নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনা জয় করে বাড়ি ফিরলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রথম কোভিড-১৯ আক্রান্ত যুবক। রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ দাসপুর থানার নিজামপুরের পুলিশি ঘেরাটোপ পেরিয়ে কলকাতার বেলেঘাটা আই.ডি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ৩০বছরের যুবক মুম্বাইয়ের স্বর্ন কারিগর গনেশ জানাকে তাঁর বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে গেল। বাড়িতে ঢোকার আগে গনেশ জানালেন, ”করোনা নিয়ে আতঙ্কের কোনও কারন নেই, করোনা জয় করা যায়। আমি যেমন সুস্থ হয়েছি ঠিক তেমনই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবেন আমার বাবা এবং আমার স্ত্রী। আমি এখন তাঁদের অপেক্ষায় আছি।”
গনেশ জানার বাড়ি ফেরার পরই আনন্দের উচ্ছাস বয়ে গেছে নিজামপুর পশ্চিম পাড়ায়। দুর্বাচটি নদীর পাড়ের ১২০টি পরিবারও যেন আতঙ্ক থেকে মুক্তি পেয়েছে আজ। গনেশের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়েই গোটা পশ্চিম পাড়া সিল করে দিয়েছিল পুলিশ। নদীর ওপর চারটি বাঁশের সেতু বিছিন্ন করে দিয়ে বসানো হয়েছিল চারটি পুলিশ চৌকি। ৭২জন পুলিশ কর্মীর রাতদিন প্রহরায় প্রায় ৫০০গ্রামবাসী গৃহবন্দী হয়েই ছিলেন। কারও বাইরে যাওয়ার বা বাইরে থেকে কারও ঢোকার উপায় ছিলনা। সেই আগল উঠিয়ে প্রথম গ্রামে ঢুকলেন গনেশ জানা, যাঁর জন্য আগল পড়েছিল গ্রামে। স্বস্তির নিঃশ্বাস তাই গ্রামবাসীদের মনেও। বহুদিন পরে আজ শান্তির ঘুম ঘুমোবেন তাঁরা। তাঁদের মনেও আজ প্রত্যয়, করোনা মানেই মৃত্যু নয়।
গনেশের পরেই একে একে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে তাঁর বাবা ও স্ত্রীর। বর্তমানে তাঁরাও বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালেই ভর্তি। পরিবারের আর সবারই নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছিল। গনেশ জানিয়েছেন, ”হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স আর স্বাস্থ্যকর্মীরা চিকিৎসার পাশাপাশি নিরন্তর মনোবল জুগিয়ে গেছেন। ভাল সহযোগিতা করেছেন পুলিশ কর্মীরা তাই বলছি আমার বাবা এবং স্ত্রীও ভাল হয়ে ফিরবেন। আমি সবাইকে বলব, করোনা নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। করোনাকে জয় করা যায়।”
উল্লেখ্য গত ২৩শে মার্চ মুম্বাই থেকে বাড়ি ফেরার পর অসুস্থ বোধ করায় ২৮শে মার্চ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের আইশোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হন গনেশ। ২৯তারিখ রাতে কোভিড -১৯ পজিটিভ আসার পরই ৩০শে মার্চ বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে।
গনেশের সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরাকে অত্যন্ত খুশির খবর জানিয়ে জেলার মূখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশ চন্দ্র বেরা জানিয়েছেন, ” খুবই আনন্দের খবর। গনেশ জানার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরাটা মানু্ষের কাছে আশা আর নির্ভয়ের বার্তা। বার্তা করোনাকে জয় করার। আগামী ১৪দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ওঁকে।” অবশ্য শুধুই দাসপুর নয়, স্বস্তির নিঃশ্বাস সারা পশ্চিম মেদিনীপুরেই কারন জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী গনেশ ও তাঁর পরিবারের তিনজনই জেলার প্রথম ও একমাত্র করোনা আক্রান্ত পরিবার।