নিজস্ব সংবাদদাতা: কোনও বাড়িতে বয়স্ক মানুষের ওষুধের প্রয়োজন? এমন কোনও পরিবার আছে যাঁরা লকআউটের শিকার হয়ে বাড়িতে বসে রয়েছেন, খাবার জুটছেনা ? বাড়ির প্রসূতির কোনও অসুবিধায় পড়েছেন ? বাড়ির চারপাশে কারা জটলা করছে? দোকানদার কোনও জিনিস নেই বলছে কিংবা চড়া দাম হাঁকছে? মুশকিল আসান পশ্চিম মেদিনীপুরের হেল্পলাইন ৮০০১০০৭৮৬৮। করোনা ভাইরাস সংক্রমনের আশঙ্কায় গোটা দেশজুড়ে ২১ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করে দিয়েছে কেন্দ্র সরকার। ছাড় আছে খাদ্যদ্রব্য, সবজী, দুধ, ওষুধ থেকে ব্যাঙ্ক, এটিএমের মতো মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও পরিষেবার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যায় যাতে মানুষকে অসুবিধায় না পড়তে হয় তাই ওই হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে পুলিশ।
বুধবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার দিনেশ কুমার জানিয়েছেন, ‘পুলিশ সুপার আরও বলেছেন, আতঙ্কের কিছু নেই। পুলিশ সর্বদা সাহায্যের জন্য প্রস্তুত আছে। করোনাকে কেন্দ্র করে কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে। তার নম্বর ৮০০১০০৭৮৬৮। ওই নম্বরে বয়ষ্ক পুরুষ মহিলা ফোন করলে ওষুধের মতো প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে পুলিশ। এমনকি বাড়ীতে গর্ভবতী মহিলা থাকলেও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবে পুলিশকর্মীরা।”
অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সমূহ যেমন সবজী বাজার, ভুষিমাল দোকান, ওষুধ দোকান, এটিএমের সামনে ভিড়ের কারনে যাতে কাছাকাছি এসে করোনা জনিত সংক্রমনের সমস্যা না হয় তাই দোকানগুলির সামনে নির্দিষ্ট দূরত্বে দাগ কেটে দিল পুলিশ। সারা জেলাজুড়েই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার জানিয়েছেন, মানুষের ভিড় নিয়ন্ত্রন করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। লকডাউন ভেঙে রাস্তায় বেরিয়ে বাহাদুরি দেখানোর জেরে গতকাল ছয়জনকে আটক করা হয়েছিল। যদিও তাদের পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কেবলমাত্র জরুরী প্রয়োজনে কেউ বাড়ির বাইরে বেরোলে রেহাই পাবেন। কিন্তু কেউ স্রেফ অ্যাডভেঞ্চারের জন্য রাস্তায় বের হলে পুলিশি জেরার মুখে পড়বেন।
লকডাউনের পরও রাস্তায় রাস্তায় মানুষের ভিড় ফাঁকা করতে পুলিশকে বিভিন্ন জায়গায় লাঠিচার্জও করতে হয়। তাসত্বেও কিছু মানুষ মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর লকডাউনের নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে বেরিয়ে পড়ছেন। লকডাউনকে তোয়াক্কা না করেই তারা হাজির হয়েছেন বাজারে ও দোকানে। প্রায় প্রত্যেকের মধ্যেই ছিল মালপত্র মজুত করার হিড়িক। সবজী ও মাছবাজারে অনেকে নিজেদের মধ্যে নির্দিষ্ট এক মিটারের দূরত্বও বজায় রাখছেন না। তাই এদিন সকাল থেকেই জেলার প্রতিটি থানার পুলিশ নিজ নিজ এলাকায় চুন দিয়ে দোকান ও বাজারে নির্দিষ্ট দূরত্বে দাগ কেটে দিয়েছেন। হুঁশিয়ারী দিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয় প্রতিটি দোকানদারকেই। যাতে গণ্ডির নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলেন সকলে।
শহরের সবজি বাজার গেটবাজারেও ছিল এদিন থিকথিকে ভিড়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাজার খোলা থাকে। সেখানে এদিন পুলিশের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় বেলা এগারোটার পর বাজার পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হবে। পুলিশ সুপারও এদিন এক সাংবাদিক সম্মেলনে অনুরোধ করেছেন যে অনেক সময়ই দেখা যাচ্ছে যে একই ব্যক্তি একাধিকবার বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন। কখনও দুধ আনতে বের হচ্ছেন তো কখনও বাজার তো কখনও ওষুধ। তিনি সকলকে অনুরোধ করেছেন যে যদি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষ সংগ্রহের একান্তই প্রয়োজন হয় তখন তিনি যেন একবার বাড়ির বাইরে বেরিয়েই সব কাজ সেরে নেন।