নিজস্ব সংবাদদাতা : স্বামীকে ছেড়ে চলে এসেছিলেন অনেকদিনই, তারপর দিন কয়েক আগে সংসার পেতেছেন অন্য একজনের সঙ্গে। খবর পেয়ে পুরানো স্বামী খোঁজ নিতে এসেছিলেন শ্বশুরবাড়িতে কিন্তু রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হল সেই প্রাক্তনের। শুক্রবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদলের মছলন্দপুরের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।পুলিশ জানিয়েছে, মৃত বছর বত্রিশের বিশ্বজিৎ মাঝির বাড়ি পাশের কালিকাকুণ্ডু গ্রামে। পরিবারের লোকেদের দাবি খুন করা হয়েছে বিশ্বজিৎকে এবং তা করেছে শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই।
জানা গেছে পারিবারিক অশান্তির কারণে বছরখানেক আগে ৫ বছরের শিশুকন্যাকে নিয়ে বাপরেবাড়ি পালিয়ে গিয়েছিল স্ত্রী। একাধিকবার বুঝিয়ে সুঝিয়েও তাদের আর ফিরিয়ে আনতে পারেননি স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এরপর বিশ্বজিৎ খবর পায় ১৫দিন আগে ফের বিয়ে হয়েছে স্ত্রীর। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে শ্বশুরবাড়িতে আসেন বিশ্বজিৎ আর শুক্রবার সকালে শ্বশুরবাড়ির কাছেই রাস্তার ধারে একটি সুপারি গাছে নাইলনের দড়িতে বাঁধা রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয় তাঁর। বিষয়টি নিয়ে অবশ্য এখনো অবধি কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি বলে জানিয়েছেন হলদিয়ার মহকুমা পুলিশ আধিকারিক তন্ময় মুখার্জি। তিনি বলেন, ‘একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাদতন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, ১০বছর আগে ঝর্না দাসের সঙ্গে বিয়ে হয় দিনমজুর বিশ্বজিতের। বিয়ের পর দম্পতির একটি মেয়েও হয়। সেই মেয়ের বয়স এখন ৫ বছর। বিশ্বজিৎ মদ্যপ ছিলেন এবং তা নিয়ে প্রতিনিয়ত অশান্তি লেগে থাকত দুজনের মধ্যে। অশান্তির কারনে ঝর্না বেশ কয়েকবার আত্মহত্যারও চেষ্টা করেন। তারপর হতাশ হয়ে বছরখানেক আগে মেয়েকে নিয়ে চলে আসেন বাপের বাড়ি। এরপর বিশ্বজিৎ বেশ কয়েকবারই স্ত্রী-মেয়েকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন কিন্তু ঝর্না ফেরেননি। মেয়েকে বাপের বাড়িতে রেখে কলকাতায় পরিচারিকার কাজ করতে চলে যান ঝর্না। লকডাউনের মধ্যে ফিরেছিলেন বাপেরবাড়ি। এরমধ্যেই দ্বিতীয়বার সংসার পাতেন ঝর্না।
বিশ্বজিতের মা সুচিত্রার বক্তব্য প্রথমে বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্বশুরবাড়ির গ্রামে যান বিশ্বজিৎ। পরে বাড়ি ফিরে আসে। রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর ফের দ্বিতীয়বার বেরিয়েছিলেন। সুচিত্রা বলেন, “রাতে ছেলেকে কেউ ডেকেছিল। খাওয়ার পর আমাকে বলল, ঝর্নার বাড়ির লোকেরা ডাকছে। আমি একটু ঘুরে আসছি। তারপর ছেলে ফেরেনি। আজ সকালে এই ঘটনা জানতে পারি। আমার মনে হয় শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই ডেকে নিয়ে খুন করেছে ওকে। পুলিশ শাস্তি দিক আমার ছেলের খুনিদের।’
পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “মেয়ের বাবা কৃষ্ণপ্রসাদ দাসকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছি আমরা। এরপর মৃতের পরিবারের অভিযোগ করলে এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্ট মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”