Homeএখন খবরমেয়ের ডাকে দিল্লি থেকে ৯দিন সাইকেল চালিয়ে কাঁথির শ্বশুরবাড়িতে , তবুও জুটল...

মেয়ের ডাকে দিল্লি থেকে ৯দিন সাইকেল চালিয়ে কাঁথির শ্বশুরবাড়িতে , তবুও জুটল না জামাই আদর, প্রতিবেশীদের তাড়ায় ঠাঁই কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে

নিজস্ব সংবাদদাতা: লকডাউন কিন্তু মেয়ের আবদার  কি আর বাধা মানে ? তাই টানা ৯ দিন ধরেসাইকেল চালিয়ে দিল্লি থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে এসে পৌঁছেছিল জামাই। সোমবার রাতে কোনও রকমে গা হাত পায়ের ব্যথা মারিয়ে মঙ্গলবার সকালে ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া না ভাঙতে ভাঙতেই হৈহৈ-রৈরৈ কান্ড! গোটা গ্রাম ভেঙে পড়েছে শ্বশুরবাড়িতে। এখুনি তাড়াতে হবে জামাইকে।কে জানে দিল্লি থেকে করোনা নিয়ে এসেছে কিনা ?

মঙ্গলবার সাত সকালে ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি এক নম্বর ব্লকের করঞ্জি গ্রামের সুরেন্দ্রনাথ ভূঞ্যার বাড়িতে। সুরেন্দ্রর এক মেয়ে কে দিল্লি তে বিয়ে দেওয়া হয় সাত বছর আগে। জামাই ৩৬ বছরের পারভীন তিওয়ারি। দম্পতির পাঁচ বছরের কন্যা সন্তান ও আছে। মাস কয়েক আগে পারভীনের স্ত্রী ও মেয়ে তার দিল্লি থেকে মেয়ের বাপের বাড়ি কাঁথিতে চলে আসে। কথা ছিল কাজ কম্ম চুকিয়ে শ্বশুর বাড়িতে এসে পারভীন নিয়ে যাবে স্ত্রী ও মেয়েকে। কথা তো ছিল কিন্তু লক ডাউন ভেঙে দিল সব স্বপ্ন। ট্রেন, গাড়ি সব বন্ধ! ওদিকে স্ত্রী আর প্রানের চেয়ে মেয়ের প্রিয় মেয়ের শোকে পাগল পারভীন। মেয়ে প্রতিদিনই মায়ের ফোন থেকে ফোন করে বলে, বাবা কবে আসবে তুমি ? আমাদের নিয়ে যাবেনা ?

বাধ্য হয়ে সাইকেলেই দিল্লি থেকে মেয়ে আর বউয়ের কাছে আসার সিদ্ধান্ত নেয় পারভীন আর এসে পৌঁছায় সোমবার রাতে। আর এই ঘটনা সকালে পাড়া প্রতিবেশি জানতে পেরে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়াতে শুরু করে। এদিকে করোনা আতঙ্কে কাঁপছে গোটা পূর্ব মেদিনীপুর। কাঁথির কাছেই এগরা আর হলদিয়া মিলিয়ে ১৩জন আক্রান্ত সারা জেলায় । প্রতিবেশীরা তাই দাবি করে অবিলম্বে সরাতে হবে জামাইকে । ঘটনার খবর পেয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তা গন হাজির হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও গ্রামবাসিদের একটাই দাবি, তাদের গ্রাম থেকে চলে যেতে হবে আপাতত ১৪ দিন।
এরপরই পর আধিকারিকেরা দিল্লি থেকে আসা পারভীন তিওয়ারি কে সরিয়ে নিয়ে যায় স্থানীয় নয়াপুট সাইক্লোন সেন্টারে। এখানে রাজ্য সরকার নির্দেশিত কোয়ারেন্টাইন সেন্টার রয়েছে । তাই এখানে রাখার চেষ্টা করে ব্লক প্রশাসনিক কর্মীরা।

কিন্তু বিপদ সেখানেও । দিল্লিতে এসেছে এই ঘটনা জানা জানি হতেই কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের সামনে বিক্ষোভ দেখায় সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা। বারবার এলাকার বাসিন্দাদের বোঝানোর চেষ্টা করে স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা। কিন্তু বহিরা গত যুবককে এলাকার কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখতে রাজি হয়নি স্থানীয় লোকজন। পরে বাধ্য হয়ে সন্ধ্যে নাগাদ তাকে কয়েক কিলো মিটার দুরে সাবাজপুটে স্থানীয় একটি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখার ব্যবস্থা করেন ব্লক প্রশাসনিক কর্মীরা। স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দা বিকাশ গিরি বলেন, এই এলাকায় অনেকেই ভিন্ রাজ্য থেকে এসেছে।

কিন্তু তাদের এখন পর্যন্ত কোরোনার কোন উপসর্গ দেখা যায়নি, তা সত্যেও ছেলে গুলো স্থানীয় একটি কোয়ারেন্টিনে আছে। সেও ১৪ দিন বাইরে থেকে এখানে শ্বশুর বাড়িতে এলে আমাদের কোন আপত্তি নেই, সেতো এলাকায় জামাই। কাঁথি এক নম্বর ব্লকের বিডিও লিপন তালুকদার বলেন, ঘটনাটি ঘটে ছিল ঠিক। কিন্তু প্রশাসনের লোকেরা গিয়ে প্রশাসনের নির্দেশ মত সঠিক ভাবে সঠিক জায়গায় রাখা হয়েছে। বাবাকে কাছে পেয়েও না পাওয়ার যন্ত্রনায় কেঁদে আকুল মেয়ে। এখন ১৪দিনের অপেক্ষা !

RELATED ARTICLES

Most Popular