ভীষ্মদেব দাশ, পূর্ব মেদিনীপুর : পৃথিবীর আলো দেখলেও মায়ের মুখ দেখা হলনা সন্তানের। প্রসবের পরই মৃত্যু হল মায়ের। আর এই ঘটনার জন্য দায়ী নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষ অভিযোগ এমনই। সদ্য প্রসূতি তরুনী গৃহবধূর মৃত্যুতে তুলকালাম কান্ড ঘটে গেল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভূপতিনগরে। সিজার করে পুত্রসন্তানের জন্ম দেওয়ার পর গৃহবধূর রক্তক্ষরন বন্ধ করতে চিকিৎসক ব্যর্থ হওয়ায় মৃত্যু হয়েছে তরুনীর এবং এরজন্য দায়ী কর্তৃপক্ষর গাফিলতি এই অভিযোগ তুলে নার্সিংহোমে তান্ডব চালায় মৃতার আত্মীয়পরিজন এবং স্থানীয় লোকজন। নার্সিংহোমে ভাঙচুর চালানোর পাশাপাশি জুখিয়া বাজারে স্থানীয় হেঁড়িয়া-ইটাবেড়িয়া রাজ্য সড়ক অবরোধও করা হয়। ঘন্টাখানেক অবরোধ-বিক্ষোভ চলার পর পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শিপ্রারানী দাস নামের গৃহবধূর প্রসব যন্ত্রণা শুরু হওয়ায় তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল ভূপতিনগরের নার্সিংহোমে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নার্সিংহোমের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ এক চিকিৎসক শিপ্রার সিজার করেন। শিপ্রার পুত্রসন্তান হয়। পরিবারসূত্রে জানাগিয়েছে নবজাতক পুত্রসন্তান ভালো আছে।
সিজারের পর থেকেই শরীরে রক্তক্ষরণ শুরু হয় শিপ্রার। রোগীর সঙ্কটজনক অবস্থা দেখে দ্রুত চিকিৎসার দাবি জানান পরিবারের লোকেরা। পরিবারের অভিযোগ, তাঁদের কথা কানেই তোলেনি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। বন্ধ হয়নি রক্তক্ষরণ।
এরপর রাত দুটো নাগাদ নার্সিংহোমেই মারা যান শিপ্রা। রাতেই পরিবারের লোকেদের মৃত্যুর খবর জানায় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। সকালে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে প্রসূতির মৃত্যুর খবরে নার্সিংহোম চত্বরে জড়ো হয়ে যান রোগীর আত্মীয়স্বজন এবং স্থানীয় লোকজন। শুরু হয় বিক্ষোভ, তান্ডব এবং ভাঙচুর। খবর পেয়ে পুলিশ এসেও পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়।
জানা গিয়েছে শিপ্রারানী দাস(২৬) নামে মৃতা গৃহবধূর বাড়ি স্থানীয় ভূপতিনগরের বামুনিয়াতে। তাঁর স্বামী অভিক দাস অভিযোগ করে বলেন , ‘চিকিৎসায় গাফিলতির জন্যই এই স্বল্প বয়সেই আমার স্ত্রীর মৃত্যু হল। আমার পুত্র জন্ম লগ্নেই মাতৃহারা হল। সিজার করে পুত্রসন্তানের জন্ম দেওয়ার পর শিপ্রার শরীরে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। সে সময় বারবার বলা সত্বেও দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। অভিক বাবু ঘটনার তদন্ত চেয়ে ভূপতিনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এরপরই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভকারী আত্মীয়স্বজন এবং লোকজন জুখিয়া বাজারের কাছে অবরোধে সামিল হন। পুলিশ ঘটনার তদন্ত হবে আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এবিষয়ে কোনও মন্তব্যও করেননি কর্তৃপক্ষ।