Homeএখন খবরআরাবুল থেকে সোনালী, মইনুদ্দিন থেকে মাষ্টারমশাই টিকিট না পেয়ে কোথাও কান্না, কোথাও...

আরাবুল থেকে সোনালী, মইনুদ্দিন থেকে মাষ্টারমশাই টিকিট না পেয়ে কোথাও কান্না, কোথাও আগুন

অশ্লেষা চৌধুরী: কয়েকদিন ধরে টানটান উত্তেজনা বজায় রাখার পর শুক্রবার দুপুরে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কিন্তু প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরেই কয়েকজন নেতানেত্রীর মুখ ভার। শুধু কী তাই! একেবারে কেঁদে ভাসালেন তৃণমূলের কয়েকজন নেতা-নেত্রী। সকলের গলাতেই নেত্রীকে উদ্দেশ্য করে অভিমানী সুর। আবার কেউ কেউ তো রাগ সামলাতে না পেরে হুঁশিয়ারিও দিয়ে বসলেন।

জানা যায়, এদিন প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর তাতে নাম নেই আরাবুল ইসলামের। আর ভাঙরে নির্বাচনে লড়াইয়ের টিকিট না পেয়ে একেবারে ভেঙে পড়েন তিনি। এক রাশ অভিমান ও ক্ষোভ নিয়ে ছুটে যান সোশ্যাল মিডিয়ায়, সেখানে তিনি লেখেন, ‘দলে আজকে আমার প্রয়োজন ফুরলো।’ শুধু তাই নয়, টিকিট না পাওয়ার দুঃখ ব্যক্ত করতে গিয়ে কেঁদেই ফেলেন আরাবুল। বলেন, ‘এই দলটাকে বুকে আঁকড়ে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে রাজনীতি করেছি। ভাঙড়ের মানুষের পাশে থেকেছি। এখন ভাঙড়ের মানুষ যা বলবেন, আমি তাই করব।‘

২০০৬ সালে যখন রাজ্যজুড়ে বামেদের আধিপত্য চরমে, তখন ভাঙড়ে তৃণমূলের পতাকা উড়িয়েছিলেন আরাবুল। তারপরে অবশ্য একাধিক বিতর্কে জড়িয়ে বারবার সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছেন তিনি। আর তিনিই কি না এবার টিকিট পেলেন না! আর এতেই ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠলেন আরাবুল অনুগামীরা। ক্ষোভে ফেটে পড়ে বিক্ষোভ শুরু করে দেন আরাবুল অনুগামীরা। এমনকি ভাঙড়ের ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেও বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন তারা। ভেঙে দেওয়া হয় তৃণমূলের কার্যালয়। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় কেন্দ্রীয় বাহিনী।

অপরদিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাতগাছিয়া থেকে চারবারের জয়ী সোনালী গুহও টিকিট না পেয়ে কেঁদে ভাসালেন। দলনেত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভও উগরে দিলেন নেত্রী। আক্ষেপ ও অভিমানী সুরে বললেন, দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকার একটা দাম দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেস। ভালোই সম্মান পেলাম। আক্ষেপ করে এও বলেন, আমি মমতা দির বাড়ীর লোক ছিলাম। মমতাদি এটা করতে পারেন, বিশ্বাস করতে পারছি না। বহু লড়াই-আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থেকেছি। এবার আর আমায় টিকিট দিল না। নারী দিবসের আগে আমায় দল যোগ্য সম্মান দিল।’ এরপরেই কান্নায় ভেজা গলায় ‘দিদি যেন এবারও মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন‘ বলেও শুভকামনা জানান তিনি।

এদিকে নলহাদিটির বিদায়ী বিধায়ক মইনুদ্দিন শামসের পরিবর্তে টিকিট পেয়েছেন রাজেন্দ্র; আর এতেই চটেছেন তিনি। কেঁদে-কেটে দল ছাড়ার পাশাপাশি পাথরচাপুরি উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে তিনি ইস্তফা দিতে চলেছেন তিনি। এমনকি টিকিট না পেয়ে অন্য দলের হয়ে লড়াইয়ের ময়দানে থাকবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

ওদিকে টিকিট পাননি সিঙ্গুরের বিদায়ী বিধায়ক বর্যীয়ান মাস্টারমশাইও, তাঁর পরিবর্তে বেচারাম মান্নাকে প্রার্থী করা হয়েছে, আর এতে মাস্টারমশাই চটে গিয়ে নেত্রী বললেও বেচারামের হয় ভোটের প্রচার করবেন না বলেই সাফ জানিয়ে দেন।

আবার বসিরহাট দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক প্রাক্তন ফুটবলার দিপেন্দু বিশ্বাসও অকস্মাৎ বাদ পড়েন প্রার্থী তালিকা থেকে। কারণ বুঝে উঠতে না পেরেই কিছুটা আক্ষেপের সুরে তিনি জানান, ‘আমি হার্ড ওয়ার্ক করেছি। উন্নয়নের প্রচুর কাজ হয়েছে। কিন্তু গোল করেও খেলার সুযোগ পেলাম না। দল কাকে প্রার্থী করবে সেটা নেতৃত্বের বিষয়। কিন্তু, ভাল খেললে তো সুযোগ আসে। আমিও আশা করেছিলাম। কিন্তু হল না। তবে, সিদ্ধান্ত দলের তরফে আগে জানালে ভাল লাগতো।’

এছাড়াও আরও বিভিন্ন জায়গাতে পছন্দের প্রার্থীর দাবী জানিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে দেখা গিয়েছে তৃণমূলের কিছু কর্মী সমর্থকদের। তবে কোথাও আবার খুশির বন্যাও বয়ে গিয়েছে। হোলির আগেই সবুজ আবিরে দোল খেলায় মেতেছেন অনেকে। তবে টিকিট না পেয়ে যেভাবে কেঁদে ভাসাচ্ছেন শাসকশিবিরের নেতা-নেত্রীদের একাংশ, তাতে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল সুপ্রিমোর হয়ে ফিল্ডিং করার লোক কম পড়ে যায় কিনা সেই প্রশ্নই ঘুরছে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মনে।

RELATED ARTICLES

Most Popular