নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনার ডানা এবার বিস্তৃত হল খড়গপুর শহরের একেবারে দক্ষিনে, পৌর সভার ৩৪নম্বর ওয়ার্ডের হিজলী কো-অপারেটিভ সোসাইটি এলাকায়। খড়গপুর শহরের মানচিত্রের একেবারে প্রান্তিক দক্ষিনে অবস্থিত প্রেমবাজার লাগোয়া এই অভিজাত বসতি এলাকায় করোনার সন্ধান পাওয়া যাওয়া করোনা বৃত্ত পুরোপুরি সম্পুর্ন হল বুধবারই। খড়গপুর শহরের প্রান্তিক উত্তরে বিদ্যাসাগরপুর, পূর্বে ইন্দা আর প্রান্তিক পশ্চিমের নিমপুরা দেওয়ানমাড়োতে করোনার পা পড়েছিল আগেই। মাস খানেক আগে ঝাপেটাপুর, ঝুলি আর বিশ্বরঞ্জন নগরে এসে থমকে গেছিল করোনার গতি। এবার করোনা ছুঁয়ে পৌঁছে গেল দক্ষিন সীমান্তেও। খড়গপুর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে কলকাতার পিয়ারলেশ হাসপাতালে করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ ফলাফল এসেছে এই এলাকার বাসিন্দা ৫৮ বছরের এক গৃহবধূ।
জানা গেছে আইআইটি খড়গপুরের লাইব্রেরি বিভাগের প্রাক্তন কর্মীর স্ত্রী এই গৃহবধূ জ্বর এবং ফুসফুসের সংক্রমন নিয়ে রবিবার ভর্তি হয়েছিলেন আইআইটি ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বিধান চন্দ্র রায় মেমোরিয়াল হাসপাতালে। প্রথামতই সোমবারই সকালেই হাসপাতাল ওই গৃহবধূর নমুনা সংগ্ৰহ করে পরীক্ষার জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি ল্যাবে পাঠায়। রাতেই সেই ফলাফল নেগেটিভ আসে। আইআইটি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে মহিলার হিমোগ্লোবিন মাত্রা কম ছিল এবং ইউসোনোফেলিয়া বাড়াবাড়ি রকমের ছিল। পাশাপাশি শ্বাসকষ্টের উপদ্রব বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছালে মঙ্গলবার তাঁকে কলকাতার পিয়ারলেশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ওখানেই ফের তাঁর নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং ভর্তিও করে নেওয়া হয় আইসোলেশন কেবিনে। বুধবার জানা যায় মহিলার পজিটিভ এসেছে। বুধবারই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাস্বাস্থ্য দপ্তরে সেই খবর এসে পৌঁছায়। স্বাস্থ্য দপ্তর বিধি সম্মত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তা খড়গপুর পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দেয়। প্রশ্ন হচ্ছে মাত্র ২৪ঘন্টার ব্যবধানে মহিলা করোনা আক্রান্ত হলেন কী করে যেখানে পুরো সময়টা তিনি দুটো হাসপাতাল এবং আ্যম্বুলেন্সের মধ্যেই ছিলেন!
আইআইটির হাসপাতালের এক আধিকারিকের পরিষ্কার বক্তব্য, “হয় উনি পিয়ারলেশ হাসপাতালেই আক্রান্ত হয়েছেন নতুবা করোনা পরীক্ষায় কারচুপি করা হয়েছে।” আধিকারিকারিকের আরও বক্তব্য, “মহিলা যদি খড়গ পুরে আক্রান্ত হন তবে কার দ্বারা হবেন? বাড়িতে ওনার স্বামী এবং ছেলে যাঁদের দুজনেরই ওই হাসপাতালেই করোনা পরীক্ষা হয় এবং দুজনেই নেগেটিভ । মহিলা বাইরে যেতেন না। তাহলে কী ভাবে আক্রান্ত হলেন?”
রাজ্য সরকার কিছুদিন আগেই বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছিলেন, বেসরকারি হাসপাতালে এত পজিটিভ ফল আসছে কেন? ক্ষুব্ধ সরকার এও জানিয়ে দিয়েছিল প্রয়োজনে বেসরকারি নার্সিং হোম গুলির পজিটিভ আসা নমুনা গুলির দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করা হবে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, “এটা ঘটনা যে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে যাঁরাই যাচ্ছেন প্রায় সবাই-ই পজিটিভ হয়ে যাচ্ছেন। হয়ত এক দুজন হচ্ছেন কিন্তু যাঁদের পজিটিভ আসছে তারা সত্যি কি সবাই পজিটিভ ? স্বাস্থ্য ব্যবসা আরও লাভজনক করার পদ্ধতি নয় তো এটা? পজিটিভ হলে এক লাফে অনেকটা বিল বাড়িয়ে নেওয়া যায়।” ঘটনা যাই হোকনা কেন আপাতত শহরের করোনা মানচিত্রে চলে এল সোসাইটি এলাকা এবং শহরের ৮৩ তম করোনা আক্রান্ত হলেন তিনি। বুধবারই রেল এলাকার ৭জনের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় সংখ্যাটি ৮২ ছুঁয়ে ছিল। পুলিশ কন্টেনমেন্ট জোন করার উদ্যোগ নিচ্ছে এলাকায়।