক তেওয়ারী বলেন, আমি অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই এই গবেষক দলটিকে তাঁদের নেতৃত্বকে। এই যে একজন ক্লাস টেন পাশ অথবা ফেল করা পড়ুয়াও এটা করতে পারবে, সাধারনের কাছে প্রযুক্তি পৌঁছে দেওয়া এবং তাকে সহজেই ব্যবহারের উপযোগী করতে পারা এটাই আত্মনির্ভর ভারতের আসল উদ্দেশ্য।”
যন্ত্রটিকে পেটেন্টের আওতায় আনতে ইতিমধ্যেই আবেদন করেছে আইআইটি।