নিজস্ব সংবাদদাতা: এমনিতেই দাঁতন খুবই ঐতিহাসিক দিক থেকে খুবই সমৃদ্ধশালী জায়গা। মোগলমারিতে অবস্থিত প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার সহ নানা স্থাপত্য ভাস্কর্য এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে এমনকি এখনও মিলে থাকে। কিন্তু সেই দাঁতনেই যে রাজ্যের সিপিএম সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের ল্যাম্পপোষ্টের সন্ধান মিলবে কে জানত? যাঁদের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে তাঁদের মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য বলা যে, ২০১১সালে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার গঠনের কিছুদিন পর সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছিলেন, তৃনমূল কংগ্রেসে একটাই পোষ্ট বাকি সব ল্যাম্প পোষ্ট। বিরোধী নেতার এই বক্তব্যকে গুরুত্ব দেয়নি শাসক দল। কিন্তু ২৭ তারিখ পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের জনসভায় এসে মমতা ব্যানার্জীর মন্ত্রীসভার প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী স্বীকার করে নিলেন যে, তিনি ওই মন্ত্রী সভায় ল্যাম্পপোষ্ট ছিলেন।
রবিবার প্রাক্তন পরিবেশ ও সেচ মন্ত্রী এবং একদা পরিবহনমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী মন্ত্রীসভার সমালোচনা করতে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম বদলে দিয়ে নিজেদের বলে চালানো হচ্ছে। দেখে আমার লজ্জা লাগত কিন্তু আমার কিছু করার ছিলনা। ওই সরকরাটা দেড় জনের সরকার। আমি ল্যাম্পপোষ্ট হয়ে ছিলাম। ওখানে একজনেরই পোষ্ট, বাকি সব ল্যাম্পপোষ্ট! তখন বলিনি কারন তখন বললে তাড়ানো যেত, এখন তাড়ানো যাবেনা তাই বলছি। ওখানে একজনেরই পদ, বাকিরা ল্যাম্পপোষ্ট। ‘ ঠিক একই কথাই আট বছর আগে এই কথাটাই বলেছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র।
মজার কথা কয়েকদিন আগেও সিপিএম বিরোধিতা দিয়েই যাঁর দিন শুরু হত বলে সংবাদমাধ্যম জানত সেই শুভেন্দু অধিকারী স্বীকার করে নিয়েছেন যে, সিপিএমের আমলে প্রতি বছরে ১২ হাজার, ১৪হাজার, ১৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হত এসএসসির মাধ্যমে। সিপিএমের সমর্থকরা শুনলে খুশি হবেন যে, তাঁদের ভাষাতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমি নীতি আর শিল্পনীতির সমালোচনা করে শুভেন্দু বলেছেন, “আপনি (মমতা) যে জমি নীতি করে রেখেছেন তাতে এরাজ্যে কোনও দিন শিল্প হবেনা।’ আগেরদিনই কলকাতার হেস্ট্রিংসে বিজেপির দপ্তরের সামনে তৃনমূলের গন্ডগোলের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে শুভেন্দু বলেন, ‘সিপিএমের অনেক সমালোচনা আমরা করেছি কিন্তু সিপিএম কখনই বিরোধীদের পার্টি অফিসে হামলা চালায়নি।’
কয়েকদিন আগেই শুভেন্দুর মুখে বামফ্রন্ট সরকারের দুই মন্ত্রীরও গুনগান করতে শোনা গেছিল কাঁথির সভায়। তৃনমূল সরকার কাঁথির জন্য কিছুই করেনি দাবি করে সেদিন শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ” কাঁথির জন্য কী করেছে তৃনমূল সরকার। কাঁথির সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডের জন্য টাকা দিয়েছিলেন মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী, জমি দিয়েছিলেন মন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী আর বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ করেছিলেন শিশির অধিকারী।”
সব শুনে পশ্চিম মেদিনীপুরের এক সিপিএম নেতার বক্তব্য, ‘এ আর নতুন কী? এত বয়সে এসে মুকুল রায় অনুধাবন করছেন যে, সিঙ্গুর থেকে টাটাদের তাড়ানো সবচেয়ে বড় ভুল ছিল! খোদ মমতা এখন সিঙ্গুরে নাকি শিল্প করবেন শুনছি। সেই তুলনায় শুভেন্দুর বয়স অনেকটাই কম। এই কম বয়সে উনি যে ল্যাম্পপোষ্ট ছিলেন বুঝতে পেরেছেন সেটাই অনেক। সূর্যদার আরও অনেক উক্তি উনি ধিরে ধিরে উপলব্ধি করতে পারবেন। অবশ্য উনি একা কেন অনেকেই বুঝবেন কিন্তু ততদিনে বাংলার যা সর্বনাশ হওয়ার হয়েই গেছে।”