পলাশ খাঁ, শালবনী :– প্রাচীর একটা আছে বটে এবং তা যথেষ্ট উঁচুই কিন্তু সেটা কেবলই বিদ্যালয়ের কাঠামো রক্ষার তাগিদ। আদতে বিদ্যালয়টি পৌঁছে গেছে নিজের এলাকার প্রান্তিক অঞ্চলে। গৃহস্থের বাড়ির উঠোনে, জঙ্গলের খেলার মাঠে কিংবা সমাজ সেবার দুয়ারে পৌঁছে যাওয়া সেই বিদ্যালয়ের নাম মৌপাল দেশ প্রাণ বিদ্যাপীঠ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রাক স্বাধীনতা কালে মৌপাল গ্রামে এসেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা সাবেক মেদিনীপুরের কৃতি সন্তান বীরেন্দ্র নাথ শাসমল। তাঁরই মন্ত্রে দেশ গড়ার আদর্শ নিয়ে ঘন জঙ্গলাবৃত এই মৌপাল গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা উদ্যোগ নেন একটি বিদ্যালয় গড়ার। সেই বিদ্যালয় উৎসর্গ করা হয় দেশপ্রান বীরেন্দ্র নাথ শাসমলের নামেই, ৬৭ বছর আগে।
এলাকার বিদ্যোৎসাহী যুগল কিশোর সামই এর রায়তি জমিতে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষক প্রয়াত বনোয়ারী লায় রায় মহাশয়ের চেষ্টায় বিদ্যালয়ের পথ চলা শুরু হয়। নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সেই বিদ্যালয় এখন মহীরুহে পরিনত হয়েছে।
২রা জানুয়ারী, শনিবার সেই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন হল করোনা কালীন অনাড়ম্বর পরিবেশে। স্বামী বিবেকানন্দ সভাগৃহে মহতী এই অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন শালবনী ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক সঞ্জয় মালাকার৷ এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এলাকার ভূমিপুত্র সুরকার ও গীতিকার ডঃ প্রলয় বিশ্বাস, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ডঃ প্রসুন কুমার পড়িয়া সহ বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
করোনার কারনে দীর্ঘ প্রায় আট নয় মাস ধরে বিদ্যালয়ের পঠন পাঠন বন্ধ৷ কিন্তু থেমে থাকেনি বিদ্যালয়ের কাজ৷ করোনা অতিমাতির মাঝেও বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে করোনা সচেতনতার বার্তা, লকডাউনে অসহায় মানুষের মুখে খাবার তুলে দেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা। পরে ধীরে ধীরে দেশে আনলক চালু করা হলেও বন্ধ রয়েছে বিদ্যালয়। কিন্তু আবেগ মথিত বিদ্যালয়ের জন্মদিন তো আর থেমে থাকবে না৷ সেই কারনে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অনুপস্থিতিতেই এই দিনটি পালিত হলো৷
অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের ইতিহাসকে ফিরে দেখার পাশাপাশি এলাকার ১২ জন স্বাস্থ্যকর্মী কোভিড যোদ্ধাকে সম্মান জানানো হয়। প্রকাশিত হয় বিদ্যালয়ের নিজস্ব থিমসঙের । এই থিমসঙ টি রচনা ও সুর করেন গীতিকার ও শিক্ষক ডঃ প্রলয় বিশ্বাস। তবে এদিনের অনুষ্ঠানে কোন শিক্ষার্থী উপস্থিত না থাকায় অনুষ্ঠানের মাধুর্য কিছুটা হলেও কমে। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের ভার্চুয়াল অংশগ্রহণ অনুষ্টান টি কে অন্যমাত্রায় নিয়ে যায়৷
প্রধান শিক্ষক প্রসূনকুমার পড়িয়া বলেন, “করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ছাত্র ছাত্রীদের ডাকা হয়নি ঠিকই কিন্তু তাদের গান ও কবিতার ভিডিও পরিবেশিত হয় এবং এলাকার কোভিড যোদ্ধা স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মান জানানো হয় । এবারের বৈশিষ্ট্য ছিল বিদ্যালয়ের একটি নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক সঙ্গীত প্রকাশ। এই সঙ্গীতটির নির্মাণ করেছেন শিক্ষক ডঃ প্রলয় বিশ্বাস। যা এলাকার মানুষের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে ।”