ওয়েব ডেস্ক : ২০২১ য়ের আগে এনআরসি-এনপিআরকেই পাখির চোখ করে এগুচ্ছিল তৃনমূল কংগ্রেস। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী আন্দোলনে শান দিতে মমতা ব্যানার্জীর হাতিয়ার ছিল জাতীয় নাগরিক পঞ্জি। কোনো মতেই এই রাজ্যে এনআরসি করা যাবে না তা স্পষ্ট জানিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শাসক দলের তরফে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে চলেছে মিটিং মিছিল। মূলতঃ এনআরসি ইস্যুকে সামনে রেখেই ২০২১ এর নির্বাচনে আরও একবার রাজ্যের মসনদ দখলের পথ প্রস্তুত করার চূড়ান্ত মুহূর্তেই হাজির হল ‘করোনা’। দীর্ঘ কয়েকমাস যাবত দেশ তথা রাজ্যগুলি করোনা পরিস্থিতি নিয়েই নাজেহাল। কিন্ত তৃনমূল সর্বাধিনায়কা যে তাঁর লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে আসেননি তা বুঝিয়ে দিলেন আবার। সোমবার ২১-এর মঞ্চ থেকে বিজেপি-কে নিশানা করে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, “ভাববেন না করোনা চলছে বলে এনপিআর, এনআরসি ভুলে যাবো ৷” সাথে সাথে এটাও পরিস্কার হয়ে গেল যে,এন আর সি যুদ্ধ শেষ হয়নি এখনও।
এমনিতে রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি দিন দিন ক্রমশ খারাপ হচ্ছে৷ প্রতিদিনই নতুনভাবে সংক্রমিত হচ্ছে প্রায় কয়েক হাজার মানুষ। ফলে বহুক্ষেত্রেই হাসপাতালে বেড না পেয়ে বহু মানুষ বিনা চিকিৎসাতেই মারা যাচ্ছেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সরকারের ওপর ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। তার ওপর গোদের ওপর বিষফোঁড়া ‘আমফান’। আমফানের ত্রান বন্টন নিয়েও শাসকদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ সাধারণ মানুষের। বহুক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিপূরণ বাবদ ত্রিপল ও ২০ হাজার টাকার ঘোষণা করেছিলেন, সেটি যাদের একান্তই প্রয়োজন তারা পায়নি বরং সেই টাকা পেয়েছে তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও কর্মীরা। ফলে শাসক দলের বিরুদ্ধে মুখ ঘুরিছেন অনেকেই৷ এই সব পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে দলের হারিয়ে যাওয়া ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে এদিন ২১এ জুলাইয়ের সভা থেকে ফের এনআরসি-এনপিআরকেই হাতিয়ার করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার তৃণমূলের শহিদ দিবসের ভার্চুয়াল মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেত্রী বিজেপি-কে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “কেন্দ্রে ক্ষমতায় আছেন বলে কি গায়ের জোর দেখাচ্ছেন? বহিরাগতরা বাংলা চালাবে না৷ বাংলার লোক বাংলা চালাবে৷ এনআরসি-এনপিআরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি৷ আরও করবো৷ ভাববেন না, করোনা হয়েছে বলে এনআরসি ভুলে যাবো।” পাশাপাশি ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে এদিন ২১ শে জুলাইয়ের শহিদ দিবসের সভা থেকে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে মমতার বার্তা, “বাংলাকে অপমান করা হচ্ছে৷ আমরা এর প্রতিবাদ করছি৷”
এদিন সভামঞ্চ থেকে বিজেপি-কে একহাত নিয়ে মমতা বলেন, “একটি নির্বাচন হয়েছে। কয়েকটা মাত্র সিট ওরা পেয়েছে। তার মধ্যেই রোজ অভিযোগ যাচ্ছে কেন্দ্রে। এখানে নাকি আইন শৃঙ্খলা নেই। যান অন্য রাজ্যে দেখে আসুন। ২০১৯ লোকসভায় কয়েকটা সিট পেয়ে যেন সারা পৃথিবী জয় করে নিয়েছে। আয়নায় নিজের মুখ দেখুক, কী চলছে উত্তরপ্রদেশে? পুলিশকেই খুন করে দেওয়া হচ্ছে। যে খুন করল আসামীকেও খুন করে দেওয়া হল। যাতে প্রমাণ না থাকে। এমনকি কোভিডের নাম করে অনেক রাজ্যে সরকারি কর্মচারিরা মাইনে পাচ্ছে না। একমাত্র রাজ্য আমরা, ১ তারিখে শিক্ষকদের মাইনে দিই। দারিদ্র্য দূরীকরণে আমরা প্রথম, একশো দিনের কাজে প্রথম বাংলা। ক্ষুদ্র শিল্পে এক নম্বর বাংলা।”