নিজস্ব সংবাদদাতা: অসময়ে বাড়ি ফেরার ছিলনা এঁদের কিন্তু ফিরতে হচ্ছিল করোনার কারনেই। কলকাতায় লক ডাউন, বন্ধ হোটেল, রেস্তোরাঁ, মন্দির। তাই কাজ বন্ধ এঁদের। হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নেন বাড়ি ফেরার কিন্তু ফেরা হলনা চারজনের। সোমবার বেলা ১০টা নাগাদ ৬০ নম্বর রানীগঞ্জ-বালেশ্বর জাতীয় সড়কে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রান হারিয়েছেন ৪জন ওড়িশাবাসী। গুরুতর আহত গাড়ির চালক সহ আরও ৫জন। এঁদের প্রত্যেকেরই অবস্থা কম বেশি আশংকাজনক বলে জানা গেছে। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারার আশংকা করা হচ্ছে।
জানা পুলিশ সুত্রে জানা গেছে ঘটনাটি ঘটেছে দাঁতন থানার নেকুড়শেনীর কাছে সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ। একটি জাইলো গাড়ি ভাড়া করে আটজন ওড়িশাবাসী খুব ভোর বেলায় কলকাতা থেকে নিজেদের বাড়ির দিকে রওনা দেন। খড়গপুর পেরিয়ে ৫০ কিলোমিটার দক্ষিনে দাঁতন ঢোকার মুখেই রাস্তার ওপর হঠাৎই একটি গরু উঠে আসে জাতীয় সড়কের ওপর। পরিস্থিতি সামাল দিতে গাড়িটির গতি কমিয়ে দেয় চালক আর তখনই জাইলো গাড়িটির ঠিক পেছনে থাকা একটি পন্যবাহী লরি সজোরে ধাক্কা মারে। খড়্গপুরের দিক থেকে উড়িষ্যাগামী একটি একটি প্রাইভেটকারকে হঠাৎই পেছন থেকে ধাক্কা মারে একটি পণ্যবাহী লরি।
ঘটনার অভিঘাতে ভয়ংকর ঝাঁকুনি দিয়ে জাইলো গাড়িটি ছিটকে পড়ে কয়েক পাক খেয়ে রাস্তার ধারে উল্টে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সংঘর্ষ এতটাই জোরালো হয়েছিল যে, গাড়িটি পাক খাওয়ার সময় একাধিক যাত্রীকে গাড়ি থেকে ছিটকে পড়তে দেখা গিয়েছে। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, ”ঠিক যেন সিনেমায়র মত! ফিল্মি কায়দায় গাড়িটি শুন্যে উড়ে গিয়ে কয়েক পাক খেল আর সঙ্গে গাড়ির জানালা দিয়ে ছিটকে পড়ল দু’জন!”
বিকট আওয়াজ ঘটনাটি দেখতে পেয়েই ছুটে আসেন স্থানীয়রা। ও দেখেন তারা। চলে আসে জাতীয় সড়কে টহলরত পুলিশ ভ্যানও। শুরু হয় উদ্ধারের কাজ। যানজট তৈরি হয় বেলদা-দাঁতনের মধ্যবর্তী জাতীয় সড়কের অংশে। ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি ব্রেকডাউন কার এসে গাড়ি টিকে সরিয়ে নিয়ে যায়। আহতদের উদ্ধার করে দাঁতন ও বেলদা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় প্রথমে। পরে অবস্থা সংকট জনক হওয়ায় কয়েকজনকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। চারটি মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে গেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে বালেশ্বর ও জলেশ্বরের এই মৃত ও আহতরা কলকাতার মন্দির ও সংলগ্ন এলাকায় পুজো আচ্চা ও রান্নার কাজ করতেন। মহানগরে লক ডাউন ঘোষনা হওয়ার পর সমস্ত কাজ কর্ম বন্ধ । ফলে খাদ্য সংকটের আশংকায় বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। সেই মত একটি জাইলো গাড়ি ভাড়া করে কাকভোরেই কলকাতা ছাড়েন। চালক সহ মোট ৯জন ছিলেন। এঁরা ওড়িশার জলেশ্বর ও বালেশ্বরের বাসিন্দা। দুর্ঘটনায় আহত চারজন হলেন সুরেন্দ্র মিশ্র,রমাকান্ত দাস, অমর কুমার দাস ও মদন মোহন মিশ্র। চালক ও মৃত চারজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।