Homeএখন খবরপাঁশকুড়ায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু কাউন্সিলারের, এগরায় করোনা আক্রান্ত বিধায়ক, সর্বকালের...

পাঁশকুড়ায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু কাউন্সিলারের, এগরায় করোনা আক্রান্ত বিধায়ক, সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে রাজ্যে একদিনে মৃত ৩৬

নিজস্ব সংবাদদাতা: শুরুতে জেলাগুলির মধ্যে করোনা আক্রান্তের হার ছিল পূর্ব মেদিনীপুরেই বেশি। বাংলার প্রথম চিহ্নিত চারটি রেড জোন জেলার মধ্যে ছিল পূর্ব মেদিনীপুর। মাঝখানে কিছুদিন স্থিমিত হলেও ফের স্বমহিমায় জেলা। জেলার প্রায় সমস্ত এলাকা থেকেই আক্রান্ত হওয়ার খবর আসছে। এরই মধ্যে পাঁশকুড়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মঞ্জুরি বিবির মৃত্যুকে ঘিরে শুরু হয়েছে ধোঁয়াশা। শনিবার রাতে বড়োমা করোনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁকে। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। যেহেতু মৃত্যুর আগে তাঁর করোনা পরীক্ষা হয়নি এবং মৃত্যুর পর সংগ্ৰহ করা নমুনার এখনও করোনা রিপোর্ট আসেনি। ওই কাউন্সিলরের আদৌ করোনায় মৃত্যু হয়েছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়। যদিও এই ঘটনা জানার পরই আতঙ্ক ছড়িয়েছে পাঁশকুড়াবাসীর মধ্যে।

পরিবার সূত্রে খবর, সপ্তাহখানেক আগেই তিনি জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এরপর চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়েও ওঠেন। ফের শনিবার সকাল থেকেই তিনি জ্বর অনুভব করেন। সেই সঙ্গে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই দিন সন্ধে আটটা নাগাদ তাঁকে পাঁশকুড়ার মেছোগ্রামের বড়মা করোনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই রাত প্রায় দশটা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। তবে এখনও আসেনি করোনা রিপোর্ট। তাই আদৌ তাঁর মৃত্যু কারণ করোনা কিনা, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।  বাহান্ন বছর বয়সি ওই তৃণমূল কাউন্সিলর মঞ্জুরি বিবি ছিলেন জেলা তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের সাধারণ সম্পাদক তথা রাজ্য মাইনোরিটি ফোরামের সদস্য জইদুল ইসলাম খানের স্ত্রী। ২০১৭ সালে পৌর নির্বাচনে পাঁশকুড়া পৌরসভার ৮নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত হয়ে তিনি কাউন্সিলর হন। তাঁর মৃত্যুতে রাজনৈতিক মহলে নেমেছে শোকের ছায়া।

তবে ইতিমধ্যে স্থানীয়দের মনে করোনা আতঙ্কও দানা বাঁধতে শুরু করেছে। অনেকেই মনে করছেন, করোনা আক্রান্ত হয়েই ওই কাউন্সিলরের মৃত্যু ঘটেছে। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে নিহত কাউন্সিলরের পরিবারের বাকি সদস্যদের পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।  এদিকে শনিবারই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন  বিধায়ক সমরেস দাস। তিনি হলেন পঞ্চম তৃনমূল বিধায়ক যিনি এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। শুক্রবার ওই বিধায়কের লালারস পরীক্ষার নমুনায় করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। এরপরই তাঁকে চিকিৎসার জন্য পাঁশকুড়ার বড়মা কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

যদিও তৃণমূলের ওই বিধায়কের পরিবারের বাকি সদস্যদের করোনার রিপোর্ট নেগেটিভ বলে জানা গিয়েছে। এর আগেও ফলতার তৃণমূল বিধায়ক তমোনাশ ঘোষ করনা আক্রান্ত হন। গত ২৪ জুন তিনি হাসপাতালেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এছাড়াও দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন বিধাননগরের এই বিধায়ক। পানিহাটির বিধায়ক তথা বিধানসভার তৃণমূলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এখনও অবধি কুমারগঞ্জের বিধায়ক তোরাফ হোসেন মন্ডল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন।

এদিকে রাজ্য জুড়ে করোনার দাপট আরও জোরালো হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড আবারও ভাঙল বাংলায়। রবিবার সন্ধেয় স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন বলছে, একদিনে ২২৭৮ জন করোনায় সংক্রামিত হয়েছেন বাংলায়! মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের। এই দু’টি পরিসংখ্যানই পুরনো সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। বাংলার এই পরিস্থিতি রীতিমতো উদ্বেগজনক বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। এই বড় সংখ্যায় আক্রান্তের হদিস মেলার ফলে রাজ্যে মোট করোনা সংক্রামিত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৪৮৭। করোনা নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ১১২ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে সুস্থও হয়েছেন সর্বোচ্চ সংখ্যায় মানুষ, ১৩৪৪ জন। এই মুহূর্তে করোনা অ্যাকটিভ রয়েছে ১৬ হাজার ৪৯২ জনের দেহে। আক্রান্তের সংখ্যা পরপর কয়েক দিন রেকর্ড ভাঙা পরিসংখ্যানে বাড়ার ফলে রাজ্যের ডিসচার্জ রেট অনেকটাই কমে গেছে, ৫৮.৫৬ শতাংশ।

বুলেটিন বলছে, এদিন রাজ্যে ঝাড়গ্রাম ছাড়া প্রতিটি জেলা থেকে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। শীর্ষে রয়েছে কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনা, এই দুই জেলায় করোনা সংক্রমণের সংখ্যা যথাক্রমে ৬৬২ এবং ৫৪৪। এই সংখ্যা দু’টিও পূর্বের সব রেকর্ড ভেঙেছে। এই দুই জেলা থেকে মারা গেছেন যথাক্রমে ১৫ জন ও ৯ জন। এর পরেই আছে হাওড়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, যেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় সংক্রামিত হয়েছেন যথাক্রমে ১৯১ এবং ১৫২ জন। এই দুই জেলা থেকেই ৩ জন করে মারা গেছেন। উদ্বেগ বাড়িয়ে এর পরেই আছে দক্ষিণ দিনাজপুর, যেখানে একদিনে আক্রান্ত ১৪২। চার জন মারা গেছেন হুগলি থেকে। সেই জেলায় এক দিনে আক্রান্ত ৮৫ জন। তবে মালদায় কেউ মারা না গেলেও, হুগলির চেয়েও বেশি সংক্রমণ হয়েছে সেখানে, ৮৯ জনের।

RELATED ARTICLES

Most Popular