নিজস্ব সংবাদদাতা: নিজে কাজ বাজ খুব একটা কিছু করেননা। প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন সুন্দরী নার্সিংয়ে কর্মরত যুবতিকে। কিন্তু যুবতীর সেই প্রেমের মর্যাদা দিতে পারেননি যুবক। স্ত্রী হাসপাতালে কাজে চলে গেলেই এক কিশোরী পরিচারিকাকে চলত দিনের পর দিন ধর্ষন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কোয়ার্টারের প্রাচীর টপকে কোনও মতে পালায় ওই পরিচারিকাকে। স্থানীয় এক ব্যক্তিকে লাগাতার নির্যাতনে কথা খুলে বলে মেয়েটি। ঘটনার কথা জানতে পেরে জনরোষ আছড়ে পড়ে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িকে
ঘিরে। ছুটে আসেন পদস্থ আধিকারিকরা। পুলিশ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে গ্রেপ্তার করে ওই যুবককে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহকুমার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে অভিযুক্ত ওই যুবকের নাম হারুন রশিদ। তার স্ত্রী নন্দিনী চক্রবর্ত্তী স্থানীয় ক্ষীরপাই গ্রামীন হাসপাতালের জিএমএন নার্সের পদে কর্মরতা। এঁদের সন্তানও রয়েছে। নন্দিনী ও তার পরিবার ক্ষীরপাই হাসপাতালের আবাসনেই থাকেন। মাস তিনেক আগে এই পরিবারের কাজের জন্য দাসপুর থানার বাসুদেবপুর থেকে এক ১২ বছরের আদিবাসী কিশোরী নিযুক্ত হয়। কিশোরী অত্যন্ত গরীব পরিবারের। মামার বাড়িতেই মানুষ হচ্ছিল। মামার পরিবারও গরীব। তাই মামা তার এক বন্ধু মারফৎ ওই নার্সের পরিবারে গৃহকর্মের জন্য রেখে যায়। এভাবেই চলছিল। প্রাচীর ঘেরা আবাসনের ভেতরে আদতে কী হচ্ছিল কেউ জানতে পারেনি প্রথমে। জানা গেল মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, যখন ওই কিশোরী প্রাচীর টপকে বাইরে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ে এক ব্যক্তির কাছে।
জানা গেছে ওই ব্যক্তির কাছে কাঁদতে কাঁদতে কিশোরী জানায়, তিন মাস আগে কাজে যোগ দেওয়ার পর থেকেই ওই যুবকের কু নজরে পড়ে যায় সে। কিশোরী জানায়, ” প্রথমে লোভ ও তাতেও কাজ না হওয়ায় জোর করেই শুরু হয় যৌন নির্যাতন। ঘটনার কথা কাউকে বললে মেরে ফেলার হুমকি দিত ওই ব্যক্তি। ম্যাডামকে বললে ম্যাডাম বিশ্বাস না করে হয়ত আমাকেই দোষ দিত এমনই পাগলের মত ম্যাডাম ভালবাসত তার স্বামীকে। আমাকে নজরে নজরে রাখত লোকটা, কারও সঙ্গে কথা বলতেই দিতনা , মিশতে দিতনা। এমনকি ম্যাডামের সঙ্গে কথা বললেও কী বলছি তা খেয়াল করত।”
কিশোরী আরও জানায়, ” আমি এই এলাকার কাউকে চিনিনা। কী করে আমার বাড়ি পালাব তাও জানিনা। আর এই সুযোগ নিয়েই দিনের পর দিন নোংরামি করেছে লোকটা। মঙ্গলবার বাধ্য হয়েই প্রাচীর টপকে বাইরে বের হই। কিন্তু বাইরে বেরিয়ে হকচকিয়ে যাই। আমি যে কিছুই জানিনা এই এলাকার। সৌভাগ্য ক্রমে একজনকে পেয়ে যাই যে আমাদের আদিবাসী ভাষায় কথা বলছিল। তার কাছে গিয়েই আমি কান্নায় ভেঙে পড়ি। তিনিই আমাকে অভয় দেন।”
ওই ব্যক্তির মারফৎ গোটা ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে তাঁদের জনজাতি সংগঠনের নেতৃত্বর কাছে। সন্ধ্যাবেলার পর দলে দলে মানুষ জমা হয় ক্ষীরপাই ফাঁড়িতে। শুরু হয় প্রবল বিক্ষোভ। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘাটাল থেকে ছুটে আসেন ঘাটাল পুলিশের এসডিপিও অগ্নিশ্বর চৌধুরী, সার্কেল ইনসপেক্টর সুপ্রিয় বসু, চন্দ্রকোনা থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক প্রশান্ত পাঠক ছুটে আসেন বিশাল বাহিনী নিয়ে। গ্রেপ্তার করা হয় রশিদকে।
বুধবার পসকো আইনে রশিদকে আদালতে তুলবে পুলিশ। নাবালকের যৌন হেনস্থা বিরোধী এই আইনের কঠোর ধারায় রশিদ যাতে কোনও ভাবেই জামিন না পায় তাতে পুলিশ সচেষ্ট হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ আধিকারিকরা। পুলিশ চাইছে হারুন রশিদ বিচারবিভাগীয় হেফাজতে থাকা অবস্থাতেই মামলার নিষ্পত্তি হোক। যাতে বাইরে থেকে মামলাকে প্রভাবিত করতে না পারে। অন্যদিকে ওই কিশোরীরও শারীরিক পরীক্ষা করা হবে বুধবারই।